সোমবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৭


প্রথম কিস্তি 



                                                                           //১//
ঘরে ঢুকেই সামনে থাকা সোফা-সেট এর একটায় বসে পরেন সৌগত মল্লিক। কোটের বাম পকেট থেকে রুমাল বার করে কপালের ঘাম মুছে নিয়ে, বার কতক বড় বড় শ্বাস ফেলে ধাতস্ত হন খানিকটা।

"আপনার কি শরীর খারাপ নাকি?" ছাইদানিতে সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ টুকু ফেলে প্রশ্ন করে শচীন।

"আপনিই শচীন সামন্ত?" আরেকবার কপাল আর ঘারের ঘাম মুছে নিয়ে রুমালটা পকেটে রাখেন সৌগত বাবু।

"আজ্ঞে হ্যা! আমি।" এক গ্লাস জল মল্লিক বাবুর দিকে এগিয়ে দিয়ে নিজের জায়গায় গিয়ে বসে শচীন।

"বলুন কি সমস্যা?"

"বাপরে বাপ্! এমন জায়গায় বাড়ি আপনার, খুঁজে পেতেই এক ঘন্টা লেগে গেল। বড় রাস্তার কাছে একটা চেম্বার করলে পারেন তো?" গ্লাসের জল টুকু শেষ করে টেবিলে নামিয়ে রাখেন সৌগত মল্লিক।

"কি-আর করি বলুন। আমার মক্কেলরা বড়লোক হলেও, আমি তো নোই।" নিজের চিরাচরিত তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে সোফায় আরো আরাম করে হেলান দিয়ে বসে শচীন।

"আপনার কাছে একটা সিগারেট হবে? আমার প্যাকেটটা বোধয় গাড়িতে ফেলে এসেছি।"

"নিশ্চই!" Goldflake এর বাক্সটা এগিয়ে দেয় শচীন।

সিগারেট ধরিয়ে পরপর দুটান দিয়ে একরাশ ধোয়া ছেড়ে কথা শুরু করেন আমাদের আজকের মক্কেল সৌগত মল্লিক।


"Calcutta Club এর অনির্বাণ দাসগুপ্ত আপনার নম্বর দিয়েছিলেন আমায়। উনি আপনাকে কিছু বলেছেন?"

"Text করে আপনার পরিচয়, আর আজকে আসার কথা জানিয়েছিলেন। ব্যাস! আর কিছু নয়।"

"ওহ!" আরো বার দুয়েক টান দিয়ে সিগারেটটা ashtray তে ফেলে দেন মল্লিক বাবু।

"অনির্বাণের কাছে আপনার যা বর্ননা শুনেছিলাম, তার সাথে যদিও কোন মিল খুঁজে পাচ্ছি না। আপনিই শচীন সামন্ত তো?"

"বিলেত যাওয়ার কোন ইচ্ছে বা সম্ভাবনা নেই বলে passport করিনি। গণতন্ত্রিক দেশে বাস করি বলে কোনদিন মনে হয়নি বলে, voter card ও করিনি। আর কাজের সূত্রে বাইরে থাকি বেশি বলে AADHAR card ও করানো হয়নি। এ`বার আমাকে বিশ্বাস-অবিশ্বাস, সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছে!"

"আমার পরিস্থিতিতে থাকলে, আপনিও চট করে সবাইকে বিশ্বাস করতে পারতেননা মশাই।"

"গাড়িতে যে কুকুরটিকে রেখে এসেছেন, সে আবার পাড়া মাতিয়ে চিৎকার শুরু করে দেবে না তো?"

"কুকুর?"

"আপনার কোটের আস্তিনে যার লোম এখনো লেগে রয়েছে।"

কোটের আস্তিন পরীক্ষা করে লোম দেখে হেসে ফেলেন সৌগত মল্লিক।

"Lucy আমার দু`বছরের একটা লাব্রাডর। এখন সে-ই আমার সব থেকে বিশ্বস্ত শচীন বাবু।" কোটটা খুলে হাতে নিয়ে বসেন সৌগত বাবু। "আপনি চিন্তা করবেন না। গাড়িতে সে দিব্য আরামেই রয়েছে।"

"আপনার showroom তো বালিগঞ্জে? বাসে করে কোথাও গিয়েছিলেন?"

"আজ্ঞে?" একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন সৌগত বাবু।

"আমার পাড়ায় এসে রতনের দোকানে চা-বিস্কুট খেলেন। আমার নাম বলেও কোন লাভ না হওয়ায়, instruction মত গলির মুখে তিন নম্বর বাড়ি হিসেব করে তারপর এলেন।"


"বাবাঃ! আপনিতো পাকা গোয়েন্দাদের মত কথা বলছেন দেখছি।"

"পেশাটা এক না হলেও, অভ্যেসগুলো তো একরকম রাখতেই হয়, না!" আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে সৌগত বাবুর দিকেও একটা সিগারেট বাড়িয়ে দেয় শচীন।

"ডাক্তার আপনার pressure এর ওষুধ পাল্টেছেন, blood test ও দিয়েছেন, কিন্তু করানো হচ্ছে না!"

"কি করে বলছেন বলুন তো? আমি গোয়েন্দা গল্প পড়েছি অনেক, কিন্তু?"

"অল্প বয়সে বাসে ট্রামে চড়ার অভ্যেস ছিল বোধয়। ticket নিয়ে হাতে ঘড়ির band এর নিচে রাখা দেখে আন্দাজ করলাম বাসে উঠেছিলেন। রতনের দোকানে চা খেয়েছেন বুঝলাম আঙুলে লেগে থাকা মাটির ভাঁড়ের ধুলো দেখে। আর চা বোধয় গরম ছিল, প্রথম চুমুকে ছ্যাকা লাগায় সামান্য চা shirt এ পরে। তার দাগ দেখা যাচ্ছে আপনার জামায়। আর বিস্কুটের কিছু গুঁড়ো এখনো লেগে আছে ঠোঁটের কোনায়। রতনের দোকান বুঝলাম দাগগুলো এখনো বেশ টাটকা রয়েছে দেখে। পুরোনো হলে আঙুলে মাটির ভাঁড়ের ধুলো থাকতো না। আর এই পাড়ায় একমাত্র রতনের দোকানেই ভাঁড় চালু আছে।  Pressure এর ওষুধের বেপারটা আন্দাজ করলাম আপনার গোড়ালির কাছে ফোলা দেখে। ইডিমা হয়ে আছে।"

"না মশাই, ফেলুদা আমিও পড়েছি। তবে application টা এমনভাবে চাক্ষুস করিনি কোনদিন।"

"এবার আপনার সমস্যার কথা শুনি?"


                                                                 //২//
পাঠকদের সুবিধার্তে আলাপ পর্বটা এইবেলা সেরে ফেলি। আমি সুবীর গাঙ্গুলী আর শচীন আমার বাল্যবন্ধু। দুজনেই একসাথে ডাক্তারি পড়েছিলাম, কিন্তু পেশাদারিত্বে অপটু এবং অযোগ্য প্রমাণ হওয়ায়, ডাক্তারি ছেড়ে স্বাধীন ব্যবসা শুরু করেছি। ব্যবসাটা কি, সেটা গল্পের প্রবাহের সাথেই জানতে পারবেন। আমাদের আজকের মক্কেল সৌগত মল্লিক, কলকাতার নামকরা মল্লিক এন্ড সন্স এর মালিক। পৈতৃক ব্যবসায় এসে সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় আজ এই জায়গায় নিয়ে আসতে পেরেছেন।

মল্লিকবাবু phone এ যা বলেছিলেন, তার সারাংশ করলে যা দাঁড়ায়। গত তিন বছর যাবৎ পারিবারিক একটি বিষয়ে উনি বাজে ভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। যার থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই জরুরি, এবং সেটা গোপনীয়তার সাথে হলেই সবচেয়ে ভালো। নিজের যে পরিচয় বাজারে এখন তৈরী হয়েছে, তার ওপর কালিমা মাখলে ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।

আমি আর শচীন এ রকম বিপাকে পরে যাওয়া মানুষদের উদ্ধার করি, বা উদ্ধার হতে সাহায্য করি। একটা সূত্র দিয়ে রাখি, পেশার প্রয়োজনেই আমাদের দুজনের আসল নাম প্রকাশ পায়না। গল্পের প্রয়োজনেও সেটা গোপন থাকে?

"আমার স্ত্রীকে নিয়ে সমস্যা।" Flask থেকে গরম চা দিয়ে গেছে কেষ্ট। কাপে চুমুক দিয়ে আবার টেবিল রেখে বলতে শুরু করেন মল্লিক বাবু।

"নির্মলার সাথে আমার আলাপ হয় আমাদের ad agency মারফত। একটা product launch এর সময় কিছু model এর প্রয়োজন ছিল। নির্মলা সেখানে audition দেয়। কি দেখেছিলাম কে জানে, হয়ত যুবা বয়সের উৎসাহেই নির্মলাকে select করতে বলি আমি। তারপর কিছু ভুল করে ফেলি আর যে কারণে। ..."

"প্রথম স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ এবং নির্মলার সাথে বিবাহ?"

"অনির্বাণ বলেছে আপনাকে?"

"উনি নিজেও জানেন কিনা আমি জানি না।"

"হুমম! ব্যাপারটা আড়ালে মিটিয়ে নেওয়া হয়। "

"নির্মলা দেবী আপনাকে blackmail করতে শুরু করেন, এবং তার সহকারী যে ছিল সেই সময় এই কাজে, এখন নতুন দাবী নিয়ে আপনাকে বিরক্ত করতে শুরু করেছে।"

"আজ্ঞে হ্যা! রাকেশ যাদব নামের একজন। আমার স্ত্রীর কলেজ জীবনের প্রেমিক। ওদের মধ্যে যে সম্পর্কটা এখনো রয়েছে তার প্রমাণ পেয়েছি গত বছর। রাকেশ এখন আমার ব্যবসার অর্ধেক মালিকানা চায়। নির্মলা তাকে সেই কাজে সাহায্য করছে।"

"নতুন দাবীর জন্যে এই রাকেশ আর নির্মলা কি বিষয়ে আপনাকে blackmail করেছে?"

"আমাদের পারিবারিক সোনার ব্যবসা এখন যে পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, বুঝতেই পারছেন, সোজা পথে সবকিছু হয়নি।"

"আর সেই অন্ধকার দিকের হদিশ রাকেশ পেল কিভাবে?"

"নির্মলার প্রতি আমার একটাই দুর্বলতা ছিল, তার শরীর। আর সেই ফাঁদেই পা দিয়ে আমি অনেক কথা বলে ফেলেছি তার কাছে। এখন আফসোস হয় নিজের অল্পবয়সের খামখেয়ালি গুলোর কথা ভাবলে।"

"Income tax এ ফাঁকি দেয়া থেকে শুরু করে, গোপনে সোনার কারবার চালানো, এই সবকিছুর প্রমান তাদের হাতে এসে গেছে?"

