সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭




Lion, The Movie with Re-evaluation ......


"26th Feb was just another Sunday for me. Patients, extractions, giving advises and all. But the equation and slot divisions were changed for a purpose and decided to go for a movie, LION.

Trailer showed the same formula of Slumdog Millionaire only difference was, instead of old love here the Hero was looking for his mother. The first eye catcher came when the Name Nawazuddin Siddiqi appeared on screen and expectations grew from the movie. 

The first 60 seconds of the movie showed aerial views of some rough, stony landscapes with different shades of brown-yellow. My expectations about the movie were same as the drought like landscapes. But truth came like that proverb, 'never judge a book by its cover.'
  
This little boy changed all my thoughts from the very first frame of this movie. This movie was not the same."

Lets shut the door of my thoughts and go through the movie.

Oh yes! it was the first half of the movie that will involve all the corners of your mind to cherish the frame by frame transitions. Affection of brother, love from a mother, childish innocence, dreams to bigger things. everything was there.

'Guddu, mujhe jalebi khana hai' young Saroo was asking his elder brother in front of a sweet shop. Unable to buy the desired wish, Guddu, didn't gave up. Instead he provokes his brother for a bigger dream for later when they will be able to buy all of those sweets.
"Ekdin pura dukan kharid lenge."

There was another scene where young Saroo was lifting heavy weight objects to prove he is able to join his brother in work. That's the beginning of unusual life. Getting lost from his brother at a railway station Saroo reaches Kolkata. Struggling through the hunger, predators and perverts he managed to escape his life as a free kid on the streets. Eventually guided by a kind man (Played by Ridhhi Sen) to the police station and beginning of a new journey. From the 'Home' in kolkata to a new 'Home' in Australia Saroo's life changed as if he was privileged by God's grace. From no where to a better life, viewers become the part of the journey.

Young Saroo (played by Sunny Pawar) was the only stake in the movie where the viewers bet their all concentration in the pot. This movie was more like a Chaplin film. All was in the act and expressions, dialogues were just those captions coming in between shots to give us the conclusion. The 'spoon' scene between Sunny and Riddhi, showed the contrast of hunger and luxury of having food. The scene where another street kid offered a board to Saroo for sleep at the subway showed us how same fate gives us friendship unconditionally.

After getting adopted by Australian wealthy parents (Played by Nicole Kidman and David Wenham) Saroo crossed his 25 years of life. The appearance of adult Saroo (Played by Dev Patel) started as he surfaced from the sea and by looking at his perimeter drifted towards the shore and the scene goes on. It was very appreciable to portrait the scene in such a way that gives us clue to regulate our brain and guess the life in between. Eventually Saroo gets an opportunity for higher studies and there met other Indian students. At a party he found his old childhood desire "jalebi" in the kitchen, and every bit of his memory flashed back. Screenplay writer Luke Davis must be appreciated as he brought back Saroo's elder brother through visions. Emotions poured in when "Guddu" was taking foods from the waste.

Overwhelmed by the script and cinematography I forgot to notice that about 600 seconds of the film was framed in kolkata, and it was difficult to differentiate that I was watching a Hollywood movie. I also skipped to notice that conversations were carried out in Bengali.
"ভাবতে পারছি না আমার ভাষা একটা Hollywood movieতে।" her whispers let me notice the beauty. Yes it was my language in a Hollywood film.

It is really a great movie to watch.

Director Garth Davis has successfully showed his ability and increased our expectations onward. 

If your eyes are going through drought then this movie can quench the thirst of your eyes for sure at the drought belt of Khandwa. And don't miss the end part, as it will give the reason behind selection of such name "Lion". And the song "Never give up" concluded the movie well enough.

Thanks to her for this reference. My investment of 2 hours from the schedule was not wasted. 

Thank you.           




Radio Station:


                                                                         //১//
নিয়ম মাফিক রোজ সকালে এসে অফিস খোলানোর কথা NG এর। NG অবশ্য তার ভালো নাম নয়, কর্মক্ষেত্রে ডাক নাম। বাবা-মা নাম রেখেছিলেন ননীগোপাল, পুরো নাম ননীগোপাল মল্লিক। মাধ্যমিক পাশ করার পরে আর পড়া হয়নি। যা হয় আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত পরিবারে। সাংসারিক দায়িত্ব সামলাতে নেমে পরতে হয় অন্যের গোলামী করতে। ননীর জীবনেও কিছুটা সেরকম। বনগাঁর একদম এক প্রান্তবর্তী গ্রামে তাদের বাড়ি। তার বাবা ছিলেন রাজমিস্ত্রি। কলকাতা তে এসে কাজ করে শনিবার রাতের train এ বাড়ি যেতেন। একদিন বাড়ি ফিরলেন না। ভিড় train থেকে পরে মারা যান। ননীর জীবনের প্রথম অধ্যায় শুরুও বোধয় সেখান থেকেই। সে সময় সীমান্ত প্রহরা এত কড়া ছিলনা। তবু ভয় তো একটা ছিলই। অসৎ সঙ্গে পরে ননী শুরু করে গরু আর চিনি পাচার এর কারবার। এপার থেকে গরু নিয়ে বেড়াতে যেত নদীর পারে। ঠিক মাপা সময় অনুযায়ী ওপার থেকে সংকেত আসলে , গরু গুলো কে নদীতে নামিয়ে দিতো। বাংলাদেশের লোক ও সে'সময় গরু চড়াতে আসে। এপার থেকে ওপারে গরু গেলেও বোঝার উপায় নেই। এই প্রাণীদের পেটের কাছে চামড়ার ব্যাগে প্লাষ্টিক প্যাকেট মুড়িয়ে রাখা থাকত চিনি। কেউ টেরও পেত না। কিন্তু এই করে প্রচুর কমিয়ে নিত কিছু মানুষ। ননীও ভালো টাকা পেত। কিন্তু এসব কাজে সবদিন সমান যায় না। কিছু গরু উল্টো পথে ফিরে আসত। তাদের ওপারে নিয়ে যেতে তখন ডুবসাঁতার দিয়ে গরুদের গলা জড়িয়ে নিয়ে যেতে হত।  এভাবে গেলে সীমান্তরক্ষীদের নজর এড়ানো যেত আবার গুলি চল্লেও বিপদ থাকত কম। কিন্তু ননীর গুলি লাগলো একদিন। সেই থেকে ডানপা টা একটু দুর্বল তার।

এক বছর প্রায় বেকার বসে থাকার পর, রাজমিস্ত্রি হবে বলে, কলকাতা চলে আসে। এখানে অবশ্য বিপদ নেই। শুধু খাটনি বেশি, পয়সা কম। প্রথমদিকে যোগানদার এর কাজ। তারপর ইটগাঁথার কাজ। শেষে রাজমিস্ত্রি। তার বাবা যে কতখানি পরিশ্রমের পরে এই খেতাব পেয়েছিল সে অনুমান করতে পারে নিজে সেই পথে হাঁটার পর। চৌরঙ্গী পাড়ায় এক অফিসের রাজমিস্ত্রির কাজ করে, তার নাম একটু পসার পায়।  সেই অফিস মালিকের সুপারিশেই বাইপাসের ধরে এক পুরোনো বাড়ি ভেঙে, এক radio station বানাবার বরাত পায়। প্রায় ৭ মাসের পরিশ্রমে অফিসটা তৈরী হয়। এখান থেকে অবশ্য তার নতুন পথের যাত্রা শুরু।

