শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

হয়ত অন্যরকম  


                                                                  //১//
আজ প্রায় তিন মাস হ'তে চলেছে, এদিকে ভবতোষের মানসিক অবস্থার কোন উন্নতিই নেই। একই কাজ বারবার ভুল করতে থাকায় Office এ সমস্যাগুলো আরো জটিল হয়ে দাঁড়ায়। শিব-শঙ্কর company এর tender notice বেরিয়েছে প্রায় ৪ মাসের ওপর। এক মাস গেছে year ending এর ঝামেলা কাটাতে। তারপর থেকে ভবতোষ quotation  এখনো বানিয়ে উঠতে পারেনি। B K Traders এর মালিক বিপিন খেরা নিজের ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে অবশেষে তলব করেন ভবতোষকে।

"একটা কাজ যদি তোমার দ্বারা হয়। শিব-শঙ্করের quotation টা সামান্য correction করতে সারা দিন কাবার করে দিলে?"

টেবিলের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিল ভবতোষ। চোখ ছিল টেবিলে রাখা লাফিং বুদ্ধার দিকে। কত সমস্যা চারিদিকে, এদিকে মোটা ভুঁড়ি নিয়ে দিব্য বসে বসে হাসছে লোকটা।

অল্পেতে খুশি হবে, দামোদর শেঠ কি?.........

'দিন কাবার? খাবার দাবার?........ দাবা!
দাবার চাল।
হায় কি হাল!

মা-গো! বাঁচাও!
জোড়ে চেঁচাও।........... চিৎকার?
আকার, বিকার, নিরাকার,............ স্নিকার!
উফফ কি খেতে!.... চাইছে পেতে!
পেতে! পেটে?
পেটে খেলে, পিঠে সয়?

হে হে!!
ভোলা পাগলা কি যে কয়।'

"অমন সং এর মতন দাঁড়িয়ে কি বিড়বিড় করছ ? মাথায় গেল; যা বলছি?"

'গেল গেল! গেল......
সবাই তো গেল,
কেউ ফিরে এলো?
       না! ফিরবে বা কেন?
সমাপয়েৎ মধুরেণ।
ধুস! ভুলভাল।
দিক লোকে গাল।

"শালা! কুত্তার বাচ্চা ! আবে ওয়ে গা**!! আমি যা বলছি কান দিয়ে ঘিলুতে যাচ্ছে?? এই পরিতোষ! মারো তো শালার মাথায় এক চাটি।"

চটাস!!

"ছন্দপতন!" ভবতোষ মালিকের দিকে তাকায়।

"যে আজ্ঞে মহারাজ!
     হয়ে যাবে কাজ।
দু'টো টাকা পেলে,
পেট ভরে খেলে।
হ'বে না-তো ভুল,
শাক-শেষ-ফুল।

হে হে হে!"

চটাস!

দায়িত্ব নিয়ে পরিতোষ আবার চর মারে ভবতোষের মাথায়।

"তুই স্যারকে নিয়ে ছড়া কাটছিস বোক**! তোর কি সব screw ঢিলা হয়ে গেছে নাকি বে?"

"হুম! হুম!
      গুম সুম!
ধাম ধুম! নিষ্চুপ। ............. শশশশষ !!!!!

ওই দেখ করা
in our পাড়া।
বাঁশি নিয়ে যায় ওষ্ঠাধরে!
ময়লার গাড়ি হাতে করে!"

"Get out! Just বেড়িয়ে যাও আমার সামনে থেকে।" হুঙ্কার দিয়ে ওঠেন MD বিপিন খেরা। "ওর dismiss letter ready কর পরিতোষ। ওকে আর আমাদের প্রয়োজন নেই।"



                                                                  //২//
"কি কান্ড বলুন দেখি! অমন একটা promising career! তার শেষে কি-না এই পরিণতি?"

"তাতে আপনার উদ্বেগের কারণ আছে কি?" File এর পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বলে পরিতোষ।

"ভালোই বললেন সেন বাবু। ছেলেটা আসার পর থেকে আমাদের company এর মুনাফার অঙ্কটা দেখেছেন?"

"তার জন্যে মাথায় নিয়ে নাচতে হবে নাকি?"