"আপনি আমায় বাঁচান শচীন বাবু। আমার বাবা সত্তোরোর্ধ বৃদ্ধ। আমার প্রথম পক্ষের স্ত্রীর এক সন্তান আছে। সে-ও এখন বড় হয়েছে, বুঝতে শিখেছে। আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন পথ নেই। পুলিশে ওপর মহলে আমার চেনা শোনা আছে। আপনি চাইলেই আমি ব্যবস্থা করে দিতে পারি। কিন্তু এই বিপদ থেকে আমায় উদ্ধার করুন।"

"তাহলে পুলিশের সাহায্যই নিতে পারতেন। ব্যাপারটা সরকারি শিলমোহর পেত ?"

"ক্ষমা করবেন। আমি ভুল করে বলে ফেলেছি।"

"সুবীর আপনাকে একটা mobile দিয়ে দেবে। 'শরীরের' লোভে সেটি আবার শত্রূপক্ষের হাতে তুলে দেবেন না। আজকের পর থেকে আমাদের সব কথা এই mobile মারফত হবে। আর কাজ ফুরিয়ে গেলে mobile টা ফেরত দিয়ে দেবেন।"

"নিশ্চই"

"আগামী পরশু রাত সাড়ে নটা নাগাদ আপনার কাছে call যাবে। চেষ্টা করবেন সেই সময় শত্রূ সীমার বাইরে আর পরিষেবা সীমার মধ্যে থাকার।"

"বেশ বেশ! আর আপনার mode of payment টা ?"

"সবটাই cash এ হবে, আর এখন বারো হাজার টাকা advance দিয়ে যেতে হবে।"

"মোটামুটি আন্দাজ কিরকম খরচ পরবে?"

"আপনিই আন্দাজ করুন না! দেখি অঙ্কটা মেলে কি-না?"

"সত্যিই যদি আপনি success পান Mr. সামন্ত। Am ready to pay you any amount."

"বাহ্! তাহলে তো মশাই আপনাকে আমারও blackmail করার একটা সুযোগ আছে দেখছি।"

সমবেত তিনজনেই হেসে ওঠে শচীনের কথায়।

"আপনি ঠাট্টা ভালোই করেন Mr. সামন্ত। Seriously. আপনি নিজের প্রয়োজন মাফিক সমস্ত খরচ পেয়ে যাবেন। কিন্তু আমার কাজটা ঠিক মত হয়ে যাওয়া চাই।"

আরো টুকটাক কাজের কথা হলে, দ্বিতীয়বার চা-পর্ব শেষ করে ভদ্রলোক বেরিয়ে যান। দু'হাজার টাকার ছ'টা নোট সঙ্গে নিয়ে আমিও বেরিয়ে যাই খুচরো করিয়ে আনতে। আমাদের কাজে, লোকে নিজের রোজগারের টাকা কম দেন, বদলে কালো টাকাগুলি চালিয়ে নেন বেশি।

                                                                            //৩//
প্রায় সাতটা দোকান ঘুরে এক এক জায়গায় একটা করে নোট ভাঙিয়ে যখন বাড়ি ফিরলাম, শচীন সোফায় আধশোয়া অবস্থাতেই ঘুমিয়ে গেছে। বিরক্ত না-করে তার ঘরে ঢুকে, টাকাগুলো নিয়ম মাফিক জায়গায় সাজিয়ে স্নান-খাওয়া সেরে নিলাম। এ'বার কলকাতায় মাত্রাতিরিক্ত গরম পড়েছে। বাড়ি থেকে বেরোতেই অভক্তি আসে। শচীন আবার খুচরো কাজ করতে ভালোবাসে না। তাই এ'সব দিকগুলো আমাকেই সামলাতে হয়। আর কেষ্ট আমাদের পরিত্রাতা। সময়মত খাবার আর চা-এর যোগান থেকে শুরু করে laundry থেকে কাপড় আনা। একেবারে গুছিয়ে করে দেয়। আমি আসার পর থেকে শচীনের আলসেমি আরো বেড়ে গেছে। আগে তবু নিজে সিগারেট কিনতে যেত। এখন সেটাও আমার দায়িত্বে।

পোশাক পাল্টে আলো নিভিয়ে শুয়ে আজকের case টা নিয়ে ভাবছি, এমন সময় মাথার কাছে একটা ছায়া দেখে চমকে উঠলাম। অন্ধকারে কোন অবসরে শচীন যে আমার মাথার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে টের পাইনি।

"ঘুমিয়ে গেলে চলবে?" ঘরের বাতি জ্বালিয়ে আমার laptop টা নিয়ে আসে।

"বাহ! নিজে নাক ডাকিয়ে পাড়া কাপালে এতক্ষন?"

"ভদ্রলোক চুটিয়ে facebook করেন।"

"কি ভাবে বুঝলে?"

"কথা বলার সময় ওনার mobile এর fb messenger এর পিড়িং পিড়িং আওয়াজ শুনে। এই নাও।"

laptop টা আমার দিকে বাড়িয়ে দেয় শচীন।


"ওনার profile টা hack করে দিয়েছি। এবার নির্মলা মল্লিক, আর রাকেশ রাজু, এই দুজনের ছবিগুলো পটাপট save করে নাও। তারপর print করে নাও।"

"বেশ! তারপর?"

"আমার কাজের জায়গা, আর পদ্ধতি সম্পর্কে একটা খসড়া বানানো হয়ে গেছে। কাল থেকে নেমে যাবো।"

"বা বা এর মধ্যেই?"

"সামান্য কাজে বেশি সময় নষ্ট করে লাভ কি বল?"

"সামান্য? আমার তো মনে হয় ভালোই কাঠ-খড় পোড়াতে হবে এই কাজে।"

"কাঠ-খড় পুড়িয়ে রান্নাও করা যায়, মরাও পোড়ানো যায়। এই কাজে রান্নার মতো কাঠ-খড় জোগাড় হলেই হবে। "

" কোথায় যাওয়া হবে, সেটা বলবে?"

"কাল রাতে সব বলব। এখন কাজগুলো সেরে ঘুমিয়ে পর।"

                                                                   //4//

শচীনের সাথে কাজ করা ছাড়াও আমার নিজের একটি ছোট dispensary আছে। মাঝে মধ্যে সেখানে এসে বসি। টুকটাক জ্বর-পেট খারাপের রুগী দেখে ওষুধপত্র দেই। শচীনের অবশ্য সেদিকে বালাই নেই। একবার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মানে আর ওদিকে ফিরেও তাকাবে না। পারিবারিক পিছুটান নেই কারণ শচীনের দাদা একাই সেদিক সামলায়।   আমি নিখাদ ভবঘুরে। ডাক্তারি পাশ করে শহরে এসেও কোন ফল না পেয়ে গ্রামে ফিরে গিয়েছিলাম। বাড়িতে বিয়ের তাগাদা শুরু হতেই পালিয়ে এলাম কলকাতা। শচীন একদিন দেখা করে নিজের একটা business idea share করে। নেমে পড়লাম ওর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। একটু যে বিপথে চালিত হতে শুরু করেছিলাম নিজের ethics বা বিবেকের থেকে। টের পেলেও, নেশায় মত্ত মানুষ যেমন আবেগ ভুলে ডুবে থাকে। আমাদেরও সেই পরিণতি হয় অবশেষে।

চেম্বার বন্ধ করে তালা লাগাচ্ছি, এমন সময় শচীন এসে দাঁড়ায়। হাতে একটা pendrive নিয়ে লুফতে লুফতে বলে,

"Mr. মল্লিকের যৌবন জীবনের লীলাময় চলচিত্র আর স্থিরচিত্রের সম্ভার।"

অবাক হয়ে প্রশ্ন করলুম "এ জিনিস কোথায় পেলে?"

"শত্রূদের হাতিয়ার, শত্রূ শিবির ছাড়া আর কোথায় পাওয়া যাবে বল?"

"রাকেশ এর সাথে দেখা করেছিলি?"

"আগে চা খাওয়া? তারপর সব বলছি। আজকে তোর ভালোই আমদানি হয়েছে, বুক পকেট দেখেই বোঝা যাচ্ছে।"

আমদানিই বটে। সাকুল্যে বারোশো টাকা পকেটে এসেছে ছয় বছর ডাক্তারি শিখে, আর চার বছর ভাগ্যের উপহাস সহ্য করে। তাও হাজারটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে। কলকাতা শহরে ডাক্তারি করার অনেক বিড়ম্বনা। আধুনিক শিক্ষিত মানুষের Net বুদ্ধির ফলে, আমাদের নেট দুর্বিপাকের সীমা নেই। জ্বরের ওষুধের সাথে antibiotic দিলেও, একশ প্রশ্নের জবাবদিহি।

যাক সেসব। কাজের কথায় আসি। চা খেতে খেতে শচীনের কাছে যা শুনলাম, তার সংক্ষেপ হল,

Facebook থেকে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছিল, রাকেশ এখন ছবি তোলার পাশেও একজন DJ র সাথে কাজ করে। DJ আবার এক নারী চরিত্র। মেয়েটির সাথে রাকেশের যে গোপন সম্পর্ক রয়েছে, তা ছবি দেখে আন্দাজ করলেও শচীন সে সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য দেয়। আজ একটি pub এ রাকেশের যাওয়ার কথা, facebook events এ সেই উল্লেখ ছিল।


 অর্থহীন কিছু গানে, অর্থহীন beat সংমিশ্রণ করে অহেতুক পরিবেশন করাই এখনকার হাল fashion. আর তাতেই উন্মত্তের মত নেচে যায় তরুণ-তরুণী। Pub এর এক কোণে বসে beer খাচ্ছিল রাকেশ। চতুর্থ বোতল শেষ করবে বলে চুমুক দিয়েছে, শচীন গিয়ে তার পাশের chair এ বসে।


"সৌগত মল্লিক কে শুনলাম ভালোই বিপাকে ফেলেছেন?"

তিক্ত তরলের খানিকটা উজিয়ে ওঠে রাকেশের। বিষম খেয়ে যায়। একটু সামলে নিয়ে

"কে আপনি?"

"আমায় আপনি চিনবেন না। তবে আমরা দুজনেই যে opportunist সেটা বলতে পারি।"

"Scoundrel, তুমি জানো আমি কে?"

"বিলক্ষণ জানি! পরস্ত্রীদের কাছে ছদ্ম-সুখের পণ্য ব্যবসায় আপনার দোসর কি আর কেউ আছে বলুন?"

"মেরে এই pub এর এক কোণে ফেলে রেখে দেব, কেউ বাঁচাতেও আসবে না। আমায় রাগিও না বলে দিচ্ছি।"

"চোরের ওপর বাটপারি করার মজাই আলাদা। তবে, এটুকু বলতে পারি, আমি আপনার উপকার করতেই এসেছি।"

"তার মানে?"

রাকেশের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে শচীন বলে, "নির্মলা দেবী যে আপনার আর ওই মেয়েটির সম্পর্কের কথা জানতে পেরে গেছেন, সে খবর রাখেন?"

কিছু বলার চেষ্টা করে রাকেশ, তাকে প্রায় থামিয়ে দিয়েই শচীন বলে, " নির্মলা দেবী যে সেই দুঃখে আপনাদের দুজনের সব কথা নিজের স্বামীর কাছে বলে দিয়েছেন সেই খবর রাখেন?"

"What da.......!"

ফোন  নির্মলার নম্বর dial করতে যায় রাকেশ। শচীন আবার বাধা দেয়।

"কোন লাভ নেই।"

"মানে?"

"আপনার থেকে দূরে যাওয়ার জন্যেই মল্লিক বাবু সস্ত্রীক বাইরে যাচ্ছেন।"

"কোথায়?"