                                                                  //২//
ইছামতির জলে ছিল সুর। নৌকার দাঁড় বাইতে যে ছলাৎ ছলাৎ আওয়াজ আসে, সেই তালে ছিল গান। ননী গান শেখেনি কোনোদিন তবে গলায় সুর ছিল। শরৎ কালে ইছামতির দুপাড় ভরে যেত কাশ ফুলে। কে বলবে দুটো অন্য দেশ। এমন অনেকদিন সে তার ছোট্ট ডিঙি নিয়ে স্রোতের টানে ভাসিয়ে দিত। নদীর তালে গান বেঁধে গান করত। কাশের শীষ ভেঙে পুতুল বানাত। কলকাতায় আসার পরেও ইছামতি কে মনে করে গান বাধতো সে। একদিন সেই গান শুনে ফেললেন Radio station এর মালিক। আর সেদিন থেকে রাজমিস্ত্রির কাজে ইস্তফা দিয়ে শুরু হল Radio station এর পরিচারকের কাজ। ক্রমে বেয়ারা। তারপর সঞ্চালক। গোটা পনেরো বছরের কর্ম জীবন কাটিয়ে, আজ সে এই পর্যায়ে।

আজকাল radio তে নতুন ধারার প্রবর্তন। সঞ্চালক হয়ে গেছে Radio Jockey, বা সংক্ষেপে RJ. তাদের নামের ও সংক্ষেপ আছে, অনেকের আবার ছদ্মনাম আছে। সে অনেক বেপার। এই দীর্ঘ পাঁচ বছরে Radio station এর ক্রম বিবর্তনের সাক্ষী সে। RJ হিসেবে কাজ পাওয়ার পর, তার নাম হয় NG . অর্থাৎ ননীগোপাল এর সংক্ষেপ। যাদবপুরের কাছে একটা ফ্ল্যাট ও কেনে সে।  তার কন্ঠ যে তাকে এমন সুযোগ দেবে, একি আর ননী জানত? নিজের কাজে অবহেলা করেনি কোনদিন। হয়ত তারই সুফল এখন ভোগ করছে। গতমাসে তার জীবন নিয়ে Radio তে কথা হচ্ছিল। অন্য আরেক RJ সাক্ষাৎকার নিচ্ছে ননীর। তাকে Radio station এর তরফ থেকে সম্মানিত ও করা হয়। এ'মাস থেকে তাই সকালের প্রথম show নানীকে দিয়েই। RJ হওয়ার পরেও অবশ্য অভ্যাস পাল্টায়নি ননীর। আজও সে সকাল সকাল চলে আসে। শুধু, পরিচারকের কাজ আর করতে হয় না। কেবল নিজের ঘরে ঢুকে যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করা, তার ঘরে ঠাকুরের আসনে ধুপ দেওয়া। এসব না করলে তার যেন দিনই শুরু হয় না। ভোর ৬টায় প্রথম Broadcast. মোটামুটি ৫টা থেকে সকালে যাদের কাজ চলে আসেন। News room এ প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। সকাল ৭টায় খবর, তারপর নানা রকম অনুষ্ঠান। NG ওরফে ননী এখন থেকে খবরের আগে show টা করে। গানের আসর। ঘুম ভাঙার পরে দিনের শুরু কে স্নিগ্ধ ভাবে করতে, উৎসাহী হয়ে নিজের কাজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে এই show ভালোই পরিচিতি পেয়েছিলো। অনেকে phone ও করে তাদের পছন্দের গান বাজানোর জন্যে। বেশ ভালোই কাটতো ননীর সকাল। এরপর ছিল অফিসের কাজ। সারাদিনের শেষে সন্ধ্যে ৮টা নাগাদ ছুটি নিয়ে সে যেত বাড়ির কাছেই একটা library তে। খবরের কাগজ, আর গল্পের বই, এদের সাথে এক ঘন্টা কাটিয়ে বাড়ি ফিরত। কোন বই পছন্দ হলে নিয়ে আসত।

                                                             //৩//
আজ সকালেও নিয়ম মাফিক ননী সবার আগেই চলে আসে। অফিসের তালা তখনও খোলা হয়নি। দারোয়ানটাও কাছে পিঠে নেই দেখে নিজেই চাবি খুলে ভেতরে ঢোকে। আলো জ্বালিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে বসে আজকের program কিভাবে শুরু করবে একবার ঝালিয়ে নেয় মনে মনে। রমেশ নামের এক ছোকরা চাকর কাজ করে এখন এখানে। ঐ পদটি অবশ্য একদিন ননীর ছিল। রমেশ অবশ্য সেই তফাৎ করেনা।  সে ননী কে যে সম্মান দেয় সেটা বাকীদের ও নজর কাড়ে। ননী একবার হাঁক দেয় রমেশ এর নাম ধরে। তারপর নিজেই হেসে ফেলে। বন্ধ অফিস খুলে নিজেই ঢুকল, তাও আবার ফরমাশ জানাতে রমেশ কে ডাকছে। ঘর থেকে বেড়িয়ে gate র সামনে আসে। না, দারোয়ানটা এখনও বেপাত্তা। রাস্তায় লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। অফিসের বড় ঘড়িতে পৌনে ৬টা বাজে। এরম অনিয়ম তো কোনদিন হয় না। একটু যেন উসখুস করে মনটা। এত বছরে প্রথমবার পৌনে ৬টার সময় অফিস ফাঁকা। এখন কিছু করার নেই। নিজেই transmitter room এ যন্ত্রপাতি চালু করে। STL system on করে studio তে ঢোকে। Microphone feed check করে, control panel এর কাছে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো জোগাড় করে নেয়।

কাল দুপুর অব্দি একটা ভালো বই পড়ার পর  থেকে মনে মনে আজকের সকালের বিষয় ঠিক করে রেখেছিলো সে। যান্ত্রিক জীবনের ভীড়ে হারিয়ে যাওয়া অযান্ত্রিক মনের আনাচে কানাচে যেসব সুক্ষ অনুভূতিগুলো লুকিয়ে থাকে, যারা চাইলেও মাথা তুলে নিজের দাবী জানাতে পারেনা। সেইসব ইচ্ছের গল্প নিয়ে আজকের বিষয় ভেবেছিল সে। অফিসে বসে গানের CD গুলো একজায়গায় করে রেখেছিল। studio থেকে বেড়িয়ে নিজের ঘরে যায় একবার CD গুলি আনতে। আশ্চর্যের বেপার, এখনো কোন মানুষ আসেনি। গোটা অফিসটায় সে একা। দু'বার হাঁক দেয় রমেশ এর নাম ধরে। এবারেও একই ফল। ওদিকে আবার ঘড়িতে ৬টা বাজতে ৫মিনিট বাকি। না, এমনধারা বেনিয়ম এই অফিসে প্রথমবার। পুজোরছুটিতেও যে radio station গমগম করে, সেখানে আজকে কি এমন উপলক্ষ, যে সবাই অনুপস্থিত। মনে মনে বেশ রাগ নিয়েই studio তে গিয়ে set on করে। চিরাচরিত ভঙ্গিতে শুভ সকাল জানিয়ে, নিজের program শুরু করে দেয়।