কথাটার তিক্ততা সাময়িক ভাবে চুপ করিয়ে দেয় officer এর accounts dept. এর বড়বাবুকে। খানিক চুপ করে থেকে নিজের কথাগুলি একটু সাজিয়ে নেন।

"তা অবশ্য ঠিক বলেছেন। সে তার কর্তব্য পালন করেছে। কোম্পানির খারাপ সময়ে দিন-রাত্র পরিশ্রম করে কাজ করেছে। কোম্পানিকে সাহায্য করেছে। কিন্তু তাই বলে, তার খারাপ সময়ে company র কিই বা দায় থাকতে পারে!"

"আপনার কথাগুলো বড় বিরক্তিকর বুঝতে পারছেন নিশ্চই?"

"আলবাত! আজ বিশ বছর এই আপিসে চাকরি করছি। মালিকের মর্জি বুঝিনা, তা বললে চলে?"

"আপনার কি চাই পরিষ্কার করেই বলুন না!"

"ভবতোষ salary পেত পনেরো হাজার টাকা। বোনাস আর Incentive মিলিয়ে সেটা সতেরো বা আঠারো হত।"

"হমম! তো?"

"এ'মাসে তার সব টাকা কেটে নেওয়াটা কি খুব যুক্তি সঙ্গত ছিল?"

"বাহ্! তার জন্যে company এত টাকা loss খেল! সেটার হিসেব হবে না?"

"Tender তো miss যায়নি? সে তো সব কাজ গুছিয়ে দিয়েই গেছে। company loss করেছে তো খিদিরপুরে অনেক মাল চুরি হয়ে যাওয়ায়। ভবতোষকে সেই কারণে দায়ী করা যায় কি?"

"যে সামান্য টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে, তাতে এমন কিছু যাবে আসবেনা।" পরিতোষ আবার ফাইল নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করে।"

"চেকটা এখনো আমার কাছেই আছে সেন বাবু। সতেরোশো পঞ্চাশ টাকার চেকে, আপনার সই রয়েছে।"

পরিতোষ চুপ করে নিজের কাজ দেখতে থাকে।

"Accounts এর অনেক গোলমাল MDর চোখ এড়িয়ে যায় সেন বাবু। কিন্তু ভবতোষ সেই গন্ডগোল শুধরে দিয়েছিল। তার মাইনের কেটে নেওয়া টাকা যে আদৌ account এ আসেনি, সেটা নিশ্চই আপনিও জানেন।"

"নিজের এক্তিয়ার ভুলে যাবেন না বড়বাবু। কি বলতে চান কি? ওই টাকা আমি নিয়েছি?"

"মোটেও সে কথা বলিনি, আমি বলছিলাম আমার dismiss letter টা দেওয়ার কথা। আপনি তো এ'বিষয়ে পোক্ত। তাই আর কি। ..."

"আপনি MD র সাথে কথা বলে দেখুন। আমি কিছু জানিনা।" একটু থেমে পরিতোষ আবার বলে, "একটা কথা কি জানেনতো বড়বাবু? ব্যবসায় আবেগ চলে না।"

মাথা নিচু করে পরিতোষের ঘর থেকে বেরিয়ে যান বড়বাবু।





                                                               //৩//
ঘরটা বড্ড স্যাতস্যাতে। আলো বাতাস ঢোকে না। একটাই জালনা, তা-ও আবার বন্ধ। এক কোণে মেঝেতে একটা গদি পাতা। সেখানেই শুয়েছিল ভবতোষ। জালনার পর্দা সরিয়ে পাল্লাটা খোলার চেষ্টা করে রিয়া। অনেক চেষ্টা করেও সুবিধা করতে না পেরে ভবতোষের পাশে গিয়ে বসে।



মাথার ঘামে ভিজে জবজবে হয়ে গেছে বালিশ টা। চুলগুলি মাথার সাথে লেপে গেছে যেন। ভবতোষের কপালে হাত রাখে রিয়া। হাতের ছোয়া পেয়ে চোখ মেলে তাকায় ভবতোষ।

রিয়া- শরীর কেমন আছে এখন?

ভবতোষ- না কাশী বাঈ।  এই শরীর আমি আর রাখব না। শেষ করে দেব অগ্নিশিখায়। লেলীহান আগুনের মাঝে নীরব নিদ্রায় ঘুমিয়ে। একটু একটু করে বিদায় নেব ধোয়ার কুন্ডলি হয়ে।

রিয়া- আজ জ্বর আসেনি তো আর?