"জানাতে আমার কোন দ্বিধা নেই, কিন্তু আমার মুনাফার দিকটাও তো দেখতে হবে?"

"কি চাই আপনার?"


"মল্লিকের company এর অর্ধেক মালিকানা তো আপনি পাচ্ছেন। আমায় যদি সেই  সাপেক্ষে সামান্য কিছু অর্থ দেন, আমি আপনাকে মল্লিকের বিষয়ে অনেক গোপন তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারি।"

"দেখ boss! আমার সাথে এ'সব চালাকি কোরো না!"

"ছি ছি! আমি নবীন মানুষ। আপনার এলেমের সাথে আমার তুলনা চলে? আপনি রাজি হলে, দুজনের লাভ ছিল। আপনার যখন এতই মেজাজ, তখন নাহয় থাক।" টেবিল থেকে উঠে আসার সময় শচীনকে বাধা দেয় রাকেশ।

"কি কি ছবি আছে তোমার কাছে?"

"ব্যবসার কথা কি আর এ'সব জায়গায় বসে হয় বলুন?"

চা পর্ব শেষ করে আমরা হাটতে হাটতে বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছিলাম।

Pub এর ঘটনা শোনার পরে আমি প্রশ্ন করি।

"রাকেশ সব ছবি তোমায় দেখালো?"

"শুধু দেখানোই নয়, নিজে সব কিছু বুঝিয়ে বের করে দিয়েছে। মানে এখন আর মল্লিকবাবু কে blackmail করার মত কোন সামগ্রী ওর হাতে নেই।"

"ওকে manage করলে কিভাবে? পরে তো তোমার খোঁজ করবেই?"

"আগামী আটচল্লিশ ঘন্টার আগে ওর ঘুম ভাঙলে হয়।" শচীন আবার pendrive নিয়ে লুফতে শুরু করে।


"আবার সেই drug abuse?"

"না করলে উপায় কি বল?" হাসতে হাসতে সিঁড়ি দিয়ে উঠে যায় শচীন।

                                                                 //৫//
কথা মত পরের দিন মল্লিক বাবুর হাতে train এর টিকিট আর ছবি সমেত pendrive পৌঁছে দিয়ে আসি। রাত সাড়ে ন'টা নাগাদ phone করে সব কিছু বুঝিয়ে দেয় শচীন। অবশ্য, plan এর সিঁকিভাগ বলা চলে।
শচীনের plan মাফিক মল্লিকবাবুর প্রাথমিক কর্তব্য ছিল, সস্ত্রীক আলিপুরদুয়ার চলে যাওয়া। সেখানে হোটেল শিপ্রা-আলয় এ ওঠা এবং সেখানকার দোতলার কোন ঘরেই যাতে room পাওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা করা। Train এর টিকিট জোগাড় ও পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলাম আমি। আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ ছিল জিনিসপত্র গুছিয়ে, contacts জোগাড় করে north bengal যাত্রা।

NJP থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে সৌগত মল্লিক ও নির্মলা দেবী আলিপুরদুয়ার আসেন। হোটেল শিপ্রা-আলয়ে ১০৫ নম্বর ঘরে থাকার বন্দোবস্ত হয়। এতটা পথ আসার ধকল সামলাতে ঘরেই বিশ্রাম নেন সারাদিন। বিকেলে নিচে হোটেলের canteen এ বসে চা খাচ্ছেন, এমন সময় পিঠের ওপর একটা চর খেয়ে চমকে ওঠেন। মল্লিক বাবুর কলেজ জীবনের বন্ধু অনিমেষ চক্রবর্তী ছুটি কাটাতে এবার এসেছেন North Bengal. গত পরশুদিন অনিমেষ সপরিবারে এসে পৌঁছেছেন আলুপুরদুয়ার। আজ সকালে মাথাভাঙ্গা, জলদাপাড়া হয়ে ফুন্টশিলিং দেখে এইমাত্র ফিরেছেন। Canteen এ বিকেলের টিফিন আর চা order দিতে এসে পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা।

"তারপর কি খবর বল?" চায়ের কাপে সশব্দ চুমুক দিয়ে, চায়ের কাপ টেবিলে রেখে প্রশ্ন করেন অনিমেষ।

"এই চলে যাচ্ছে।" সিগারেট ধরিয়ে বলেন মল্লিকবাবু।

"ব্যবসার খবর কি?"

"Politics আর economy একসাথে হা-ডু-ডু খেলতে শুরু করলে ব্যবসা কি আর ভালো থাকে, বল?"

"সে আর নতুন কি? আগেও ছিল, এখনো আছে।" চা শেষ করে নিজেও সিগারেট ধরান অনিমেষ।

"সেই আরকি। মন-মেজাজ ভালো নেই। তাই চলে এলাম।"

"ভালো করেছিস। আজকেই এলি?"

"হ্যা! কাল রাতে তৎকালে টিকিট পেয়ে গেলাম। চলে এলাম।"

"কোথায় কোথায় যাবি কিছু ভেবেছিস?"

"না না! সুযোগ পেলাম কোথায়। এই চা খেয়ে ভেবেছিলাম, হোটেলের  ম্যানেজার এর সাথে একটা plan বানিয়ে গাড়ি ভাড়া নেব।"

"বেশ তো! আমাদের সাথে চল। কাল আমরা গরুমারা হয়ে যাবো সাঁতালেখোলা। খুব ভালো জায়গা।"
জানলা দিয়ে বাইরের বাগানে সিগারেটটা ফেলে বলেন অনিমেষ।

"আমার আবার!" একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন সৌগত বাবু। একটু ভেবে নিয়ে বলেন, "নির্মলা আবার অন্য কোন plan ভেবেছে কি-না!"

"আহা! বৌদিকে সে ম্যানেজ করে নেওয়া যাবে। আছিস কোন room এ?"

"একশো পাঁচ।"

"বোঝ! আমরা আছি একশো সাতে। ভালোই হল, চল বৌদির সাথে আলাপটা সেরে আসি।"

"এখনই যাবি? আচ্ছা চল?"

"তুই কি নতুন বৌ নিয়ে আবার honeymoon করতে এসেছিস নাকি?"

চমকে ওঠেন মল্লিক বাবু। "মানে?"

"পুরোনো বন্ধুর সাথে বেড়াতে যাবি, এত ইতস্তত করার কি আছে বুঝিনা! নতুন বিয়ে করলে লোকে নাহয় privacy খোঁজে।"

একগাল হেসে পরিস্থিতি কিছুটা সরল করবার চেষ্টা করেন মল্লিকবাবু। তারপর চা-এর দাম মিটিয়ে, reception এ কালকের জন্যে দু'টো গাড়ি book করে দোতলায় যাওয়ার সিঁড়ির কাছে আসেন।

"তুই room এ যা বুঝলি। Fresh হয়ে নে।  আমি একটু বাইরে থেকে আসছি।"

"কেন, কি হল?"

কি বলবে বুঝে উঠতে না পেরে সিগারেট কিনতে যাওয়ার কথা বলে বিদায় নেন সৌগত বাবু। হোটেল থেকে বেরিয়েই শচীনকে ফোন করার চেষ্টা করেন মল্লিক বাবু। এদিকে ফোনে নেটওয়ার্ক নেই দেখে কোনভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। অগত্যা একটা চা-এর দোকান দেখে সেখানেই গিয়ে বসেন।

"বাবু আপনার চা!" একটা বাচ্চা ছেলে চায়ের কাপটা এগিয়ে ধরে। নিজের চিন্তায় একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন মল্লিক বাবু। বাচ্চাটার ডাকে সম্বিৎ ফেরে।


"Mobile এর roaming service টা off আছে বোধয়। Settings এ গিয়ে ওটা on করে দিন।" পাশে বসা এক ভদ্রলোকের মন্তব্য শুনে একটু হকচকিয়ে যান মল্লিক বাবু।

"আপনি কে?"

"শচীন সামন্তর মক্কেল তো আপনি?"

"আজ্ঞে?"

"আমি শচীন-দার agent. এখনো অব্দি যা যা হয়েছে, সবই শচীন দার plan মাফিক। সাঁতালেখোলা যাওয়ার plan টাও ছিল। কাজেই আগামীকাল বন্ধুর সাথে আপনি সাঁতালেখোলা যাচ্ছেন।"

"কিন্তু আমার কাজ?"

"কালকেই হয়ে যাবে। আজ রাতে বন্ধুকে নিজের ঘরে dinner এ নিমন্ত্রণ করুন। যে ছেলেটা খাবার পৌঁছতে যাবে, তাকে বকশিস দেওয়ার নামে উঠে যাবেন বাইরে। তারপর শচীনদার বলে দেওয়া amount এর টাকাটা ওর হাতে দিয়ে দেবেন।"

"শচীন বাবু কি এসেছেন এখানে?"

"তা আমিও জানিনা। আমায় যা বলতে বলেছিল। বলে দিলাম।"

ভদ্রলোক চা-র দাম মিটিয়ে বেরিয়ে যান।

                                                                        //৬//

সাঁতালেখোলা সত্যি ভারি সুন্দর জায়গা। এক জায়গায় গাড়ি পার্ক করে প্রায় এক কিলোমিটার মত হাটা পথ পেরিয়ে ঝর্ণার কাছে যেতে হয়। একটা ঝুলন্ত ব্রিজ পেরিয়ে ওপারে একটা বাংলোর কাছে যেতে হয়। বেশ ভালোই ভিড় হয় এখানে। গাড়ি পার্কের জায়গায় অনেকগুলি ছোটখাটো খাবার দোকান রয়েছে। সেখানে নেমে মোমো খাওয়া হয়। তারপর খাঁটি দার্জিলিং টি এর চা খেয়ে রওনা দেন ঝর্ণার দিকে। বেশ খানিকটা পথ ঢাল বেয়ে নেমে গেছে। এক পাশে খাদ আর জঙ্গল। পাহাড়ের চুড়োর দিকে সাদা মেঘগুলো লেগে আছে। নির্মলা সেই দেখে বলে পাহাড়গুলো নাকি শ্যাম্পু করে আছে।
অনিমেষের স্ত্রী এবং নির্মলার মিল হয়েছে ভালো। দুজনেই বেশ গোটা রাস্তা নিজেদের ছবি তুলতে তুলতে আসছে। অনিমেষের ও ছবি তোলার বাতিক। DSLR নিয়ে এখানে সেখানে নানা রকম ভঙ্গিতে ছবি তুলে যাচ্ছে। নির্মলাকে আজ ভারী মিষ্টি দেখাচ্ছে।