                                                              //৪//
৭টা অব্দি নিজের কাজ সেরে বেড়োনোর সময় ঝুপ করে অন্ধকার নেমে আসে। Load Shedding! আর সময় পেলো না। এখনো অফিসে কেউ আসেনি। News time শুরু হবার কথা। এদিকে অফিস ফাঁকা, তার ওপর আবার এই ঝামেলা। বিরক্ত হয়ে বাইরে আসে ননী। কোনরকম হাতড়ে হাতড়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে। তারপর দরজার দিকে এগোয়। কেউ আসেনি যখন generator কে আর চালাবে। দিন দিন উচ্ছনে যাচ্ছে সব। মনে মনে এ'সব ভাবতে ভাবতে বাইরে বেড়িয়ে আসে। Gate এর বাইরে দৃশ্য দেখে ননী অবাক। Radio station এর অর্ধেক কর্মচারী gate এর বাইরে দাঁড়িয়ে। Gate টাও ফুল দিয়ে সাজানো। আশ্চর্য হয়ে এগিয়ে আসে। ঐতো রমেশ দাঁড়িয়ে। ননী ডেকে ওঠে। কিন্তু রমেশ যেন শুনেও শুনতে পায় না। বাকি সঞ্চালকদের মধ্যেও অনেকে সেখানে উপস্থিত। তারা যেন কেউ তাকে দেখতে পাচ্ছে না। সবাই হাতে মোমবাতি নিয়ে দাঁড়িয়ে। কি চলছে বুঝে উঠতে পারে না ননী। সবাই যেদিকে তাকিয়ে, সেখানে চোখ পড়তে সব যেন কেমন গুলিয়ে যায়। পায়ের তলার জমিটাও যেন আর নেই। দেহের ভার আর নিতে পারছে না যেন পা দুটো। Gate এর পাশে দেয়ালের গায়ে, তার ছবি। সাথে আরো ৫জনের ছবি। এরা সবাই এই অফিসের কর্মচারী। Control room, power supply সেদিকের দেখভাল করতেন এরা।  রাস্তায় বিভিন্ন খবরের চ্যানেলের গাড়ি দাঁড়িয়ে। সবাই মৃত ব্যক্তিদের সম্মান জানাতে মোমবাতি, ফুল এইসব রেখে দিয়ে যাচ্ছে ছবিগুলোর সামনে। RJ বৈশাখী এক কোণে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্র সংগীত গাইল। সমবেত সবাই সঙ্গ দিল।

Radio station এর মালিক এর কাছে এবার খবর চ্যানেলের লোকেরা জড়ো হয়েছে দেখে  ননী ও সেদিকে গেলো। গতকাল বিকেলে এক ভয়াবহ আগুনে পুড়ে গেছে গোটা radio station . প্রায় ৪ ঘন্টার চেষ্টায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু ৫জন কর্মচারী মারা যান। আগুনটা লেগেছিলো power room থেকে। তারপর গোটা অফিসটাই ধরে যায়। সময় মত বেরিয়ে আসায় সেই সময় অফিসে উপস্থিত অনেকে বেঁচে গেলেও ৫জন ফিরতে পারেনি।

মালিকের কথাগুলো শুনে নিজের কানকেও যেন বিশ্বাস হয়না ননীর। প্রথমে চিৎকার করে, শেষে গায়ে হাত দিয়ে ধাক্কাও দিতে যায়। কিন্তু হওয়ার মত সেও যেন অবয়বহীন। কেউ টেরও পায়না তার উপস্থিতি। ছুটে যায় অফিসের দিকে। আগুন যদি লেগেই থাকে, সকালের এতটা সময় সে কি নিয়ে কাটালো? দরজার সামনে যেতেই অবাক হয়ে যায়। মেঝেটা ছাই ও জল মিশে কাঁদায় ভরে আছে। Reception এর কঙ্কালসার কাঠামোটা কালি মেখে পরে আছে। দেয়ালের গায়ে কালকের অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষ দিচ্ছে। সিঁড়ি বেয়ে উপরে studio তে যায় সে। সকালে যা নিয়ে সে কাজ করল, সেগুলো একটাও আর পূর্ববর্তী চেহারায় নেই। সব হিসেবে কেমন যেন গোলমাল হয়ে গেল। নিজের ঘরের সামনে যায় সে। দরজাটা আলতো ঠেলা দিতেই খুলে গেল। সেই বার্নিশ করা frame টা এখন আগুনের তাপে ফেঁপে ওঠা তক্তা ছাড়া কিছুই নয়। নিজের ঘরের কোণ দিয়ে একটা sofa ছিল। কাল দুপুরে ওই sofa তে বসেই বইটা পড়ছিল সে। কাছে গিয়ে sofa র চারপাশে খুঁজতেই মলাটের পাতা দেখা গেলো।

গতকাল দুপুরে lunch সেরে এই বইটা নিয়েই পড়তে বসেছিল সোফায়। তারপর কোন ফাঁকে ঘুমিয়ে গেছে সে টেরও পায়নি। ঘুমের মধ্যে সুন্দর স্বপ্নের রচনা করেছিল সে। নিজের জীবনের প্রতিটি অধ্যায় কে নতুন করে উপলব্ধি করেছিল সে। ইছামতির ধারে ফিরে গিয়েছিল আবার। নিজের ডিঙি নৌকো নিয়ে আবার ভেসেছিল শান্ত স্রোতে। আজ মৃত্যুর এ'পারে এসে জীবনের সব গতি, সব হিসেব এলোমেলো হয়ে গেলো। এই Radio station এর প্রত্যেকটি ইট তার হাতে মাপ করে বসানো। সেই ইটের পাঁজরেই আজ তার সমাধি। নিজের মৃতদেহ টা দেখার শখ হয় একবার। কিন্তু কোথায় নিয়ে গেছে, সেটা  জানবার উপায়ও যে এখন নেই।  দোতলার বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে নিচে শোকসভায় সমবেত লোকেদের দেখতে থাকে। এদের মধ্যে অনেকেই অচেনা। হয়তো এরা সেই শ্রোতারা, যাদের জন্যে একটা ছোট্ট ঘরের কোণে বসে দিনের পর দিন microphone এ মুখ রেখে কথা বলে যায় তারা। অদৃশ্য থেকেও তারা জীবন্ত, আকাশবাণী হিসেবে। আজ সে নিজেও অদৃশ্য। ভিড়ের মধ্যে থেকেও সে যেন নেই। এ এক নতুন অধ্যায় তার জীবনের। Radio station এ যার নতুন করে সূচনা।   

         




শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

No conclusion

      অসমাপ্ত 

                                                                          //১//
বাইরে অবিরাম বৃষ্টি। গত দু'ঘন্টায় এক মুহূর্তের জন্যেও বৃষ্টির বেগ কমেনি।  অবস্থা বেগতিক দেখে, গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরে শুভ। 'এই বৃষ্টি চট জলদি থামার নয়', চা দোকানীও সে কথা বলছিলো শুভকে। ধাবা থেকে বেরিয়ে সরু ঝামা ফেলা parking lane টা পেরিয়ে, highwayতে ওঠে গাড়ি। Verna fluidicএর চাকা, highway তে উঠে যেন নিজের মেজাজ ফিরে পায়। কোনা express way দিয়ে উলুবেড়িয়ার দিকে গাড়ি ছোটায় শুভ। মুষলধারে বৃষ্টিতে পথে অন্য গাড়িও সেরকম একটা নেই। speedometer এ একশ পেরোতে কার্পণ্য করে না সে।