ভবতোষ- জ্বর তো আমায় ভুলে গেছে কাশী বাঈ।  শুধু কাশি আমায় bye বলেনি এখনো।

শরীর খারাপ হলেও হেয়ালীগুলো একই আছে ভবতোষের। নিজের মনেই একটু হেসে ফেলে রিয়া।

রিয়া- তোমার ওষুধগুলো খেয়েছ?

ভবতোষ-  টাকা নেই, ওষুধ নেই।
               নেই স্রোত সাগরে। ...
               তুমি-আমি কেউ নেই,
              ঘুম থেকে জাগোরে। ......

রিয়া- বুঝেছি। Prescription কোথায় আছে বল। নিয়ে আসছি আমি।


ভবতোষ- করুণা? তুমিও আমায় করুণা করছ নূরজাহান? জানি পলাশীর যুদ্ধে আমি হেরে গেছি। শিরাজের পাশে থেকে সমান ভাবে ঠেকাতে পারিনি ওদের। বন্দী হলাম Clive এর সেনাবাহিনীর হাতে। প্রাণটা করুণা হিসেবে ভিক্ষে দিল। কিন্তু তুমিও?

রিয়া- আমি করুণা  করছিনা। তোমার prescription গুলি কোথায় আছে বলবে?

ভবতোষ- কি হবে ওষুধ খেয়ে?
                কিই বা হবে এই তরী বেয়ে!
                ক্লান্ত এ' জীবন স্রোতে ভেসে।
                লাভ কি আর মিথ্যে হেসে।


রিয়া- Office থেকে phone করেছিল?

ভবতোষ- ওরা ভুলে গেছে আমায়। তুমিও ভুলে  যাবে একদিন।

রিয়া- এ'রকম করো কেন? কি হয়েছে একটু বলোনা বাবু? তুমি এরকম করলে আমার ভালো লাগে, বলো? তোমার কি আজ মনটা একটু বেশিই খারাপ? খিদে পেয়েছে? কিছু খাবে? আমি একটু ওমলেট আর toast বানিয়ে দি?

ভবতোষ- খাবো কি রে? টাকা কই? অনেক টাকা লাগবে আমার। অনেক টাকা।

রিয়া- তোমায় অনেকবার বলেছিনা, আমার সামনে টাকা টাকা বলবে না!

ভবতোষ- জয় মা! জয় মা!
                শক্তি দে মা। আজই তোর চরণে বলি দেব।
                 রক্ত চাস মা! রক্ত?

রিয়া- আবার শুরু করলে এরকম?

ঘরের এক কোণে গিয়ে দাঁড়ায় রিয়া। ভবতোষের মানসিক অবস্থার কোন উন্নতিই নেই। আজ দু'সপ্তাহ হ'তে চলল। কিন্তু এখনো কোন পরিবর্তন নেই। চাকরি চলে যাওয়ার  পর সমস্যাটা যেন আরো বেড়েছে। এখন আর স্বাভাবিক কথা বলতেই চায় না। ডাক্তার দেখানো টা জরুরী বুঝে, আলমারি থেকে ভবতোষের জামা-কাপড় নিতে যায় রিয়া।


                                                                           //৪//

Dr. অমলেন্দু সরকার আজ বেলা করে আসবেন clinic এ। কলকাতার অন্যতম Psychiatrist. Dr. সরকারের নামটা রিয়ার চেনা। কেউ একজন suggest করেছিল বোধয়। তাই এখানেই নিয়ে আসার কথা ভাবে প্রথমে। Dr সরকার অন্য hospital এ on call গেছেন বলে, তাঁর এক subordinate প্রথমে ভবতোষকে দেখে। তারপর রিয়াকে waiting room এ বসতে বলে ভবতোষকে নিয়ে ward এ চলে যায়। প্রায় আধঘন্টা পর ফিরে এসে  রিয়া কে নিজের বসার ঘরে ডেকে পাঠায়।

 "নমস্কার। আসুন। বসুন।" রিয়া ঘরে ঢুকতেই একটা চেয়ার এগিয়ে দেন, তারপর নিজের পরিচয় দেন।
"আমি Dr. শিশির চ্যাটার্জি। Dr. সরকারের ছাত্র।"

হিয়া- নমস্কার। ও কেমন আছে এখন?