অনিমেষের দুই ছেলে। বড়োটি সবে স্কুল ফাইনাল দিয়েছে, আর ছোট ছেলেও এক বছর বাদে স্কুল ফাইনাল দেবে।  নির্মলা কোনদিনও মা হতে পারবেনা জেনে খুব আফসোস হত মল্লিকবাবুর। অন্যদিকে প্রথম পক্ষের স্ত্রী তাকে একটি ফুটফুটে সন্তান দিয়েছিল। নিজের খামখেয়ালির জন্যে সেই সম্পর্ক নষ্ট করেছেন মল্লিকবাবু। সুমিত্রার সাথে divorce এর সময় ছেলের যাতে কোন অসুবিধা না হয় সব বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন মল্লিকবাবু। নিজের ব্যবসার অর্ধেক মালিকানা দিয়েছিলেন প্রথম স্ত্রীর হাতে। শর্ত ছিল, ছেলে কলেজে উঠলে ব্যবসার ভার নেবে। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে ওঠার পর সুমিত্রা তার ছেলেকে নিয়ে এসেছিল বালিগঞ্জের অফিসে। কয়েক যুগ আগে নিজের চেহারার সাথে একদম এক প্রতিফলন দেখে মনটা বড় দুর্বল হয়ে পড়েছিল মল্লিকবাবুর। কেবল মাত্র নিজের স্বার্থের কথা ভেবে যে ভুল করেছিলেন। আজ সেই ভুল যেন তার সামনে দাঁড়িয়ে পরিহাস করছে।

ছেলেকে দেখার পর থেকেই নির্মলার প্রতি একটা চাপা রাগ জন্মেছিল মল্লিকবাবুর। যার জন্যে সব সুখ সে জলাঞ্জলি দিয়েছিল একদিন। আজ সেই নির্মলাই এক পর-পুরুষের সাথে ফন্দি করে তাকে বিপাকে ফেলতে চাইছে। যে সম্পর্কের শুরুই হয়েছিল অসহায়তার সুযোগ নিয়ে, তার পরিণতি আর কিই বা হতে পারে।

পকেটের মধ্যে তার দুর্বল মুহূর্তের ছবি ভরা pendrive টা মুঠোয় চেপে ধরেন মল্লিক বাবু। খাদের ধারে দাঁড়িয়ে নানা রকম মুখভঙ্গি করে নির্মলা selfie তুলছিল। Pendrive এর ছবিগুলো মল্লিকবাবু আসার আগেরদিন দেখেছেন। নিজের নগ্নতা বোধয় খুব অপ্রিয় হয়ে যায় একসময়। নির্মলার মুখের হাসি এখন বিষাক্ত ছোবল ছাড়া আর কিছু মনে হয়না। সমস্ত আবেগ, প্রেম, ভালোলাগা মুছে গিয়ে শুধুই মনে আসে এক ধাক্কা মেরে যদি খাদে ফেলে দেওয়া যেত নিজের ভুল কাজের মূর্ত প্রতীক কে। দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগটা সংযত রাখার চেষ্টা করেন মল্লিক বাবু।

"মাকড়শার জালটা দেখেছিস?' অনিমেষের কথায় চিন্তার বুহ্য থেকে বেরিয়ে আসেন মল্লিকবাবু।


DSLR তাগ করে, লেন্সের শেষ সীমা ব্যবহার করে মাকড়শার জালের ছবি তুলছে অনিমেষ। সত্যি ভারী আশ্চর্য শিল্প এই প্রাণীর। দুটো গাছের গুঁড়ির মাঝে একটু একটু করে ফাঁদ বানিয়ে রেখেছে। শিকার একটু অন্যমনস্ক ভাবে উড়লেই এসে জড়িয়ে যাবে জালে। তারপর সেই ফাঁদে পেয়ে একের পর এক জলক বিস্তারে ঘিরে ধরবে শিকারী। সামান্য দম নেওয়ার অবকাশটুকু দেবে না। নিজের পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য দেখেই বোধয় রাগটা মাকড়শার জালে গিয়ে পরে মল্লিকবাবুর। পকেট থেকে পেনড্রাইভ টা বার করে ছুড়ে মারেন জালটার দিকে লক্ষ্য করে। অব্যর্থ নিশানা। মাঝ বরাবর দুভাগে ছিড়ে যায় শিকারির পাতা ফাঁদ।

ছবি তুলতে গিয়ে হঠাৎ এমনভাবে জালটা ছিড়ে যাওয়ায় লেন্স থেকে চোখ সরিয়ে মল্লিকবাবুর দিকে তাকান অনিমেষ। চাপা রাগ তখন সারা শরীরে খেলছে যেন।

"তুই ঢিল মারলি?" মল্লিক এর কাছে এসে দাঁড়ান অনিমেষ। "উফ! সৌগত। তোর স্বভাব আর পাল্টালো না। এখনো কুকুর বিড়াল দেখলে তেড়ে যাস?"

"না এমনিই।" সামান্য হেসে নিজেকে সামলে নেন মল্লিকবাবু।

"তোমরা কি ওখানেই থাকবে?" দলের বাকিরা অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিল। অনিমেষ আর মল্লিকের দেরি দেখে প্রশ্ন করেন অনিমেষের স্ত্রী।

আবার চলা শুরু করে দুই বন্ধু। পথটা এখন খাড়াই অনেকটা উঠে গেছে। আগে যে এখানে গাড়ি যাতায়াত ছিল রাস্তা দেখলে বোঝা যায়। পাহাড়ের গা বেয়ে ছোট খাটো ঝর্ণা এসে পড়েছে রাস্তায়। আবার রাস্তা পেরিয়ে নেমে গেছে খাদে। ব্রিজের কাছে এসে ঝর্ণার রূপ দেখে সব অভিমান রাগ যেন মুছে যায়। পকেট থেকে ফোন বার করে ছবি তুলতে শুরু করেন মল্লিক বাবু।


নির্মলা আর অনিমেষের স্ত্রী ঢাল বেয়ে ঝর্ণার কাছে নেমে গেছে। অনিমেষের দুই ছেলেও এক পাথর থেকে অন্য্ পাথরে লাফিয়ে জলের স্রোতের সাথে খেলছে। অনিমেষ এক পাশ দিয়ে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে ছবি নিচ্ছে।

"এই শুনছ! আমার একটা ছবি তুলে দাওনা প্লিজ।" নির্মলা ডেকে বলে।

ঝর্ণার বিভিন্ন এক এক জায়গায় স্রোত এক এক রকম। সেইভাবে background নিয়ে খান কতক ছবি তুলে দিলেন মল্লিক।



প্রায় আধ ঘন্টা এইভাবে কেটে গেল টের পায়নি কেউ। একটা ছেলে চা নিয়ে আসায় সবাই মিলে বসা হয়। অবশ্য অনিমেষের স্ত্রী বা নির্মলা নিজেদের ছবি তুলতেই ব্যস্ত ছিল। Resort এর এক ঢালে কিছু বেঞ্চ আর চেয়ারের ব্যবস্থা আছে। সেখানে বসে দুই বন্ধু মিলে চা নেয়।

"বাবু ছবি তুলবেন?" একটি অল্পবয়সী ছোকরা গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়।

"আমাদেরই তো ক্যামেরা আছে?" অনিমেষ বলে।

"একটা ছবি তোলান না সাহেব। মাত্র কুড়ি টাকা। Instant photo."

"বাহ্ বাহ্! এখন এখানেও এই ব্যবসা? পুরী-দীঘা ছেড়ে এখন পাহাড়েও?" অনিমেষ মল্লিকের দিকে তাকিয়ে বলে।

"কুড়িটা একটু বেশী হয়ে যাচ্ছে না বাবা?"

"এই করেই তো রোজগার সাহেব। কুড়ি টাকায় আজকাল ভালো চাল ও পাওয়া যায়না।"

"তো আর কোন ধান্দা করতে পারো তো?" অনিমেষ বলে।

"মা-এর দোকান আছে ওই parking lot এ। এই সকালেই আমাদের যা ব্যবসা সাহেব। সন্ধ্যেবেলা তো কেউ আসে না। আমি এখন ছবি তুলি। মা দুকান সামলায়।"

"আহ ছাড়ো না অনিমেষ।" অনিমেষ আবার কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, মল্লিক বাধা দিয়ে বলে ওঠে।

"শোন ছোকরা। আমাদের দুই বন্ধুর ভালো দেখে পাঁচটা ছবি তুলে দাও দেখি। ভালো হলে তবেই টাকা দেব।"

ছেলেটি বিভিন্ন জায়গায় দাঁড় করিয়ে, পাথরে বসিয়ে ছবি তুলে দেয় পাঁচটা। ছবি হাতে নিয়ে দাম মেটানোর সময় অনিমেষের স্ত্রীর চিৎকার শোনা যায়। Mobile এ ছবি তুলতে তুলতে বেশ কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিল নির্মলা। সবার চোখের আড়ালেই চলে গিয়েছিল প্রায়। একজন tourist হঠাৎ জলে কিছু পড়ার শব্দ শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখে নির্মলা ভেসে যাচ্ছে স্রোতের টানে। ঐদিকে কেউ যায়না কারণ স্রোত বেশি। পাথরগুলোতেও শ্যাওলা জমে আছে। পা স্লিপ করে তাল সামলাতে না পেরে জলে পরে গিয়েছে নির্মলা। ছবি তোলার ছেলেটা সৌগতর কাছে ফোনটা চায় পুলিশে ফোন করবে বলে। সৌগত নিজের ফোনটাই দিতে গিয়েছিল, কিন্তু tower নেই দেখে ছোট ফোনটা দেয়। অনিমেষ এগিয়ে গিয়েছিল অনেকটা। ফোনটা হাতে নিয়ে আমি নিজের টুপিটা খুলে বললাম, "আপনার কাজ হয়ে গেছে সাহেব।" ব্রিজ পেরিয়ে আসার সময় একবার ফিরে দেখেছিলাম। হতভম্ব হয়ে একই ভাবে দাঁড়িয়েছিলেন সৌগত মল্লিক। সাঁতালেখোলার রূপ আর বন্ধুর সঙ্গ পেয়ে বোধয় ভুলেই গিয়েছিলেন আমাদের ওপর দেওয়া দায়িত্ব।


                                                                          //৭//
কলকাতার অনেকগুলি কাগজেই খবরটা বেরিয়েছিল। "Accidental death of Nirmala Mullik". কাগজটা নামিয়ে শচীনের দিকে তাকাতে দেখি সে অতি কষ্টে কুঁজো হয়ে বসে পা-এর নখ কাটতে ব্যস্ত।

"সেদিন মল্লিকবাবুর অভিব্যক্তিটা দেখার মত ছিল। আমি তো সামনেই ছিলাম। উনি বোধয় expect করেননি এইভাবে আমরা কাজটা করে দেব।"

"তাহলে শ্মশানে মল্লিকবাবুর অভিব্যক্তিটা দেখলে কি বলতি?"

"তুই গিয়েছিলিস শ্মশানে?"

"বা-রে! যাবোনা? নিজের কুকীর্তির প্রমাণপত্র আগুনে পুড়ে ছাই হল কিনা চাক্ষুস করব না?"

"কি দেখলি?"

ডান পায়ের নখ কাটা শেষ করে বাম পায়ের নখগুলো কাটতে কাটতে বলে,

"মল্লিকবাবু স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন নির্মলা দেবীর শরীরটার সামনে। পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘাম মুছে একবার নিচু হলেন। তারপর নির্মলা দেবীর কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে ফিসফিস করে কিছু বললেন। সমবেত সবাই ভাবল আহা কি ভালোবাসা। তবে....."

"তবে?

"সত্যি চোখের জল ফেলতে দেখলাম আরেকজনকে।"

"কে?"

"রাকেশ যাদব"

"সে-ও গিয়েছিল নাকি?"

"এক কোণে আড়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যদিও মল্লিকবাবুর কাছেও ব্যাপারটা এখনো shocking."