আজ বিকেলে এক দুর্ঘটনায় গুরুতর ভাবে আহত হয়েছে বরুণ, শুভর এক ছাত্র। এই বিপদে ঠেলে দেওয়ার জন্যে অবশ্য সে নিজেই দায়ী। বরুণ কে সে বরাবর স্নেহের চোখে দেখে এসেছে। ওর সরল শান্ত মুখটা বারবার ভেসে উঠছে যেন চোখের সামনে। পথের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে গত ৬ ঘন্টায় ঘটে যাওয়া incident গুলোর কথা মনে করছিলো শুভ। এমন সময় একটা call আসে mobile এ।
"Hello!"
"শুভ দা, তুমি আসবেনা?"
"এইতো গাড়িতে আসছি। হাসপাতালেই আসছি আমি। কে পলাশ নাকি? hello! hello!"
Disconnect হয়েগিয়েছিল call টা। Accident site থেকে বরুণ কে যে উলুবেড়িয়ার একটা বেসরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে,সে খবর আগেই পেয়েছিলো শুভ। অনেক আগেই পৌঁছে যেত।  কিন্তু কলকাতা থেকে বেরোনোর পরেই এমন বৃষ্টি শুরু হল, দেরী হয়ে গেলো অনেকটা। প্রায় একরকম বাধ্য হয়েই সাঁত্রাগাছির কাছে একটা ধাবায় গাড়ি দাঁড় করিয়েছিলো। ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করার পরেও দুর্যোগের বিরতি নেই দেখে আবার রওনা দেয় সে।

বরুণের অবস্থা কি সত্যিই খুব খারাপ? বরুণের নম্বর থেকে পলাশ বোধহয় phone করেছিল। গলা শুনেই মনে হচ্ছিলো বেশ উদ্বিগ্ন। কিই যে চিকিৎসা পাবে সেখানে, আদৌ তা কার্যকরী কিনা, কে জানে। চিন্তার প্রভাবেই বোধয় accelerator এ পায়ের চাপ বাড়িয়ে দেয় শুভ। আবার একটা phone. Screen এ বরুণের নামটা ফুটে উঠল। এই speed এ এখন phone ধরা অসুবিধা। তবু mobile টা নিতে যেতেই call টা কেটে গেলো। এরম বারবার phone আসতে থাকার মানে বরুণ কি আর নেই? আবার একটা call. এবারেও তাই। Mobile টা নিতে যেতেই কেটে যাচ্ছে। দুশ্চিন্তাগুলো কে সরিয়ে রেখে রাস্তায় মন দেয় শুভ। Vernaর শরীরটা একটু যেন কেঁপে উঠল, নতুন ভাবে গতিবৃদ্ধির কারণে।

Windscreenএর ওপর wiperগুলোর সপাট সপাট আওয়াজ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে গাড়ির ভিতর থেকে। ক্রম ধারাবর্ষণ এর সাথে তাদের কর্মযুদ্ধ যেন দাড়িপাল্লায় সমান কৃতিত্বের দাবী রাখে। ঐতো cement factory র চুল্লিটা দেখা যাচ্ছে বামদিকে দূরে। উলুবেড়িয়া এসে গেছে প্রায়। একমাত্র toll plaza ছাড়া, গাড়ির গতি কমেনি এতটুকু। এতখানি রাস্তা, এই বৃষ্টি তে যেন হাওয়ায় ভেসে এলো শুভ। গোটা রাস্তায় traffic ও কম। কাজেই বিশেষ অসুবিধায় পড়তে হয় নি তাকে। আবার একটা phone আসে mobile এ। কিছুটা দুশ্চিন্তার ভারেই বোধয় call টা receive করতে যায় শুভ।
"Hello!"
"শুভ দা, তুমি আসবে না?" সেই এক কথা আবার। যন্ত্রচালিতের মত কেউ যেন এই একিই কথা বলে যাচ্ছে phone এর ওপার থেকে।
"এসে গেছি। আর একটু পথ। আমি আসছি, চিন্তা করিসনা তোরা।"
Callটা  disconnect করে, screen lock করে পথের দিকে তাকাতেই সামনে head light এর আলোয় কিছু একটা দেখতে পায় শুভ। Horn এর ওপর horn দিতে থাকে শুভ। স্পীডোমিটার এ গতি প্রায় একশ চল্লিশ। আবার একটা phone. Wiper এর গোঙানি, windscreen এর ওপর বৃষ্টির আওয়াজ। সব মিলিয়ে নিজের হাতের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ যেন একটু ভাঙে শুভর।  Headlight এর আলোয় মাঝ রাস্তায় দাঁড়ানো ছায়ামূর্তি দেখে নিজেই বিস্মিত হয়ে যায় সে। 
   
                                                                   //২//   
"6th sense, শব্দটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। William De Von সাহেব এর মতে, It is the less used section of our brain, that depicts and portraits the psychic events around us. তার journal গুলো আজ অব্দি যা যা published হয়েছে, সেখানে তিনি একটাই কথা বলে গেছেন। 'They are around us.' আমার ছাত্র জীবনে, আমি বহুবার এই 'তাদের' সাথে যোগাযোগ করবার চেষ্টা করেছি। In fact বিয়ের পরেও, আমার স্ত্রী এবং আমি, দুজনেই চেষ্টা করে গেছি এই বিষয়ে নতুন কিছু আবিষ্কার করার। কিন্তু গরীব দেশে সে সব করা difficult, অর্থং জস্য বলং তস্য।"

ড: শুভময় মল্লিক এর class room আজ অব্দি house full হয়নি, এমন ঘটনা বিরল। অমোঘ উৎসাহে তরুণ থেকে প্রবীণ প্রজন্মের মানুষ ভিড় করে আসে। Paranormal এবং psychic বিষয়গুলোর ওপরে তার প্রত্যেকটি seminar সকলের কাছে অনেক অজানা বিষয়ের তথ্য তুলে দেয়। তাই কেউই miss করে না প্রায়।  গত এক বছরে, সারা ভারতবর্ষে ১৬টি শহরে প্রায় পঞ্চাশটির বেশি সেমিনার দেওয়া হয়ে গেছে তার। এ'বছর বই মেলা তে তার বইও প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশক ভদ্রলোক বইয়ের কাটতি নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু প্রথম চারদিনেই প্রায় ১৫০ কপি বেড়িয়ে যাওয়ায়, ভদ্রলোক শুভময়ের পরবর্তী লেখা ছাপাবেন বলে আগাম বায়না করে রেখেছেন।