শিশির- Patient কি আপনার স্বামী?

হিয়া- না। আমরা বন্ধু।

শিশির- আচ্ছা! আপনাদের আলাপ কোথায়?

হিয়া- একসাথে theater করি। কিন্তু ও কেমন আছে বলবেন? এ'সব প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?

শিশির- আপাতত কিছু তো বলতে পারছিনা। বুঝতেই পারছেন। এ'সব রুগীকে প্রথমে ঘুমের ওষুধ দিতে হয় শান্ত করবার জন্যে। ওনাকেও ঘুম পারিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু ওনার history টা একটু জানলে কাজে সুবিধা হয় আরকি।

হিয়া- আচ্ছা! জিজ্ঞেস করুন। যতটা সম্ভব সাহায্য করব।

শিশির- কতদিন হ'ল চেনেন ভবতোষবাবু কে?

হিয়া- দু'বছর।

শিশির- প্রথম থেকেই কি এ'রকম ছিলেন? নাকি হঠাৎ?

হিয়া- গত বছর ওর প্রেমিকা অন্য একটি ছেলের সাথে বিয়ে করে নেয়। তারপর থেকেই একটু একটু পরিবর্তন আসছিল।কিন্তু চাকরি চলে যাওয়ার পরে সব কিছু বদলে যায়।

শিশির- দেখুন Miss ?

রিয়া- আমার নাম রিয়া।

শিশির- Miss রিয়া। দেখুন, এ'সব case এ প্রথম যেটা প্রয়োজন সেটা হ'ল পারিবারিক কেউ। ওনার মা-বাবা কোথায় থাকেন?

রিয়া- ওর কেউ নেই। এক দাদা আছে, কিন্তু যোগাযোগ রাখে না। আর বাকি আত্মীয়দের সাথে ওর সদ্ভাব নেই। সম্পত্তি বিষয়ে কোন পারিবারিক গন্ডগোলের পর থেকে, ও একাই আছে।

শিশির- উনি যে অফিসে চাকরি করতেন, আপনি চেনেন?

রিয়া- B K Trading House এ। ডালহৌসিতে।


শিশির- চাকরিটা কেন গেল, জানেন?

রিয়া- অত detail এ তো জানিনা। তবে একটা হিসেবের গোলমাল হয়েছিল। সেখান থেকেই।....

শিশির- একবার ওনার অফিসে গেলে ভালো হ'ত।

রিয়া- যাবেন? আমি চিনি অফিসটা। গিয়ে আচ্ছা করে কথা শুনিয়ে আসবো।  আজকে ওদের জন্যে আমার।....

শিশির- আপনি উত্তেজিত হবেন না। Patient তো ভালোই আছেন। একটু যা সমস্যা সেটা তো সাময়িক ব্যাপার।

রিয়া- ভালো হয়ে যাবে তো?

শিশির- নিশ্চই। আচ্ছা প্রথম আলাপের পর থেকে ঘটনাগুলি বলা যাবে? ব্যক্তিগত কিছু না বললেও হবে।

রিয়া- আমাদের theater group এর একটা show ছিল মালদায়। একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতা। ভবতোষের বাড়ি ওখানেই। স্বরচিত একটা একাঙ্ক নাটকে একাই অভিনয় করেছিল। অসাধারন নাটক, আর সে'রকম অভিনয়। আমাদের দলের অনিলদা ওকে approach করে। পিছুটান ছিলনা বলেই বোধয় চলে আসে কলকাতা।

শিশির- এটা দু'বছর আগের ঘটনা?

রিয়া- হ্যা! প্রথম দিকে ওকে কাজে নেওয়া হত না। পেশাদারী নাটকে কাজ করার মত সাবলীল অভিনয় রপ্ত হয়নি তখনো।

শিশির- বেশ, তারপর?

রিয়া- আমাদের দল তখন শরৎচন্দ্রের বিভাস মঞ্চস্থ করবে। আমি বিভাসের চরিত্রে। ভবতোষ ছিল sound আর light এর ব্যবস্থাপনায়। আমাদের প্রথম show academy তে। নাটক শেষে greenroom থেকে বেরোচ্ছি। হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়ায়। একটা গোলাপ নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,


'গোলাপ কেনার পয়সা ছিলনা, তাই guest দের bouquet থেকে চুরি করে নিয়ে এসেছি। এটা আপনার প্রাপ্য। এত ভালো অভিনয়। সত্যি ভাবা যায় না!'