"আর যোগাযোগ করেছিলেন?"

"না না! পাগল নাকি? একটা জিনিস যেটা বুঝলাম এই কাজটা করে..."

"কি বুঝলি?"

"দ্বিতীয় পক্ষ ব্যাপারটা বেশ রসের। কি বলিস?"

"ব্যোমকেশ থেকে dialogue ঝেপে বলছ ভায়া? এদিকে আমাদের পিছনে যে কোন টিকটিকি কবে লাগবে তার নেই ঠিক।"

"সে কি আর লেগে নেই ভাবছিস? তাই বলে সেই রসে বঞ্চিত থাকাটাও কি জরুরি?"

"আরে বাবা! তুই কি বিয়ের মতলব আটছিস নাকি?"

"পাগল! যা কাজ করি, কবে আমাকেই পটল তুলতে হবে তার নেই ঠিক। খামোকা একটা মেয়েকে কষ্ট দেব?

আমি আবার কাগজে মন দি। এমন সময় শচীনের mobile এ একটা ফোন আসে। নখ কাটতে ব্যস্ত থাকায় আমায় ইশারা করে ফোনটা ধরার জন্যে।

"হ্যালো"

"কৌস্তভ আছে?" ওপার থেকে এক নারী কন্ঠস্বর ভেসে আসে।

আমি অবাক হয়ে শচীনকে বললাম, কৌস্তভ কে চাইছে। প্রায় ছোঁ মেরে ফোনটা আমার হাত থেকে নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। নতুন মক্কেল, না কৌস্তভের প্রেমিকা, আমি জানিনা। শুধু খবরের কাগজে একটা ছবি দেখে সেদিনের কথা মনে পরে গেল। নির্মলা আর অনিমেষবাবুর স্ত্রী ব্রিজটাকে background করে দাঁড়িয়ে আছেন। আর দুই বন্ধু মিলে ছবি তুলছেন। শচীন নিজের location এ পৌঁছে গেছে। আমিও মেক-আপ নিয়ে মল্লিকদের আশেপাশে ঘুরছি। সেই মুহূর্তের তোলা নির্মলা দেবীর একটা ছবি কাগজে বেরিয়েছে।














গল্পের সব চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবে কারো সাথে কোন ঘটনার মিল সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালীয়। 

সহকারী: আগন্তুক। 
 কৃতজ্ঞতা স্বীকার: Google images .












শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

হয়ত অন্যরকম  


                                                                  //১//
আজ প্রায় তিন মাস হ'তে চলেছে, এদিকে ভবতোষের মানসিক অবস্থার কোন উন্নতিই নেই। একই কাজ বারবার ভুল করতে থাকায় Office এ সমস্যাগুলো আরো জটিল হয়ে দাঁড়ায়। শিব-শঙ্কর company এর tender notice বেরিয়েছে প্রায় ৪ মাসের ওপর। এক মাস গেছে year ending এর ঝামেলা কাটাতে। তারপর থেকে ভবতোষ quotation  এখনো বানিয়ে উঠতে পারেনি। B K Traders এর মালিক বিপিন খেরা নিজের ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে অবশেষে তলব করেন ভবতোষকে।

"একটা কাজ যদি তোমার দ্বারা হয়। শিব-শঙ্করের quotation টা সামান্য correction করতে সারা দিন কাবার করে দিলে?"

টেবিলের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিল ভবতোষ। চোখ ছিল টেবিলে রাখা লাফিং বুদ্ধার দিকে। কত সমস্যা চারিদিকে, এদিকে মোটা ভুঁড়ি নিয়ে দিব্য বসে বসে হাসছে লোকটা।

অল্পেতে খুশি হবে, দামোদর শেঠ কি?.........

'দিন কাবার? খাবার দাবার?........ দাবা!
দাবার চাল।
হায় কি হাল!

মা-গো! বাঁচাও!
জোড়ে চেঁচাও।........... চিৎকার?
আকার, বিকার, নিরাকার,............ স্নিকার!
উফফ কি খেতে!.... চাইছে পেতে!
পেতে! পেটে?
পেটে খেলে, পিঠে সয়?

হে হে!!
ভোলা পাগলা কি যে কয়।'

"অমন সং এর মতন দাঁড়িয়ে কি বিড়বিড় করছ ? মাথায় গেল; যা বলছি?"

'গেল গেল! গেল......
সবাই তো গেল,
কেউ ফিরে এলো?
       না! ফিরবে বা কেন?
সমাপয়েৎ মধুরেণ।
ধুস! ভুলভাল।
দিক লোকে গাল।

"শালা! কুত্তার বাচ্চা ! আবে ওয়ে গা**!! আমি যা বলছি কান দিয়ে ঘিলুতে যাচ্ছে?? এই পরিতোষ! মারো তো শালার মাথায় এক চাটি।"

চটাস!!

"ছন্দপতন!" ভবতোষ মালিকের দিকে তাকায়।

"যে আজ্ঞে মহারাজ!
     হয়ে যাবে কাজ।
দু'টো টাকা পেলে,
পেট ভরে খেলে।
হ'বে না-তো ভুল,
শাক-শেষ-ফুল।

হে হে হে!"

চটাস!

দায়িত্ব নিয়ে পরিতোষ আবার চর মারে ভবতোষের মাথায়।

"তুই স্যারকে নিয়ে ছড়া কাটছিস বোক**! তোর কি সব screw ঢিলা হয়ে গেছে নাকি বে?"

"হুম! হুম!
      গুম সুম!
ধাম ধুম! নিষ্চুপ। ............. শশশশষ !!!!!

ওই দেখ করা
in our পাড়া।
বাঁশি নিয়ে যায় ওষ্ঠাধরে!
ময়লার গাড়ি হাতে করে!"

"Get out! Just বেড়িয়ে যাও আমার সামনে থেকে।" হুঙ্কার দিয়ে ওঠেন MD বিপিন খেরা। "ওর dismiss letter ready কর পরিতোষ। ওকে আর আমাদের প্রয়োজন নেই।"



                                                                  //২//
"কি কান্ড বলুন দেখি! অমন একটা promising career! তার শেষে কি-না এই পরিণতি?"

"তাতে আপনার উদ্বেগের কারণ আছে কি?" File এর পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বলে পরিতোষ।

"ভালোই বললেন সেন বাবু। ছেলেটা আসার পর থেকে আমাদের company এর মুনাফার অঙ্কটা দেখেছেন?"

"তার জন্যে মাথায় নিয়ে নাচতে হবে নাকি?"

কথাটার তিক্ততা সাময়িক ভাবে চুপ করিয়ে দেয় officer এর accounts dept. এর বড়বাবুকে। খানিক চুপ করে থেকে নিজের কথাগুলি একটু সাজিয়ে নেন।

"তা অবশ্য ঠিক বলেছেন। সে তার কর্তব্য পালন করেছে। কোম্পানির খারাপ সময়ে দিন-রাত্র পরিশ্রম করে কাজ করেছে। কোম্পানিকে সাহায্য করেছে। কিন্তু তাই বলে, তার খারাপ সময়ে company র কিই বা দায় থাকতে পারে!"

"আপনার কথাগুলো বড় বিরক্তিকর বুঝতে পারছেন নিশ্চই?"

"আলবাত! আজ বিশ বছর এই আপিসে চাকরি করছি। মালিকের মর্জি বুঝিনা, তা বললে চলে?"

"আপনার কি চাই পরিষ্কার করেই বলুন না!"

"ভবতোষ salary পেত পনেরো হাজার টাকা। বোনাস আর Incentive মিলিয়ে সেটা সতেরো বা আঠারো হত।"

"হমম! তো?"

"এ'মাসে তার সব টাকা কেটে নেওয়াটা কি খুব যুক্তি সঙ্গত ছিল?"

"বাহ্! তার জন্যে company এত টাকা loss খেল! সেটার হিসেব হবে না?"

"Tender তো miss যায়নি? সে তো সব কাজ গুছিয়ে দিয়েই গেছে। company loss করেছে তো খিদিরপুরে অনেক মাল চুরি হয়ে যাওয়ায়। ভবতোষকে সেই কারণে দায়ী করা যায় কি?"

"যে সামান্য টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে, তাতে এমন কিছু যাবে আসবেনা।" পরিতোষ আবার ফাইল নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করে।"

"চেকটা এখনো আমার কাছেই আছে সেন বাবু। সতেরোশো পঞ্চাশ টাকার চেকে, আপনার সই রয়েছে।"

পরিতোষ চুপ করে নিজের কাজ দেখতে থাকে।

"Accounts এর অনেক গোলমাল MDর চোখ এড়িয়ে যায় সেন বাবু। কিন্তু ভবতোষ সেই গন্ডগোল শুধরে দিয়েছিল। তার মাইনের কেটে নেওয়া টাকা যে আদৌ account এ আসেনি, সেটা নিশ্চই আপনিও জানেন।"

"নিজের এক্তিয়ার ভুলে যাবেন না বড়বাবু। কি বলতে চান কি? ওই টাকা আমি নিয়েছি?"

"মোটেও সে কথা বলিনি, আমি বলছিলাম আমার dismiss letter টা দেওয়ার কথা। আপনি তো এ'বিষয়ে পোক্ত। তাই আর কি। ..."

"আপনি MD র সাথে কথা বলে দেখুন। আমি কিছু জানিনা।" একটু থেমে পরিতোষ আবার বলে, "একটা কথা কি জানেনতো বড়বাবু? ব্যবসায় আবেগ চলে না।"

মাথা নিচু করে পরিতোষের ঘর থেকে বেরিয়ে যান বড়বাবু।





                                                               //৩//
ঘরটা বড্ড স্যাতস্যাতে। আলো বাতাস ঢোকে না। একটাই জালনা, তা-ও আবার বন্ধ। এক কোণে মেঝেতে একটা গদি পাতা। সেখানেই শুয়েছিল ভবতোষ। জালনার পর্দা সরিয়ে পাল্লাটা খোলার চেষ্টা করে রিয়া। অনেক চেষ্টা করেও সুবিধা করতে না পেরে ভবতোষের পাশে গিয়ে বসে।



মাথার ঘামে ভিজে জবজবে হয়ে গেছে বালিশ টা। চুলগুলি মাথার সাথে লেপে গেছে যেন। ভবতোষের কপালে হাত রাখে রিয়া। হাতের ছোয়া পেয়ে চোখ মেলে তাকায় ভবতোষ।

রিয়া- শরীর কেমন আছে এখন?

ভবতোষ- না কাশী বাঈ।  এই শরীর আমি আর রাখব না। শেষ করে দেব অগ্নিশিখায়। লেলীহান আগুনের মাঝে নীরব নিদ্রায় ঘুমিয়ে। একটু একটু করে বিদায় নেব ধোয়ার কুন্ডলি হয়ে।

রিয়া- আজ জ্বর আসেনি তো আর?

ভবতোষ- জ্বর তো আমায় ভুলে গেছে কাশী বাঈ।  শুধু কাশি আমায় bye বলেনি এখনো।

শরীর খারাপ হলেও হেয়ালীগুলো একই আছে ভবতোষের। নিজের মনেই একটু হেসে ফেলে রিয়া।

রিয়া- তোমার ওষুধগুলো খেয়েছ?