"তারমানে, তারা কি এ'ঘরেও আছেন?" উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে থেকে কেউ বলে ওঠে।
"আমি ভয় পাওয়াতে চাই না, তবে বলব নিশ্চই। আপনার ঠিক পাশেই হয়ত কেউ বসে আছেন। আপনাকে দেখছেন, আমাদের দেখছেন। আমাদের সব কথা শুনছেন। সে আপনার খুব প্রিয় কোন মানুষ হতে পারেন, যিনি এখন আর বেঁচে নেই। আবার অন্য কারুর আত্মাও হতে পারেন।"
"তারমানে, প্ল্যানচেট করে আত্মা নামিয়ে আনার বিষয়টা বুজরুকি নয়?" আরেকজন কোন দর্শক প্রশ্নটা করে।
"আপনার কাছে প্ল্যানচেট এর কি সঙ্গা আমি জানি না। তবে এটুকু বলব, গপ্পের বই বা cinema দেখে যদি নিজের ধারণা কে সাজিয়ে থেকে থাকেন, তবে বলব হ্যা, ওই মতে প্ল্যানচেট বুজরুকি। সত্যিকারের আত্মাকে নামানো, খুব একটা সোজা কাজ নয়।"
"আপনি আত্মাকে দেখেছেন?" সামনের সারির একজন মহিলা প্রশ্নটি করে।
"বললে বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, আমার যে বসার জন্য জায়গা দেওয়া হয়েছে, এই মুহূর্তে ঠিক ওই চেয়ারে একজন বসে আছেন, যার ইহ জগতের সাথে সমস্ত সূত্র ছিন্ন হয়ে গেছে।"
সবাই একটু বিব্রত হয়ে পরে এমন উক্তিতে। একটা চাপা গুঞ্জন ভেসে আসে দর্শক আসনের দিক থেকে। 
"আমি জানি আপনারা কি ভাবছেন। পঞ্চদশ শতাব্দী তে বসে আমি এই উক্তি করলে, আমায় রাজা, সামন্ত, এনারা ভাড়া করে নিয়ে গিয়ে নিজেদের রাজ দরবারে রাখতেন। কিন্তু এই যুগে দাঁড়িয়ে, কথাগুলো বিশ্বাস করানোটাই বড় challenge. শুধু আপনারা নয়, গোটা বিশ্বেই এক ছবি। ভূত জিনিসটাই এমন আজগুবি ভাবে বাজারে প্রচারিত হয়ে আছে, যে আমরা সত্যিকারের বিজ্ঞান টা ভুলে, অন্যদিকে ক্রমাগত ছুটে চলেছি।"
"ভূত আছে, আপনি বিশ্বাস করেন?" দর্শক আসনের শেষ প্রান্তে একটি কটাক্ষ যেন উঠে আসে।
"আমার বিশ্বাসএ আপনারা বিশ্বাস করবেনই বা কেন। তবে এটুকু বলতে পারি, খোদ Bible এও ভূতের উল্লেখ আছে।"
"Holy Bible এ ভূতের উল্লেখ?" পূর্ব বক্তাই আবার প্রশ্ন তোলেন।
"The Old Testament, Samuel এর অধ্যায়ে, রাজা Saul এর প্রসঙ্গে ভূতের উল্লেখ আছে। এমনকি স্বয়ং Jesus কে অব্দি New Testament এ Holy Ghost হিসেবে তুলনা করা হয়েছে, যখন উনি মৃত্যুর পর আবার ফিরে আসেন, নিজের ১২জন শিষ্যের সাথে দেখা করতে। শুধু তাই নয়, হোমারের ইলিয়াড-ওডিসি পড়ে দেখুন, ভূতের উল্লেখ পাবেন। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে এই অলৌকিক বিষয়গুলো মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে যায়। নিছক ব্যবসায় রূপান্তরিত হয় ভৌতিক ঘটনা। Europe এ witch related যে নোংরামি সে যুগে হয়েছিল, তা আজও মানবিকতার দিক দিয়ে লজ্জাজনক।"
"তারমানে এই ওঝা, ঝাড়ফুঁক, ভূতে পাওয়া, এই সবকিছু ব্যবসা?" দর্শকদের মধ্যে থেকে প্রশ্ন আসে।
মাথা নিচু করে একটু হেসে নেয় শুভ। "আমার স্ত্রী আমায় বলতেন, ভূতনাথ। হেহে! ভূতেদের বন্ধু। তাদের রক্ষার্থে যেন কোমড় বেঁধে নেমেছি। আপনার গায়ে যদি আমি এই একগ্লাস জল ছুড়ে মারি, আপনার কি অবস্থা হবে? খারাপ ভাবে নেবেন না।"
"ভিজে যাবো। আবার কি হবে।"
"না যদি সত্যিই করতাম, নিশ্চই মারধর খেয়ে যেতাম। যাক যে যাক। আমি যেটা বোঝাতে এই উল্লেখ করলাম। ভূত বা ভৌতিক বিষয়গুলো আমাদের অনুভূতি। একজন অন্ধ মানুষ যেমন স্পর্শ করে, গন্ধ শুকে, কোন কিছুর উপস্থিতি feel করে, আমাদেরও এই paranormal events গুলো কে feel করতে হয়। আমার ছুড়ে দেওয়া গ্লাসের জলে আপনি যে ভিজে গেলেন, এটা যেমন fact. আবার উল্টোটাও হতে পারে। যার দিকে ছুড়ে মারলাম, সে যদি সময় মত নিজেকে সরিয়ে নিতে পারে, তাহলেই ভিজে যাওয়ার বিপদ থেকে তার মুক্তি।"
"তার মানে?" একসাথে গোটা hall ঘর থেকে প্রশ্নটা উঠে আসে।
"মানে, পুরোটাই psychological. একজন মানুষ যদি ক্রমাগত কোন মৃত মানুষের কথা মনে করেন, তাহলে তার নিজের মস্তিস্কই তাকে সাহায্য করে সেই মানুষটার উপস্থিতি কে feel করতে। এই যে বিশ্বাসটা, এটাই হল গ্লাসের জলে ভিজে যাওয়া। আবার যে সময় মত নিজেকে সরিয়ে নিল, সে ভিজলো না। বোঝাতে পারলাম?"

"তার মানে, hallucination?" সামনের সারির একজন বয়স্ক মহিলা প্রশ্নটি করেন।
"সাহেবরা এখন অন্য কথা বলেছেন। Schizophrenia বলে একরকম মানসিক রোগ হয়। যেখানে একজন মানুষ কোন একজন বা একটি প্রাণীকে চোখের সামনে দেখতে পান যা কিনা সম্পূর্ণরূপে তারই মস্তিষ্কপ্রসূত। আগেকার দিনে, এরম কান্ড দেখলে ওঝা ডাকা হত।  আবার আরেক রকম মানসিক রোগের নাম হল DID, বা নিজের পরিচিতি হারিয়ে সম্পূর্ণ অন্য একজনের চরিত্র হিসেবে নিজেকে ভেবে নেওয়া। যাকে গ্রামে গঞ্জে ভূতে পাওয়া বলে।  অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রথমবার এই বিষয়গুলোর ওপর নতুন করে ভাবনা শুরু হল। একটা নতুন শাখা হল বিজ্ঞানের, যেখানে paranormal events গুলোর সাথে মানুষের অভিব্যক্তি ও psychological রোগের মধ্যে তুলনামূলক বিচার শুরু হল। পঞ্চদশ শতাব্দীতে হেনরিখ ক্রেমার, ম্যালিয়াস এনারা এইসব বিষয়গুলোর কিছু ভ্রান্ত ব্যাখ্যা দিয়ে, কিছু ব্যবসায়ী মানুষের পেট এর ভাত জোগাড় করে দিয়ে যান। তারা মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে দিব্য নিজেদের প্রাসাদ তৈরী করে ফেললেন। Edgar Cayce, Helena Blavatsky, Bill Thompson প্রথমবার এইসব বুজরুকদের কেল্লায় আঘাত হানেন। বিশ্বাসযোগ্য বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মানসিক ব্যাধি, ও অলৌকিক ঘটনার পার্থক্য করে দেখান।"
"মানে demonology, বা ওই psychic studies এর মতন?"
"এগুলোতো theory, আধুনিক যুগ কি আর শুধু কেতাবে বিশ্বাস করে বলুন? এনারা science এর একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করে যান।"