শিশির- বেশ রসিক মানুষ বলা যায়।

রিয়া- রসিক কিনা জানিনা। তবে ওর সারল্যটাই আমার ভালো লাগত।

শিশির- তারপর? অভিনয় জীবন শুরু হল?

রিয়া- হ্যা! বিপাশা নাটকে প্রহরীর চরিত্র দিয়ে শুরু। মুখ্য ভূমিকায় অনিলদা ওকে নিতেন না। বলতেন এখনো ready নয় ভবতোষ। আমিও বলিনি কোনদিন। কিন্তু একটা বন্ধুত্ব যেন আমাদের মধ্যে ক্রমে তৈরী হয়ে উঠছিল।

শিশির- মনের কথা বলেছিলেন?

রিয়া- ও যে কোনদিনও আমায় propose করবেনা বুঝতে পেরেছিলাম। একদিন coffee খেতে খেতে বলেছিলাম, 'তোমায় খুব চেনা লাগে। কি আছে বলতো তোমার চোখে?'
কি উত্তর দিয়েছিল জানেন?


শিশির- না।

রিয়া- বলেছিল ওর চোখে minus power আছে।

শিশির- তা ভালো। তারপর propose করলেন?

রিয়া- একদিন কথায় কথায় প্রসঙ্গটা তুলেছিলাম। তখন জানতে পারলাম ওর প্রেমিকার কথা। বিয়ে প্রায় ঠিক ছিল। এদিকে আমি মনে মনে ভবতোষ কে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। অনেকবার চেষ্টা করে দেখলাম। কিন্তু পারলাম না ফিরে আসতে। সত্যি বলতে কি,

শিশির- কি?

রিয়া- আমি না চাইতাম, ওদের সম্পর্কটা যাতে ভেঙে যায়। তাহলে আমি ওকে পুরোপুরি পাবো। কোন বিষয়ে আমি এত possessive নই। কিন্তু ভবতোষ কে হারিয়ে ফেলার ভয় পেতাম।

শিশির- আপনি সরে আসার চেষ্টা করেন নি?

রিয়া- না। উল্টে আরো ওকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিলাম। ওর টাকার অভাব ছিল। কলকাতায় theater করবে বলে চলে আসে, এদিকে চাল চুলো কিচ্ছু নেই। আমার এক পরিচিত সূত্র ধরে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিলাম। আমার মামার flat টা ফাকাই পরে থাকত। সেখানে ওর একটা থাকার ব্যবস্থা করে দিলাম।

শিশির- ওই trading company আপনার পরিচিত?

রিয়া- আমার এক বন্ধুর সূত্রে পরিচয়। ওখানকার মালিক-এর মেয়ে আর আমি এক college এ পড়তাম।

শিশির- বেশ, তারপর?

রিয়া- সমস্যাগুলো এত সহজে মিটিয়ে দিয়েছিলাম বলে আমায় দুগ্গামা বলে ডাকত।

শিশির- দূর্গা মা?

রিয়া- হ্যা! ভাবুন একবার। আর এদিকে আমি ওকে পাগলের মত ভালোবাসি। যতবার আমায় দূরে ঠেলে দিয়েছে, ততবার আমি নতুন করে প্রেমে পড়েছি। আরো আঁকড়ে ধরেছি ওকে।


শিশির- ভবতোষ প্রতিবাদ না করে, আপনার সুযোগ নিত এইভাবে?

রিয়া- একেবারেই নয়। অনেকবার সুযোগ ছিল ওর কাছে। মামার flat বলে আমি প্রায়ই দেখা করতে যেতাম ওর সাথে। সুযোগ নেওয়ার বদলে বেড়াতে নিয়ে যেত আমায়। কোনদিন চার দেওয়ালের আড়াল পেয়েও আমাকে ছোয়নি।

শিশির- ওর প্রেমিকা আপনাকে নিয়ে আপত্তি তোলেনি?