ভবতোষ-  টাকা নেই, ওষুধ নেই।
               নেই স্রোত সাগরে। ...
               তুমি-আমি কেউ নেই,
              ঘুম থেকে জাগোরে। ......

রিয়া- বুঝেছি। Prescription কোথায় আছে বল। নিয়ে আসছি আমি।


ভবতোষ- করুণা? তুমিও আমায় করুণা করছ নূরজাহান? জানি পলাশীর যুদ্ধে আমি হেরে গেছি। শিরাজের পাশে থেকে সমান ভাবে ঠেকাতে পারিনি ওদের। বন্দী হলাম Clive এর সেনাবাহিনীর হাতে। প্রাণটা করুণা হিসেবে ভিক্ষে দিল। কিন্তু তুমিও?

রিয়া- আমি করুণা  করছিনা। তোমার prescription গুলি কোথায় আছে বলবে?

ভবতোষ- কি হবে ওষুধ খেয়ে?
                কিই বা হবে এই তরী বেয়ে!
                ক্লান্ত এ' জীবন স্রোতে ভেসে।
                লাভ কি আর মিথ্যে হেসে।


রিয়া- Office থেকে phone করেছিল?

ভবতোষ- ওরা ভুলে গেছে আমায়। তুমিও ভুলে  যাবে একদিন।

রিয়া- এ'রকম করো কেন? কি হয়েছে একটু বলোনা বাবু? তুমি এরকম করলে আমার ভালো লাগে, বলো? তোমার কি আজ মনটা একটু বেশিই খারাপ? খিদে পেয়েছে? কিছু খাবে? আমি একটু ওমলেট আর toast বানিয়ে দি?

ভবতোষ- খাবো কি রে? টাকা কই? অনেক টাকা লাগবে আমার। অনেক টাকা।

রিয়া- তোমায় অনেকবার বলেছিনা, আমার সামনে টাকা টাকা বলবে না!

ভবতোষ- জয় মা! জয় মা!
                শক্তি দে মা। আজই তোর চরণে বলি দেব।
                 রক্ত চাস মা! রক্ত?

রিয়া- আবার শুরু করলে এরকম?

ঘরের এক কোণে গিয়ে দাঁড়ায় রিয়া। ভবতোষের মানসিক অবস্থার কোন উন্নতিই নেই। আজ দু'সপ্তাহ হ'তে চলল। কিন্তু এখনো কোন পরিবর্তন নেই। চাকরি চলে যাওয়ার  পর সমস্যাটা যেন আরো বেড়েছে। এখন আর স্বাভাবিক কথা বলতেই চায় না। ডাক্তার দেখানো টা জরুরী বুঝে, আলমারি থেকে ভবতোষের জামা-কাপড় নিতে যায় রিয়া।


                                                                           //৪//

Dr. অমলেন্দু সরকার আজ বেলা করে আসবেন clinic এ। কলকাতার অন্যতম Psychiatrist. Dr. সরকারের নামটা রিয়ার চেনা। কেউ একজন suggest করেছিল বোধয়। তাই এখানেই নিয়ে আসার কথা ভাবে প্রথমে। Dr সরকার অন্য hospital এ on call গেছেন বলে, তাঁর এক subordinate প্রথমে ভবতোষকে দেখে। তারপর রিয়াকে waiting room এ বসতে বলে ভবতোষকে নিয়ে ward এ চলে যায়। প্রায় আধঘন্টা পর ফিরে এসে  রিয়া কে নিজের বসার ঘরে ডেকে পাঠায়।

 "নমস্কার। আসুন। বসুন।" রিয়া ঘরে ঢুকতেই একটা চেয়ার এগিয়ে দেন, তারপর নিজের পরিচয় দেন।
"আমি Dr. শিশির চ্যাটার্জি। Dr. সরকারের ছাত্র।"

হিয়া- নমস্কার। ও কেমন আছে এখন?

শিশির- Patient কি আপনার স্বামী?

হিয়া- না। আমরা বন্ধু।

শিশির- আচ্ছা! আপনাদের আলাপ কোথায়?

হিয়া- একসাথে theater করি। কিন্তু ও কেমন আছে বলবেন? এ'সব প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?

শিশির- আপাতত কিছু তো বলতে পারছিনা। বুঝতেই পারছেন। এ'সব রুগীকে প্রথমে ঘুমের ওষুধ দিতে হয় শান্ত করবার জন্যে। ওনাকেও ঘুম পারিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু ওনার history টা একটু জানলে কাজে সুবিধা হয় আরকি।

হিয়া- আচ্ছা! জিজ্ঞেস করুন। যতটা সম্ভব সাহায্য করব।

শিশির- কতদিন হ'ল চেনেন ভবতোষবাবু কে?

হিয়া- দু'বছর।

শিশির- প্রথম থেকেই কি এ'রকম ছিলেন? নাকি হঠাৎ?

হিয়া- গত বছর ওর প্রেমিকা অন্য একটি ছেলের সাথে বিয়ে করে নেয়। তারপর থেকেই একটু একটু পরিবর্তন আসছিল।কিন্তু চাকরি চলে যাওয়ার পরে সব কিছু বদলে যায়।

শিশির- দেখুন Miss ?

রিয়া- আমার নাম রিয়া।

শিশির- Miss রিয়া। দেখুন, এ'সব case এ প্রথম যেটা প্রয়োজন সেটা হ'ল পারিবারিক কেউ। ওনার মা-বাবা কোথায় থাকেন?

রিয়া- ওর কেউ নেই। এক দাদা আছে, কিন্তু যোগাযোগ রাখে না। আর বাকি আত্মীয়দের সাথে ওর সদ্ভাব নেই। সম্পত্তি বিষয়ে কোন পারিবারিক গন্ডগোলের পর থেকে, ও একাই আছে।

শিশির- উনি যে অফিসে চাকরি করতেন, আপনি চেনেন?

রিয়া- B K Trading House এ। ডালহৌসিতে।


শিশির- চাকরিটা কেন গেল, জানেন?

রিয়া- অত detail এ তো জানিনা। তবে একটা হিসেবের গোলমাল হয়েছিল। সেখান থেকেই।....

শিশির- একবার ওনার অফিসে গেলে ভালো হ'ত।

রিয়া- যাবেন? আমি চিনি অফিসটা। গিয়ে আচ্ছা করে কথা শুনিয়ে আসবো।  আজকে ওদের জন্যে আমার।....

শিশির- আপনি উত্তেজিত হবেন না। Patient তো ভালোই আছেন। একটু যা সমস্যা সেটা তো সাময়িক ব্যাপার।

রিয়া- ভালো হয়ে যাবে তো?

শিশির- নিশ্চই। আচ্ছা প্রথম আলাপের পর থেকে ঘটনাগুলি বলা যাবে? ব্যক্তিগত কিছু না বললেও হবে।

রিয়া- আমাদের theater group এর একটা show ছিল মালদায়। একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতা। ভবতোষের বাড়ি ওখানেই। স্বরচিত একটা একাঙ্ক নাটকে একাই অভিনয় করেছিল। অসাধারন নাটক, আর সে'রকম অভিনয়। আমাদের দলের অনিলদা ওকে approach করে। পিছুটান ছিলনা বলেই বোধয় চলে আসে কলকাতা।

শিশির- এটা দু'বছর আগের ঘটনা?

রিয়া- হ্যা! প্রথম দিকে ওকে কাজে নেওয়া হত না। পেশাদারী নাটকে কাজ করার মত সাবলীল অভিনয় রপ্ত হয়নি তখনো।

শিশির- বেশ, তারপর?

রিয়া- আমাদের দল তখন শরৎচন্দ্রের বিভাস মঞ্চস্থ করবে। আমি বিভাসের চরিত্রে। ভবতোষ ছিল sound আর light এর ব্যবস্থাপনায়। আমাদের প্রথম show academy তে। নাটক শেষে greenroom থেকে বেরোচ্ছি। হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়ায়। একটা গোলাপ নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,


'গোলাপ কেনার পয়সা ছিলনা, তাই guest দের bouquet থেকে চুরি করে নিয়ে এসেছি। এটা আপনার প্রাপ্য। এত ভালো অভিনয়। সত্যি ভাবা যায় না!'

শিশির- বেশ রসিক মানুষ বলা যায়।

রিয়া- রসিক কিনা জানিনা। তবে ওর সারল্যটাই আমার ভালো লাগত।

শিশির- তারপর? অভিনয় জীবন শুরু হল?

রিয়া- হ্যা! বিপাশা নাটকে প্রহরীর চরিত্র দিয়ে শুরু। মুখ্য ভূমিকায় অনিলদা ওকে নিতেন না। বলতেন এখনো ready নয় ভবতোষ। আমিও বলিনি কোনদিন। কিন্তু একটা বন্ধুত্ব যেন আমাদের মধ্যে ক্রমে তৈরী হয়ে উঠছিল।

শিশির- মনের কথা বলেছিলেন?

রিয়া- ও যে কোনদিনও আমায় propose করবেনা বুঝতে পেরেছিলাম। একদিন coffee খেতে খেতে বলেছিলাম, 'তোমায় খুব চেনা লাগে। কি আছে বলতো তোমার চোখে?'
কি উত্তর দিয়েছিল জানেন?


শিশির- না।

রিয়া- বলেছিল ওর চোখে minus power আছে।

শিশির- তা ভালো। তারপর propose করলেন?

রিয়া- একদিন কথায় কথায় প্রসঙ্গটা তুলেছিলাম। তখন জানতে পারলাম ওর প্রেমিকার কথা। বিয়ে প্রায় ঠিক ছিল। এদিকে আমি মনে মনে ভবতোষ কে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। অনেকবার চেষ্টা করে দেখলাম। কিন্তু পারলাম না ফিরে আসতে। সত্যি বলতে কি,

শিশির- কি?

রিয়া- আমি না চাইতাম, ওদের সম্পর্কটা যাতে ভেঙে যায়। তাহলে আমি ওকে পুরোপুরি পাবো। কোন বিষয়ে আমি এত possessive নই। কিন্তু ভবতোষ কে হারিয়ে ফেলার ভয় পেতাম।

শিশির- আপনি সরে আসার চেষ্টা করেন নি?

রিয়া- না। উল্টে আরো ওকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিলাম। ওর টাকার অভাব ছিল। কলকাতায় theater করবে বলে চলে আসে, এদিকে চাল চুলো কিচ্ছু নেই। আমার এক পরিচিত সূত্র ধরে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিলাম। আমার মামার flat টা ফাকাই পরে থাকত। সেখানে ওর একটা থাকার ব্যবস্থা করে দিলাম।

শিশির- ওই trading company আপনার পরিচিত?

রিয়া- আমার এক বন্ধুর সূত্রে পরিচয়। ওখানকার মালিক-এর মেয়ে আর আমি এক college এ পড়তাম।

শিশির- বেশ, তারপর?

রিয়া- সমস্যাগুলো এত সহজে মিটিয়ে দিয়েছিলাম বলে আমায় দুগ্গামা বলে ডাকত।

শিশির- দূর্গা মা?

রিয়া- হ্যা! ভাবুন একবার। আর এদিকে আমি ওকে পাগলের মত ভালোবাসি। যতবার আমায় দূরে ঠেলে দিয়েছে, ততবার আমি নতুন করে প্রেমে পড়েছি। আরো আঁকড়ে ধরেছি ওকে।


শিশির- ভবতোষ প্রতিবাদ না করে, আপনার সুযোগ নিত এইভাবে?