"কিন্তু আপনার কথা মত তাহলে ভূত কেবল অনুভূতি, আর কিছু নয়?"
"এই hall থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পর, যদি আপনার হঠাৎ মনে পরে, table এর ওপর নিজের mobile phone টা ফেলে গেছেন, কি করবেন? নিশ্চই ফেরত আসবেন? মৃত্যুর পরেও তাই হয়। কোন অসমাপ্ত কাজ থেকে গেলে, আত্মার মুক্তি ঘটে না। আমাদের খোদ কলকাতা তে এরম একটি ঘটনা আছে। Sir Rodger Monson সাহেব ছিলেন নৌসেনার কাপ্তান। বাণিজ্যিক জাহাজগুলিকে জলদস্যুদের হাত থেকে বাঁচিয়ে বন্দর অব্দি পৌঁছে দেওয়া ছিল তাঁর কাজ। Bay of Bengal এ একবার একসাথে প্রায় অনেকগুলো বাণিজ্যিক জাহাজ এসে পৌঁছায়। আন্দামানের কিছু জলদস্যুর ভয় সে সময় ওই পথে যাতায়াত করা যেত না। জরুরি তলব আসে Monson সাহেব এর। তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে যাওয়ায় উনি নিজের সাধের ছড়ি ও তামাক খাওয়ার পাইপটি নিয়ে যেতে ভুলে যান। সে যাত্রায় Monson সাহেব মারা যান। তার দেহ সমুদ্রেই হাড়িয়ে যায়। তখন তাঁর পছন্দের জিনিস পত্র, পোষাক ইত্যাদি সমাধিতে রেখে দেওয়া হয়। বেশ কিছুদিন পর থেকেই বাড়িতে উপদ্রব শুরু হয়। Monson সাহেব এর কাজের ঘর কেউ যেন এলোপাথাড়ি ভাবে অগোছালো করে দিয়ে যায়। শেষে Monson সাহেব এর মেয়ে Clara Monson আবিষ্কার করলেন, তাঁর বাবার প্রিয় ছড়ি ও পাইপটা সমাধি তে দেওয়া হয়নি। জিনিস দুটো সমাধিস্ত করে আসার পর সব উৎপাত বন্ধ হয়ে যায়। এই যদি ভারতীয় পরিবার হত? বাড়িতে পুরুত ডেকে জাঁক-যজ্ঞ লাগিয়ে দিত। কিন্তু science এর ভাষায় এটা একরকম Resonance Haunting. সাহেব নিজের অসমাপ্ত কাজটা করে যেতে চেয়েছিলেন, আর সেটাই জানাবার চেষ্টা করতেন।

"বাপরে !" একটা চাপা বিস্ময় এবং ভয় মেশানো আলোচনা দর্শক আসন থেকে ভেসে আসে।  

"আপনারা যেমন  demonology, elemental, psychic events এর কথা বললেন। আজ থেকে বহু বছর আগে, Egyptian রা  তাদের Book of Dead এ মৃত মানুষের ইচ্ছেপূরণ করে দেওয়ার কথা বলেগেছিলো। এমনকি বৌদ্ধ ধর্মেও তাদের Bardo Thodol বইতে এসব বিষয়ের যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।"

"আপনি এসব বিষয়ে কাজ করেছেন?"

"আমার জীবনের গত ৭ বছর, আমি এই কাজের জন্যেই দিয়ে এসেছি। এখনো আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি, সেই মুহূর্ত কে প্রত্যক্ষ করার, বা কোন মৃত মানুষের ইচ্ছেটা জেনে, সেটা পূরণ করার।"

"কিন্তু এদের সাথে যোগাযোগ সম্ভব কিভাবে ?"

"According to Ronald Penn, আমাদের চরম অসহায় অবস্থায়, বা অসুস্থতায়, বা একাকিত্বে, বিষণ্ণতায়, sixth sense trigger হয়। ভয় না পেয়ে বা surrender না করে, ধৈর্য ধরে যদি অপেক্ষা করা যায়, then success হাতের মুঠোয়।"

"আপনি দেখা পেয়েছেন?"

"আশা করি, আমার next যে seminar এ আপনাদের সাথে আবার দেখা হবে, এই সব প্রশ্নের কিছু হলেও উত্তর আমি প্রমাণ সহ সঙ্গে করে নিয়ে আসতে পারবো।"

Conference hall এর বাতি জ্বলে উঠতেই একটা গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। মৌমাছির চাকে ঢিল পড়লে যেমন শব্দ আসে, অনেকটা সেরকম। অনেকে শুভময় এর dais এর সামনে গিয়ে তাকে অভিবাদন জানায়। অনেকে বাকি থেকে যাওয়া তথ্যের সম্মন্ধে প্রশ্ন করে। সেই ভিড়ের মধ্যেই পাঁচজন কলেজ পড়ুয়া এগিয়ে আসে। পলাশ, জ্যোতি, তানিয়া, বরুণ আর নীলাব্জ। এরা সামনে এসে সরাসরি একটাই কথা বলে। Sir আপনি যা কাজ করেন, আমাদের ও শেখান। ব্যাস, যাত্রা শুরু হয় শুভময় এর নতুন কাজে। 

                                                                     //৩//
ICCUতে shift করার পরে বারুণে এর mobile, ভিজে যাওয়া জামাকাপড় ফেরত পায় পলাশরা। উলুবেড়িয়া বাজারপাড়া থেকে ডানদিকে যে রাস্তাটা বৃন্দাবনপুর এর দিকে গেছে। সেখানকার এক British আমলের পুরনো বাড়িতে Supernatural events এর সন্ধান পায় ওরা।  কলকাতা থেকে পুরো team আর set up নিয়ে চলে আসে সেই বাড়িতে। প্রায় ১৬কাঠা জমির ওপর বিশাল বাড়ি, অবশ্য পোড়ো বাড়ি বললেই ঠিক বলা হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের কিছুটা অংশ মেরামত করিয়ে সেখানে একঘর ভাড়াটে থাকেন। শক্তিপদ দত্ত এর পরিবার,তাদের ছোট মেয়ের ক্রমাগত অসুখে ভোগা এবং অদভুত আচরনে চিন্তিত হয়ে যোগাযোগ করেন শুভময়ের সাথে। দিনক্ষণ decide করে ওরা চলে আসে সেই বাড়িতে। বিভিন্ন ঘরে. বাগানে, ছাতে, নিজেদের কাজের যন্ত্রপাতি set করতে ব্যস্ত ছিল সবাই। এদের মধ্যে জ্যোতি আর বরুণ গিয়েছিল বাগানে camera র thermal detectors set করতে। কাজের মাঝে bathroom যাওয়ার জন্যে জ্যোতি বাড়ির ভিতর একবার যায়। কিন্তু ফিরে এসে দেখে যন্ত্রপাতি সব ভেঙে পরে আছে, বরুণ নেই। প্রথমে সে ভেবেছিলো বরুণ বোধয় ভয় পেয়ে ঘরের বাকিদের ডাকতে গেছে। কিন্তু সেখানে গিয়েও জানতে পারে যখন বরুণ আসেনি। খোঁজ শুরু হয়। ওদিকে আবার শুভময় বাড়ির দোতলার একটা ঘরে নিজের machine reading দেখে বিস্মিত হয়ে কলকাতা রওনা হয়েছিল। দুটো জরুরী জিনিস আনবার জন্যে। শুভময় কে phone করে জানা গেলো বরুণ তার সাথেও কলকাতা যায়নি, সবাই দুশ্চিন্তায় পরে যায়। মাস কয়েক আগে নীলাব্জ এই কাজের মধ্যে থাকাকালেই অসুস্থ হয়ে পরে। এখনো তার মানসিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। এখন আবার বরুণ।