রিয়া- আপত্তি করলেও কি আমি ছেড়ে দিতাম নাকি? ভবতোষ শুধু আমার।--- কিন্তু ওই মেয়েটির ভাগ্যকে সত্যি হিংসে হয়। এমন একটা মানুষের ভালোবাসা পেয়েও অবহেলা করল।

শিশির- ওদের সম্পর্কটা ভেঙে যাওয়ার পরে নিজের মনের কথা ভবতোষকে বলেছিলেন?

রিয়া- বহুবার। সত্যি বলতে কি, আমি একটু desperate হয়ে পরেছিলাম শেষ দিকে। রাতের পর রাত কথা বলেছি, কেঁদেছি, বুঝিয়েছি। কিন্তু ওর সেই এক কথা। দেখা হলে জোর করার চেষ্টাও করেছি।

শিশির- আপনি এ'রকম করতেন কেন? আপনার কি সত্যি প্রয়োজন ছিল এমন করবার?

রিয়া- আমি ওকে দেখার পর থেকে, ওর সাথে নিজেকে relate করতে পারতাম খুব ভালো।

শিশির- বুঝলাম, তারপর?

রিয়া- আমার রাতে এমনিতেই ঘুম আসেনা ভালো, আর সেই অত্যাচার ওকে করতাম। ভোর হয়ে যেত, তাও phone এ কথা বলে যেতাম। হয়ত আমার জন্যেই কাজে ভুল করে ফেলত। চাকরিটাও হয়ত আমার জন্যেই।.....

শিশির- ওভাবে ভাবছেন কেন? company র internal কোন politics এর কারণেও তো চাকরিটা হারাতে পারেন।

রিয়া- হমম! তা-ও হতে পারে। বড্ড সরল মনের মানুষ। সবাইকে বিশ্বাস করে ফেলত চট করে।

শিশির- আপনি ঘুমের সমস্যাটার জন্যে ওষুধ খেতেন?

রিয়া- হ্যা! কিন্তু বড্ড কড়া ওষুধ। সংলাপ ভুলে যেতাম। মাথা ঘুরত খুব। তাই বন্ধ করে দিয়েছি।

শিশির- আর কোন সমস্যার কারণে রাতে ঘুম আসতে চাইত না কি? পারিবারিক বা কাজের চাপে?

রিয়া- আমি আসলে সবার থেকেই একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছিলাম। আমাদের দলে নতুন একটা মেয়ে এসেছে। এখন নায়িকার পার্টগুলো তাকেই দেওয়া হয়। আমি তাই বেরিয়ে এসেছিলাম।

শিশির- সে-কি? নাটক ছেড়ে দিলেন?

রিয়া- ওদের ব্যবহার আমার ভালো লাগত না। পুরোনো হয়ে গেছিলাম বলে বোধয় আমার অস্তিত্বটা ফিকে হয়ে আসছিলো।

শিশির- অন্য কোন দল থেকে offer পাননি?

রিয়া- পেয়েছিলাম, কিন্তু করিনি।

শিশির- কেন?

রিয়া- আমি তো আজকাল কার মেয়েদের মত approachable নই। পোষাক ও back dated.

শিশির- বুঝলাম। আচ্ছা! ভবতোষের আগে আপনার জীবনে আর কেউ আসেনি?


রিয়া- এসেছিল, কিন্তু পাত্তা পায়নি। তারা এসেছিল আমার শরীরটার জন্যে। ভবতোষ প্রথম আমার সত্ত্বাটাকে চিনতে পেরেছিল।

শিশির- সবই বুঝলাম। আচ্ছা, আপনার বাড়ির লোককে একটু খবর দিয়ে দিন তাহলে। নাহলে তাঁরা আবার tension করবেন।

রিয়া- কেন? বাড়ির লোককে কেন?

শিশির- ভবতোষ বাবুর তো ঘুম এখনো ভাঙেনি। তার ওপর আবার কিছু formalities আছে। ওনার বাড়ির লোক কেউ নেই যখন আপনাকেই একটু থাকতে হবে। সেই কারণেই আপনার বাড়িতে খবর দিতে বলা।

রিয়া- আমি ওর ঘরে থাকতে পারবো?

শিশির- নিশ্চই, কেন না?

রিয়া- কেউ কিছু বলবে না তো?