রিয়া- একেবারেই নয়। অনেকবার সুযোগ ছিল ওর কাছে। মামার flat বলে আমি প্রায়ই দেখা করতে যেতাম ওর সাথে। সুযোগ নেওয়ার বদলে বেড়াতে নিয়ে যেত আমায়। কোনদিন চার দেওয়ালের আড়াল পেয়েও আমাকে ছোয়নি।

শিশির- ওর প্রেমিকা আপনাকে নিয়ে আপত্তি তোলেনি?

রিয়া- আপত্তি করলেও কি আমি ছেড়ে দিতাম নাকি? ভবতোষ শুধু আমার।--- কিন্তু ওই মেয়েটির ভাগ্যকে সত্যি হিংসে হয়। এমন একটা মানুষের ভালোবাসা পেয়েও অবহেলা করল।

শিশির- ওদের সম্পর্কটা ভেঙে যাওয়ার পরে নিজের মনের কথা ভবতোষকে বলেছিলেন?

রিয়া- বহুবার। সত্যি বলতে কি, আমি একটু desperate হয়ে পরেছিলাম শেষ দিকে। রাতের পর রাত কথা বলেছি, কেঁদেছি, বুঝিয়েছি। কিন্তু ওর সেই এক কথা। দেখা হলে জোর করার চেষ্টাও করেছি।

শিশির- আপনি এ'রকম করতেন কেন? আপনার কি সত্যি প্রয়োজন ছিল এমন করবার?

রিয়া- আমি ওকে দেখার পর থেকে, ওর সাথে নিজেকে relate করতে পারতাম খুব ভালো।

শিশির- বুঝলাম, তারপর?

রিয়া- আমার রাতে এমনিতেই ঘুম আসেনা ভালো, আর সেই অত্যাচার ওকে করতাম। ভোর হয়ে যেত, তাও phone এ কথা বলে যেতাম। হয়ত আমার জন্যেই কাজে ভুল করে ফেলত। চাকরিটাও হয়ত আমার জন্যেই।.....

শিশির- ওভাবে ভাবছেন কেন? company র internal কোন politics এর কারণেও তো চাকরিটা হারাতে পারেন।

রিয়া- হমম! তা-ও হতে পারে। বড্ড সরল মনের মানুষ। সবাইকে বিশ্বাস করে ফেলত চট করে।

শিশির- আপনি ঘুমের সমস্যাটার জন্যে ওষুধ খেতেন?

রিয়া- হ্যা! কিন্তু বড্ড কড়া ওষুধ। সংলাপ ভুলে যেতাম। মাথা ঘুরত খুব। তাই বন্ধ করে দিয়েছি।

শিশির- আর কোন সমস্যার কারণে রাতে ঘুম আসতে চাইত না কি? পারিবারিক বা কাজের চাপে?

রিয়া- আমি আসলে সবার থেকেই একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছিলাম। আমাদের দলে নতুন একটা মেয়ে এসেছে। এখন নায়িকার পার্টগুলো তাকেই দেওয়া হয়। আমি তাই বেরিয়ে এসেছিলাম।

শিশির- সে-কি? নাটক ছেড়ে দিলেন?

রিয়া- ওদের ব্যবহার আমার ভালো লাগত না। পুরোনো হয়ে গেছিলাম বলে বোধয় আমার অস্তিত্বটা ফিকে হয়ে আসছিলো।

শিশির- অন্য কোন দল থেকে offer পাননি?

রিয়া- পেয়েছিলাম, কিন্তু করিনি।

শিশির- কেন?

রিয়া- আমি তো আজকাল কার মেয়েদের মত approachable নই। পোষাক ও back dated.

শিশির- বুঝলাম। আচ্ছা! ভবতোষের আগে আপনার জীবনে আর কেউ আসেনি?


রিয়া- এসেছিল, কিন্তু পাত্তা পায়নি। তারা এসেছিল আমার শরীরটার জন্যে। ভবতোষ প্রথম আমার সত্ত্বাটাকে চিনতে পেরেছিল।

শিশির- সবই বুঝলাম। আচ্ছা, আপনার বাড়ির লোককে একটু খবর দিয়ে দিন তাহলে। নাহলে তাঁরা আবার tension করবেন।

রিয়া- কেন? বাড়ির লোককে কেন?

শিশির- ভবতোষ বাবুর তো ঘুম এখনো ভাঙেনি। তার ওপর আবার কিছু formalities আছে। ওনার বাড়ির লোক কেউ নেই যখন আপনাকেই একটু থাকতে হবে। সেই কারণেই আপনার বাড়িতে খবর দিতে বলা।

রিয়া- আমি ওর ঘরে থাকতে পারবো?

শিশির- নিশ্চই, কেন না?

রিয়া- কেউ কিছু বলবে না তো?

শিশির- বেশ! আপনি এখানে একটু অপেক্ষা করুন তাহলে? আমি ওপরে গিয়ে একজন sister কে পাঠিয়ে দিচ্ছি। সে আপনার সঙ্গে সঙ্গেই থাকবে, তাহলে কেউ কিছু বলবে না।

রিয়া- ঠিক আছে।

শিশির- আপনি বাড়িতে একটা খবর দিয়ে দিন?

রিয়া- ও কিছু হবে না। আমার বাড়িতে এখন কেউ নেই। সবাই কাজে ব্যস্ত। আর আমার বাবা-মা tension করবে না।

শিশির- বেশ, আপনি বসুন তাহলে। আমি sister কে পাঠিয়ে দিচ্ছি।



                                                                       //শেষ টুকু//

"তুমি নাকি schizophrenic একটা patient পেয়েছ ?" ঘরে ঢুকেই প্রশ্ন করেন Dr. সরকার।

"Yes sir." নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় শিশির। তারপর case file টা এগিয়ে দেয়।

"Patient কোথায় আছে?" file নিয়ে ward এর দিকে রওনা দেন Dr. সরকার। শিশির পিছু নেয়।

"Bed নম্বর ১০১৪ তে স্যার।"

"কি করে বুঝলে schizophrenia?"

"Patient এর disoriented কথাবার্তা। And a story about life. একই সাথে noticeable OCD complex ছিল।" পাশে হাটতে হাটতে case history বলতে শুরু করে শিশির।

"তাতে schizophrenic বুঝলে কি করে?"


"আপনি স্যার একবার patient কে দেখুন। আমি তারপর history টা বলছি।"

১০১৪ ঘরে এসে ঢোকেন ড: সরকার আর শিশির। Bed এর ওপর এক পাশ ফিরে প্রায় কিনারা দিয়ে কোনমতে কষ্ট করে শুয়ে আছে রিয়া। কাছে গিয়ে বোঝা গেল, সে ঘুমিয়ে আছে নিশ্চিন্তে। আজ অনেকদিনের ইচ্ছে পূরণ হয়েছে তার। নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে জড়িয়ে ধরে, তার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।


শিশির বলতে শুরু করে,
"Patient এর নাম রিয়া চৌধুরী, বয়স ৩০ বছর। She was claiming যে ওর সাথে একজন patient আছে, যার নাম ভবতোষ। Sister রা বুঝতে পারছিলনা বলে, একটা বচসা শুরু হয়। আমায় ডেকে পাঠানো হলে, গিয়ে বুঝতে পারি what she was dealing with. একটা ফাঁকা wheelchair এ  রিয়ার patient কে বসিয়ে আমি তখন ward এর দিকে নিয়ে যাই, আর রিয়া কে OPD তে গিয়ে অপেক্ষা করতে বলি।

মোটামুটি আধা ঘন্টা নিজেকে prepare করে আমি OPD তে যাই। Her conversation and emotions are recorded on camera sir."

"Patientএর সাথে আর কেউ আসেনি?"

"না স্যার। কিন্তু কথায় কথায় আমি জানতে পারি ২টো information. প্রথম কথা ওর imaginary character যে অফিসে কাজ করত, সেখানকার নাম, আর নাটকের দলের নাম। Patient কে bed এ পৌঁছে দেওয়ার পরে আমি net surf করে ওখানকার phone নম্বর জোগাড় করি। B K Traders এর accounts section এ কাজ করত রিয়া। মাস দুয়েক আগে থেকে ওর কাজে ভুল শুরু হয়। Office এর MD, Mr. Binod Kherra এর সাথে আমার কথা হয়। রিয়াকে অসুস্থতার কারণেই ছুটি দেওয়া হয়েছে, dismiss করা হয়নি। অফিসে শুধু হিসেবে ভুল করাই নয়। অনেকের against এ complain letter ও জমা করতে শুরু করেছিল রিয়া। কিন্তু ওর complain গুলোর কোন ভিত্তিই ছিল না, কারণ যে যে নাম complain এ  জমা পড়ত; সেরকম নামে কেউ office এ কোনকালেই কাজ করেনি। নিজের struggle গুলি রিয়া ভবতোষের চরিত্রের ওপর হচ্ছে বলে কল্পনা করতে শুরু করেছিল।


এরপর আসি নাটকের কথায়। বৈকুন্ঠ নামে যে নাটকের দলের কথা রিয়া বলেছে, সেটা আদৌ exist করে না। কিন্তু রিয়া সত্যি নাটকে ছিল। তা-ও বছর দু'এক আগে সব ছেড়ে বেরিয়ে আসে। বৈঠকী বলে মুর্শিদাবাদের একটা নাটকের দলে সে কাজ করত। মুর্শিদাবাদের হলেও, এই দলটার office কলকাতার চৌরঙ্গী পাড়ায়।
ঐ দলের মালিক অখিল বাবু রিয়ার ঘটনা কিছু বলেন। মালদায় একটা show করে আসার পর থেকে রিয়া অমনোযোগী হয়ে পরে। সংলাপ বলার মাঝেই হঠাৎ থেমে গিয়ে স্টেজ-এর এক দিকে তাকিয়ে থাকত। অভিব্যক্তি তেও পরিবর্তন চলে আসত। তখন মুখ্য চরিত্র থেকে সরিয়ে, রিয়া কে ছোট-খাটো চরিত্র দেওয়া শুরু হয়। রিয়া সেটাও negative ভাবে নিয়ে দল ছেড়ে দেয়। তবে দলের কিছু সদস্য রিয়াকে নিয়ে একজন psychiatrist কে দেখায়। দল থেকে পুরোপুরি যোগাযোগ বাদ দিয়ে ফেলায় আর কোন খবর অখিলবাবু জানেন না।


রিয়ার বন্ধুস্থানীয় কিছু সদস্যের সাথে কথা বলে জানতে পারি আরো কিছুটা history. রিয়ার বাবা suicide করেছিলেন। তারপর থেকে রিয়া নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছিল সবার থেকে। সমস্যাগুলো প্রকট হয় অনিন্দ নামে, দলেই কাজ করত, একটি ছেলের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে। একটা কথা রটে যায় দলে, যে রিয়া নাকি সেই ছেলেটিকে পছন্দ করত। যদিও রিয়া সে কথা স্বীকার করেনি কোনদিন।


বাবা মারা যাওয়ার পরে, রিয়া তার মামা বাড়িতে চলে আসে। একটা apartment এর দু'টো flat ছিল রিয়ার মামার। তারই একটা ছেড়ে দেন রিয়া কে। দলের একটি মেয়ে রিয়ার খুব কাছের বন্ধু ছিল। সে চেনে রিয়াদের বাড়ি। আপাতত তাকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছি, যাতে রিয়ার relatives কেউ আসেন।

আমার session এর conversation শুনে key points গুলো note down করে রেখেছি case file এ। আর তার থেকে যে conclusion টা আমি পেয়েছি, সেটা হল manic depression তো ছিলই। তার সাথে response গুলো schizophrenic, including sub-types. Disorganized আর paranoid.