প্রায় ঘন্টা তিনেক খোঁজার পরেও বরুণ কে পাওয়া যায়না। এমন সময় আবার দত্ত বাবুর ছোট মেয়েও উধাও। তাকেও নাকি আধ ঘন্টা হল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জ্যোতিই তখন আবিষ্কার করে মিনি কে। বাগানের একদিকে পরিত্যক্ত কুয়ো ছিল একটা। মিনি তার সামনেই দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথা বলছিলো। জায়গাটা এতই আবর্জনা পরিপূর্ণ সেদিকে কোনও দিনও কেউ যায়নি। কুয়োর কাছে গিয়ে মিনি কে পাওয়ার পর কুয়োর ভেতরে আধমরা অবস্থায় বরুণ কেও পাওয়া যায়। লোকজন জোগাড় করে কুয়ো থেকে ওর দেহটা তুলতে আরো খানিকটা সময় যায়। দত্তবাবু এখানকার স্থানীয় একজন ডাক্তারকেও নিয়ে এসেছিলেন। কুয়ো থেকে তোলার পর, তিনি জানান, বরুণের প্রাণ এখনো আছে। যত জলদি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে গেলে এখনো বাঁচানো যেতে পারে। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর emergency কিছু treatment করে, ICCU তে shift করা হয়।

"বরুণ এর বাড়িতে খবর দিয়েছিস কেউ?" পলাশ জিজ্ঞেস করে।
"এখনো কিছু জানানো হয়নি। বরুণের মা এর cardiac problem. এই খবর পেলে আরেক কেলেঙ্কারি হলে সর্বনাশ।" জ্যোতি বলে।
"Case টা যে কি হল বোঝা যাচ্ছে না। সবটা খুলে বলতো জ্যোতি।" তানিয়া জানতে চায়।

"শুভ দার সাথে আমি আর বরুণ উত্তর দিকের একটা ঘরে কাজ করছিলাম। ওই ঘরের জালনা দিয়ে বাগানের একটা অংশ দেখা যায়। শুভ দা বাগানের মধ্যে কিছু একটা দেখতে পায়। তারপর আমাকে আর বরুণ কে ওই জায়গাটায় machine গুলো লাগিয়ে আসতে বলে।"
"তারপর?"
"ভালোই কাজ হচ্ছিলো। বরুণ গাছের সাথে machine গুলো fit করছে, আর আমি camera নিয়ে কতগুলো জায়গা shoot করছি। কুয়ো টা আমরাও দেখেছিলাম। কিন্তু সাপের ভয়ে ওদিকে যাইনি। এরপর bathroom যাবো বলে আমার gear গুলো রেখে বাড়ির ভিতরে যাই। বরুণ কাজ করছিলো। বাড়ির ভিতর ঢুকে শুভ দার সাথে দেখা। একটা ভালো link পেয়েছে বলে জানায়। এবাড়িতে strong একটা negative energy stored হয়ে আছে। Laser grid, Thermo cam আর ectosheild টা আনবে বলে শুভ দা বেরোচ্ছিল। ওখানকার খবর জানিয়ে আমিও ভিতরে যাই, শুভ দাও বেরিয়ে যায়। ফিরে গিয়ে দেখি জিনিস পত্র ভাঙা। বরুণ নেই।"

"বরুণের mobile টা কাজ করছে?" পলাশ জানতে চায়।

হাসপাতাল থেকে ফেরত দেওয়া জিনিস গুলো থেকে mobile টা বের করে নেয় জ্যোতি। "জল ঢুকে গেছে এত। একি আর চলবে?" পলাশের দিকে বাড়িয়ে দেয় mobile টা। সত্যি শোচনীয় অবস্থা mobile এর। এক মাসও হয়নি নিজের টাকা জমিয়ে কিনেছিল বরুণ।  আজ সে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। Mobile টা খুলে সিম আর memory card টা বের করে নেই পলাশ। অন্য একটা মোবাইলে সেগুলো লাগিয়ে on করতে missed call alert গুলো ঢুকতে শুরু করে। Sms ও ঢোকে অনেকগুলো। memory card এর image folder এ ঢুকে পলাশ শেষ ছবিগুলো দেখতে শুরু করে। জ্যোতি আর বরুণ যেখানে কাজ করছিল সেখানকার অনেকগুলো ছবি তুলেছিল সে। উপস্থিত সবাই মোবাইলের screen এর দিকে মন দেয়। একটা video ও করেছিল বরুণ।  সেটা চালু করতে সেই মুহূর্তের ঘটনা কিছু জানা যায়।

video চলতে শুরু করে.......
"বাড়ির পশ্চিমদিকের বাগানে আমি আর জ্যোতি কাজ করছিলাম। শুভ দা এখানে কিছু একটা দেখতে পেয়ে আমাদের পাঠায়। জ্যোতি বাড়ির ভিতরে গেছে। Thermal sensor গুলো লাগানো শেষ, কিন্তু monitor এ কোনো pulse receive হচ্ছে না। Walky-talkie তে একটা static শোনা যাচ্ছে।"
Video র মধ্যে সেটা শোনায় বরুণ। এমন সময় ঝুপুস করে একটা আওয়াজ ভেসে আসে video থেকে। "কুয়োর দিক থেকে এলো শব্দ টা।  আবার বরুণের মুখ ভেসে ওঠে screen এ। ওদিকটায় আমরা যায়নি সাপের ভয়ে। কিন্তু এখন যেতেই হচ্ছে। ওই যে আবার। আবার সেই শব্দ। জলের মধ্যে ভারী কিছু ফেললে ঠিক যেমন আওয়াজ আসে। বাড়িটা ঠিক আমার পিছন দিকে। এদিকে প্রাচীরের ওপারে ধানক্ষেত টা।"
পুরোনো অংশ থেকে বেশ কিছুটা বিরতি কাটিয়ে আবার শুরু হল। বরুণের গলা শোনা গেল আবার।
"শুভময় দা এসেছিলো। কলকাতা যাচ্ছে কয়েকটা জিনিস নিয়ে আসতে।  এই বাড়িতে আমরা যা খুঁজছি, তার presence আছে।"
Screen  এ কুয়োর ছবি ভেসে ওঠে।
"এখন থেকেই শব্দটা আসছিলো। কিন্তু কুয়োর জল তো শান্ত। কোন কিছু পড়েছে বলে তো মনে হচ্ছে না! চারপাশেও সেরম কিছু পরে নেই। এদিকে কয়েকটা নারকেল গাছ আছে বটে, কিন্তু সেগুলো থেকে ডাব পড়লেও মাটিতে পড়বে, কুয়োতে নয়।"

আশেপাশের গাছগুলোর ছবি video তে দেখা যাচ্ছে, এমন সময় কিছু একটা হয়। কেউ যেন বরুণ কে এসে ধাক্কা মারে। কুয়ো তে পরে যাওয়ার free fall টুকু shoot হয়েই সব অন্ধকার। স্তম্ভিত হয়ে বসে আছে team মেম্বারদের সবাই। ঘটনার প্রেক্ষাপট টা তাদের সব হিসেবের বাইরে।