শিশির- বেশ! আপনি এখানে একটু অপেক্ষা করুন তাহলে? আমি ওপরে গিয়ে একজন sister কে পাঠিয়ে দিচ্ছি। সে আপনার সঙ্গে সঙ্গেই থাকবে, তাহলে কেউ কিছু বলবে না।

রিয়া- ঠিক আছে।

শিশির- আপনি বাড়িতে একটা খবর দিয়ে দিন?

রিয়া- ও কিছু হবে না। আমার বাড়িতে এখন কেউ নেই। সবাই কাজে ব্যস্ত। আর আমার বাবা-মা tension করবে না।

শিশির- বেশ, আপনি বসুন তাহলে। আমি sister কে পাঠিয়ে দিচ্ছি।



                                                                       //শেষ টুকু//

"তুমি নাকি schizophrenic একটা patient পেয়েছ ?" ঘরে ঢুকেই প্রশ্ন করেন Dr. সরকার।

"Yes sir." নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় শিশির। তারপর case file টা এগিয়ে দেয়।

"Patient কোথায় আছে?" file নিয়ে ward এর দিকে রওনা দেন Dr. সরকার। শিশির পিছু নেয়।

"Bed নম্বর ১০১৪ তে স্যার।"

"কি করে বুঝলে schizophrenia?"

"Patient এর disoriented কথাবার্তা। And a story about life. একই সাথে noticeable OCD complex ছিল।" পাশে হাটতে হাটতে case history বলতে শুরু করে শিশির।

"তাতে schizophrenic বুঝলে কি করে?"


"আপনি স্যার একবার patient কে দেখুন। আমি তারপর history টা বলছি।"

১০১৪ ঘরে এসে ঢোকেন ড: সরকার আর শিশির। Bed এর ওপর এক পাশ ফিরে প্রায় কিনারা দিয়ে কোনমতে কষ্ট করে শুয়ে আছে রিয়া। কাছে গিয়ে বোঝা গেল, সে ঘুমিয়ে আছে নিশ্চিন্তে। আজ অনেকদিনের ইচ্ছে পূরণ হয়েছে তার। নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে জড়িয়ে ধরে, তার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।


শিশির বলতে শুরু করে,
"Patient এর নাম রিয়া চৌধুরী, বয়স ৩০ বছর। She was claiming যে ওর সাথে একজন patient আছে, যার নাম ভবতোষ। Sister রা বুঝতে পারছিলনা বলে, একটা বচসা শুরু হয়। আমায় ডেকে পাঠানো হলে, গিয়ে বুঝতে পারি what she was dealing with. একটা ফাঁকা wheelchair এ  রিয়ার patient কে বসিয়ে আমি তখন ward এর দিকে নিয়ে যাই, আর রিয়া কে OPD তে গিয়ে অপেক্ষা করতে বলি।

মোটামুটি আধা ঘন্টা নিজেকে prepare করে আমি OPD তে যাই। Her conversation and emotions are recorded on camera sir."

"Patientএর সাথে আর কেউ আসেনি?"

"না স্যার। কিন্তু কথায় কথায় আমি জানতে পারি ২টো information. প্রথম কথা ওর imaginary character যে অফিসে কাজ করত, সেখানকার নাম, আর নাটকের দলের নাম। Patient কে bed এ পৌঁছে দেওয়ার পরে আমি net surf করে ওখানকার phone নম্বর জোগাড় করি। B K Traders এর accounts section এ কাজ করত রিয়া। মাস দুয়েক আগে থেকে ওর কাজে ভুল শুরু হয়। Office এর MD, Mr. Binod Kherra এর সাথে আমার কথা হয়। রিয়াকে অসুস্থতার কারণেই ছুটি দেওয়া হয়েছে, dismiss করা হয়নি। অফিসে শুধু হিসেবে ভুল করাই নয়। অনেকের against এ complain letter ও জমা করতে শুরু করেছিল রিয়া। কিন্তু ওর complain গুলোর কোন ভিত্তিই ছিল না, কারণ যে যে নাম complain এ  জমা পড়ত; সেরকম নামে কেউ office এ কোনকালেই কাজ করেনি। নিজের struggle গুলি রিয়া ভবতোষের চরিত্রের ওপর হচ্ছে বলে কল্পনা করতে শুরু করেছিল।