ফাঁকা bed এর কিনারা ঘেসে শুয়ে থাকা রিয়ার মুখে একটা স্নিগ্ধ হাসি মাখা। এইটুকুই শুধু চেয়েছিল সে। একটা অবলম্বন, একটা আশ্রয়। একাকিত্বের সীমায় এসে, নিজের মধ্যেই কল্পনায় সে বেছে নিয়েছিল একজন কে। নিজের পছন্দের একটা নাম দিয়েছিল তার। কিন্তু মনের কষ্টগুলোকে সেই চরিত্রে সাজিয়ে তৈরী করে নিয়েছিল tragedy. আর সেখান থেকেই একটা repulsion.

আজ হয়ত কিছুটা মানসিক বিপর্যগুলো থেকে দূরে আছে সে। তাই নিজেরই কল্পনায় নিজেই নিজের সান্নিধ্যকে নিয়ে ঘুমের দেশে পারি দিয়েছে। এখানে এই চার দেওয়ালের মাঝে ভবতোষ শুধুই তার একার। ফাঁকা খাটের এক কোণ দিয়ে একটু জায়গা নিয়ে সে শুয়ে আছে ভবতোষের পাশে।
















গল্পের সব চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবে কারো সাথে কোন ঘটনার মিল সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালীয়। 

সহকারী: আগন্তুক। 
 কৃতজ্ঞতা স্বীকার: Google images .











মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৭

Movie Review La La Land

A day With her, the Space theater, Monorail & La La Land...

Arka Bhattacharya,


                                               (1)
Engulfed by the tunes, Mia and her husband entered the pub. Simple notes of Jazz combined with the saxophone and Piano gave the timbre to the ambiance. A rhythm with casual rolls of drum in a little higher tempo and arpeggios through the chords gave the chill to feel your shoulders move. After stepping in through the doors, Mia stopped for a while in front of the neon lit sign. Unsettled with the sudden rush of memories she kept staring at the sign. A known face and good times from her past, poured in her mind. Going through the posters and mementos hanging by the wall she was considering those missing years, she predicted well before. 


"Then the known face appeared on the stage as rumble of applause broke the silence"
-- From a Drama.

Sitting next to her husband Mia saw the man on stage. Those years in between her life changed everything except this man and the feelings for him. She was lost with the flow, and those strings were torn, but the mind retained this face in the library of her good memories. 

"Their eyes met, and he drew a smile on his lips."

'Welcome to Seb's'


Key notes from A-minor touched the bars of Piano and Mia felt a pull from her past and moved through her thoughts five years back.

                                                                               (2)
"It's not that easy to wipe out my fears" Hia took a sip of coffee and framed those words with a numb tune. 

Abir reconsidered the facts and nodded. The street light portrayed her face with lights and shades depicting the worry that invaded her mind. He was looking for words to give a reply, but yield in only with a smile. Truth is very rude and defeat is the only choice. A silence prevailed between their conversation.


"It's too sunny right? Uff!!"

Abir was dumbfounded with those words from Hia. Following her eyes he found the reason of such comment. Near the entry gate of Monorail a teenage kid was wearing sunglass and posing for a selfie under the street light.

This girl is full of surprises. One can never predict her thoughts. Sometimes emotional with bitter truth and within few moments she can shift to more lighter mode and can crack jokes like no one else could. Abir just curved a smile and put his lips shut due to lack of confidence on his chosen words. He was considering the difference between their first movie show and this show.

                                                                        (3)
"Are you busy today?" coming out of the movie theater Hia asked. 

"I've kept my slot for you today"

"Actually I have some extra time to spend." Hia mumbled.

"Ok, lets go to CCD, couple of blocks from here." Abir searched for nearest CCD on google and showed her the location.

"Lets walk then?"

Both came to the service road next to HiLand Park. Ongoing project of Metro occupied the main road, so the service road was little crowded than usual. After few minutes Hia shared the reason for such leisure time. They laughed and giggled and shared thoughts regarding the movie they have seen together. 

 The full moon was staring at them with a dim face. Street lights were more noisy than her calm reflection. Both were enjoying their company when suddenly Hia leaped over a pothole filled with water. Somewhere near the road, a pipeline may have broke, and the spilled water was flowing across. Abir found a glimpse of the moon on the stagnant water and gave a look to the sky. 

"Just like a pan cake right?" Hia made the comment and moved forward to avoid the crowd.  

Abir tried to figure out the moon and the pan cake comparison. Defeated again, he moved forward.

"Hey look, there's a plane." Hia walked in a lane with lesser crowd and pointed towards the western sky.

The ongoing construction of Metro station blocked the sky from the place where Abir was standing. Hia moved towards him and pointed to the sky. The flying giant appeared with blinking lights on its wings and tail. The slow acceleration of the plane and the moon behind it made the evening sky a catchy landscape. 

"Am waiting for that day to feel the thrill of flying." Abir muttered.

"Don't tell me you never took a flight?" Hia started moving.

"Both me and my cell phone, never experienced the flight mode." Abir chuckled. And both started laughing. 

                                                                            (4)
  

The ongoing shows were listed on screen above the ticket counter. Hia was excited about the movie La La Land. Abir was thinking about something else, but with out any argument he decided to go with Hia's decision. Her selection about new movies were always overwhelming ones and Abir enjoyed them the most.

This morning was not like the usual one. Hia was upset with some issues and was engaged in thoughts. When things come on your head, you start to realize its importance and impact on life. Many times life gives this many situations to go through it. Hia was entrapped in such a situation that has no way out. On the contrast Abir was a fun loving person simplifying all categories of trouble in life comparing with stock market. 

Leading a life like a cheapskate Abir was fond of earning. Hia came as a break in that life and changed the thoughts of Abir. She shared her dreams with Abir and Abir felt the urge to re-write his life story in a different manner. 

Waiting in the KFC stall Hia was lost in her thoughts. When your company is roaming in the land of thoughts better not to interrupt and find a new job to utilize your time. Abir found his new job to follow the token numbers coming on the screen at the counter of KFC. 


"There is your number" Hia spoke as the number 185 came on screen.

Abir was following those numbers since last 10 minutes with full concentration and confidence. But unfortunately forgot his own token number that was blinking on the screen. The more you want to avoid stupid thoughts, the more you will find it. Abir was lost in his thoughts about how to pull out Hia's worries and bring a smile on her face.

Sipping the Coke Abir spoke, "You better laugh at your fate and live your life."

"And that's going to solve my problems?" The reaction was harsh but true enough. 

Re-framing his words Abir mumbled "But this may add some salt to your tasteless food."

Her worries on her face turned into a little smile. ( A fake one)


                                                                   (6)



As the lights became dim and theater grew darker a simple expression of excitement with "Yeyyy" came from the seat next to Abir. It was Hia whispering the gripping features of the opening scene from La La Land. And the transitions projected on screen slowly immersed the mind of Abir into it. 

La La Land is not just a mere comedy drama like others but a script from our day to day life with added cinematic creativity.  

The script followed a little part of Abir's life through it. Like the first meeting of Mia-Sebastian at the pool party. Abir and Bristi's first day at college was same, the tricky one. Then the concert, where Sebastian was playing his keyboard and Mia as audience, reminded Abir his first college fest. He was playing his guitar with the suspended strumming on 'A' scale for the song "Tum se hi din hota hai, surmayi shaam aati hai... Tum se hi, tum se hi" from the movie "Jab we met". Bristi as audience was smiling at a corner. Their eyes met and emotions poured in through their smiles.  

As both Mia and Sebastian came into relation, the car scene where Sebastian came to pick up Mia for a date. Abir was pulled back through times when he was used to wait in front of Girls Hostel with his car for Bristi and the Security guards of GH used to reproach him. The film La La Land was so appealing that Abir forgot his monotonous present life for a while. 

The relationship ended as Mia & Sebastian broke their harmony. Bristi got a chance for better life, where as Abir got involved more into making money. A relation started as a simple friendship, found a crack to link two hearts, and poured in the sympathy, closeness and love as the sweetest flavor of the dish. Abir felt, La La Land script was nothing but a simple frame after frame transition from his own life. But the dramatic end was not similar, cause life is not that easy to figure out. Since break up, both Abir and Bristi never met. 


The lights in the theater came into life. Abir saw those dew drops at the corner of her eyes. May be Hia was also moving through those frames as the movie projected on the screen. Holding back his concerns about the tears Abir gave a smile and left his seat. Hia followed and wiped her tears.

                                                                      (7)

Walking by the pavements of newly decorated city Abir was humming with the tunes,
"Some other girl and guy,
 would love this swirling sky. 
But there's only you and I, 
And we've got; no shot...
This could never be ..... hmm hmm hmm"
Loosing the track of lyrics Abir surrendered into mumbling 'Hmm'

"And there's not a spark in sight,
What a, waste of a lovely night"
Rest of the lyrics came as a correction from his companion. 

The day ended with a tune from the movie and both ended their accompany bidding a simple goodbye to each other.

                                                                            (8)




Lost in thoughts, Abir came to his dearest riverside. Glowing lights elated the pavements of the river bank with a delighted hymn. Couples were here and there sitting at the corners and sharing their good times. Crossing them Abir found a suitable corner and securing a platform to seat he lit a cigarette. It was required to breathe out the failures and thinking about a fitting climax. 

Every puff of smoke showed the picture one after another from his life. He was recalling Bristi and then Hia. Two different souls with different life. But the image prolonged in his mind was the shining tear drops and doleful smile of Hia. He spend past 4 hours with her, but was unable to realize her feelings and to console her. While bidding goodnight, the smile Hia drew on her lips surfaced her loneliness in the fight. Abir saw his inability to provide the support she needed the most.



Unmindful to the sky and the landscape, Abir tossed the burning filter nearby. The hissing sound produced by the water and fire caught his attention. The coincidence was so astounding that Abir stood by the tree for a while gazing at the reflection of Howrah bridge. The purple & pink hue from it reflecting on the river produced the same impact of Set organized in the movie he just watched today.

The gleaming stars above the capped portion of city lights, Abir felt the thrill he shared today with Hia at the Space theater. 

The phone call from home breached the bewildered moment of Abir. He was staggered when he saw the time. It was really late. Time flew just like a puff of smoke. Pulling back himself from his thoughts, he came to the pavement. Abir heard himself humming with the lyrics, again from the movie La La Land.....

"City of stars,
Are you shining just for me.

City of stars,
There's so much that I can't see.

Who knew,
Is this the start of something wonderful....

Or one more dream,
That I can not make true....




                                                      ------------ The End ------------















(C) Google Images. For La La Land Movie Images and Howrah bridge at night


Disclaimer:
Names, characters, events and incidents are products of my imagination and drew as a fictitious manner. Any resemblance to actual persons or events is completely unintentional and coincidental.