এরপর আসি নাটকের কথায়। বৈকুন্ঠ নামে যে নাটকের দলের কথা রিয়া বলেছে, সেটা আদৌ exist করে না। কিন্তু রিয়া সত্যি নাটকে ছিল। তা-ও বছর দু'এক আগে সব ছেড়ে বেরিয়ে আসে। বৈঠকী বলে মুর্শিদাবাদের একটা নাটকের দলে সে কাজ করত। মুর্শিদাবাদের হলেও, এই দলটার office কলকাতার চৌরঙ্গী পাড়ায়।
ঐ দলের মালিক অখিল বাবু রিয়ার ঘটনা কিছু বলেন। মালদায় একটা show করে আসার পর থেকে রিয়া অমনোযোগী হয়ে পরে। সংলাপ বলার মাঝেই হঠাৎ থেমে গিয়ে স্টেজ-এর এক দিকে তাকিয়ে থাকত। অভিব্যক্তি তেও পরিবর্তন চলে আসত। তখন মুখ্য চরিত্র থেকে সরিয়ে, রিয়া কে ছোট-খাটো চরিত্র দেওয়া শুরু হয়। রিয়া সেটাও negative ভাবে নিয়ে দল ছেড়ে দেয়। তবে দলের কিছু সদস্য রিয়াকে নিয়ে একজন psychiatrist কে দেখায়। দল থেকে পুরোপুরি যোগাযোগ বাদ দিয়ে ফেলায় আর কোন খবর অখিলবাবু জানেন না।


রিয়ার বন্ধুস্থানীয় কিছু সদস্যের সাথে কথা বলে জানতে পারি আরো কিছুটা history. রিয়ার বাবা suicide করেছিলেন। তারপর থেকে রিয়া নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছিল সবার থেকে। সমস্যাগুলো প্রকট হয় অনিন্দ নামে, দলেই কাজ করত, একটি ছেলের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে। একটা কথা রটে যায় দলে, যে রিয়া নাকি সেই ছেলেটিকে পছন্দ করত। যদিও রিয়া সে কথা স্বীকার করেনি কোনদিন।


বাবা মারা যাওয়ার পরে, রিয়া তার মামা বাড়িতে চলে আসে। একটা apartment এর দু'টো flat ছিল রিয়ার মামার। তারই একটা ছেড়ে দেন রিয়া কে। দলের একটি মেয়ে রিয়ার খুব কাছের বন্ধু ছিল। সে চেনে রিয়াদের বাড়ি। আপাতত তাকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছি, যাতে রিয়ার relatives কেউ আসেন।

আমার session এর conversation শুনে key points গুলো note down করে রেখেছি case file এ। আর তার থেকে যে conclusion টা আমি পেয়েছি, সেটা হল manic depression তো ছিলই। তার সাথে response গুলো schizophrenic, including sub-types. Disorganized আর paranoid.



ফাঁকা bed এর কিনারা ঘেসে শুয়ে থাকা রিয়ার মুখে একটা স্নিগ্ধ হাসি মাখা। এইটুকুই শুধু চেয়েছিল সে। একটা অবলম্বন, একটা আশ্রয়। একাকিত্বের সীমায় এসে, নিজের মধ্যেই কল্পনায় সে বেছে নিয়েছিল একজন কে। নিজের পছন্দের একটা নাম দিয়েছিল তার। কিন্তু মনের কষ্টগুলোকে সেই চরিত্রে সাজিয়ে তৈরী করে নিয়েছিল tragedy. আর সেখান থেকেই একটা repulsion.

আজ হয়ত কিছুটা মানসিক বিপর্যগুলো থেকে দূরে আছে সে। তাই নিজেরই কল্পনায় নিজেই নিজের সান্নিধ্যকে নিয়ে ঘুমের দেশে পারি দিয়েছে। এখানে এই চার দেওয়ালের মাঝে ভবতোষ শুধুই তার একার। ফাঁকা খাটের এক কোণ দিয়ে একটু জায়গা নিয়ে সে শুয়ে আছে ভবতোষের পাশে।
















গল্পের সব চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবে কারো সাথে কোন ঘটনার মিল সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালীয়। 

সহকারী: আগন্তুক। 
 কৃতজ্ঞতা স্বীকার: Google images .











1 টি মন্তব্য:

Unknown বলেছেন...

Asadharon. Just ashaadharon. Chaliye jaao