                                                                     //৪//
"আচ্ছা শুভ দা, এই যে ব্যাপারগুলো প্রত্যক্ষ করা। এগুলো কি সত্যিই সম্ভব হয়?" শুভময়ের studio তে তারা পাঁচ বন্ধু মিলে এসেছে। বিদেশ থেকে নিয়ে আসা যন্ত্রপাতি গুলো দেখতে দেখতে প্রশ্নটা করে পলাশ।
"অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়। ধরে নে একটা রাস্তা। সেখান দিয়ে প্রায়ই কতলোক যাতায়াত করে। এমন একজন ব্যক্তি, হঠাৎ সেই পথের এক বিশেষ জায়গায় বিশেষ দিনে, গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছিল। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে তার সেদিন অকাল মৃত্যু হয়। ইতিহাস সাক্ষী আছে, অনেক case study ও আছে। যে সেই স্থানে সেই বিশেষ লোকটির আত্মা আসে। এটাই হল resonance haunting. বেপারটা আপেক্ষিক। এর পিছনে আরো অনেক theory আছে। কিন্তু বিষয়বস্তু এটাই।"
"এই যে EMF meterগুলো এগুলো function করে কি করে?"
"Medium শব্দটা শুনেছিস তো? প্ল্যানচেট এ যারা বসে, তাদের মধ্যে একজন medium হয়। ১৮৫৪ এর পর থেকে এই মাধ্যম ব্যবহার এর চল বেড়ে যায়। ঘরে ঘরে তখন medium এর আবির্ভাব হতে শুরু করে। New Yorkএর Fox Sistersদের কথাই ধরে নে।"
"হ্যা শুনেছি। Neo-spiritualism."
"অন্যদিকে আবার Maxwell শুরু করলেন Electromagnetism নিয়ে গবেষণা। সেটা ওই ১৮৫০ এরই দিকে।"
"Maxwell মানে সেই James Clerk Maxwell? ওরে বাবা! উনিও এসবে ছিলেন?"
"সেরম সরাসরি যোগাযোগ এর কোন ইতিহাস ছিল কিনা আমার অবশ্য জানা নেই, তবে তাঁর আবিষ্কার ও theory গুলো Spiritualism এর গবেষণাগুলি কে, কিছুটা হলেও backup দেয়। আলোও যে একরকম electromagnetic wave, সেটা তাঁরই ব্যাখ্যা। উত্তরসূরী Hertz, Oscillating electrical circuit আবিষ্কার করে electromagnetic wave পরিমাপ করার উপায় বলে দিয়ে যান।"
"তারপর?" বাকি সদস্যরাও এগিয়ে আসে আলোচনায়। শুভময় বলে চলে।
"গীতায় কি বলেছিল মনে আছে? আত্মা অবিনশ্বর। আত্মার বিনাশ নাই। এই Maxwell এরই দুই নিকট বন্ধু বা অনুগামীও বলতে পারিস, Peter Tait এবং Balfour Stewart ইথার এর বিভিন্ন ব্যাখ্যার যোগসূত্র স্থাপন করে একটি বিখ্যাত বই উপহার দিয়ে যান তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কে। বইটার নাম The Unseen Universe."
"নামটা শোনা। কিন্তু এগুলো তো বিজ্ঞানের বই, এর সাথে আত্মার সম্পর্ক কোথায়?"
"এই Tait সাহেব বললেন, 'mind survive eternally, as the configurations of spirit in the ether.' ভেবে দেখ, আমাদের প্রাচীন পুঁথিগুলোতে যে রহস্যের ব্যাখ্যা বহুযুগ আগে থেকেই দেওয়া ছিল। সেটা আমরা কত পরে জানতে পারলাম।"
উপস্থিত পাঁচজনের মুখে কথা নেই। অবাক বিস্ময়ে তারা যেন বাকশক্তি হারিয়ে বসেছে। শুভময়ের ব্যাখ্যাগুলি তাদের মনের প্রতিটি কোণে যেন নতুন চিন্তার দিগন্ত কে উন্মোচিত করে দিচ্ছে বারবার।

"আমাদের মন, বিশেষ করে conscious mind, যে একরকম electromagnetic field তৈরি করে, এই কথা তো প্রমাণিত সত্য। তাহলে মৃত্যুর পরে, সেই মনের শক্তিটা কি হয়? শক্তির যদি বিনাশ নাই হয়, তাহলে? ব্যাখ্যা বলছে, এই শক্তিটাই মৃত্যুর পরে দেহ থেকে মুক্তি পায় এবং পরিবেশে বিরাজ করে। আর সেই শক্তিকেই পরিমাপের এককে ফেলে, তাদের উপস্থিতি কে প্রমাণ করতে এইসব যন্ত্রের আবিষ্কার।"

"আচ্ছা, একজনের আত্মা কি আরেকজন জীবিত মানুষের মধ্যে আসতে পারে?" তানিয়া আনমনেই প্রশ্নটা করে বসে।

"Teleportation of soul. হ্যা হতে পারে। তবে cinema তে যেমন দেখিয়েছে, সেরম নয়।" হাসতে হাসতে বলে শুভময়।
"মানে?"
"আত্মা একটা concept, মানুষের বানানো একটা ধার্মিক বিশ্বাস। Teleportation এর যে আসল ব্যাখ্যা তার জন্যে যে বিপুল পরিমানের শক্তি প্রয়োজন, সেরম শক্তির হদিশ এখনো অব্দি বিরল। তবে transformation of concept, এইটা সত্যি হতে পারে। কারণ তার নজির আমাদের আশেপাশে অনেক আছে।"
"একটু contradictory হয়েগেলো না ব্যাপারটা?" পলাশ বলে ফেলে।
"এটাই তো বিজ্ঞানের মজা। যদি সন্দেহই থেকে থাকে, কাগজ কলম নিয়ে নেমে পর। হাতেনাতে প্রমান জোগাড় কর। নিজের সন্দেহ নিজেই দূর কর। এই যেমন আমাকেই ধরে নে।"

"তুমি প্রিয়াদিকে দেখতে পাও বলেছিলে, সেটা কি সত্যি?"

শুভময় খানিক চুপ করে যায়। তারপর দেওয়ালে টাঙানো প্রিয়ার ছবির দিকে তাকিয়ে বলে, "এরা কি বলছে শুনেছ?"

এত গম্ভীর ভাবে কথাগুলো বলে শুভময় যে সবাই সেই দিকেই তাকায় যেন সত্যিই প্রিয়া ঐদিকে দাঁড়িয়ে আছে। এদের মুখের ভাব দেখে আর থাকতে না পেরে শেষে হেসেই ফেলে শুভময়। রসিকতা টা ধরতে পেরে তখন বাকিরাও হাসিতে যোগ দেয়।

প্রিয়ার ছবিতে টাঙানো মালাটা শুকিয়ে গেছিলো। এদের হাসির ফাঁকে সেটা টুক করে খসে পরে মাটিতে। ব্যাপারটা কারুর নজরে পড়েনা।

                                                                     //৫//
হন্তদন্ত হয়ে ICCUর সামনে পোঁছায় শুভময়। বাইরে বসার জায়গায় team member দের বাকিরা জড়ো হয়ে আছে।
"এই যে, তোমরা এখানে? ওদিকে খবর কি?" পলাশ এর সামনে এসে দাঁড়ায় শুভ। পলাশ এর চোখদুটো লাল হয়ে আছে। ক্লান্তির ভাব ও স্পষ্ট। "ডাক্তার রা বলছে বিপদ কাটেনি এখনো। কিছু বলতে পারছে না।"   
"একবার ভেতরে যাওয়া যাবে?" শুভময় জিজ্ঞেস করে।
"মনে হয় না যেতে দেবে। এখানকার head যিনি এখনো এসে পৌঁছান নি। কাজেই কি যে চিকিৎসা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না।"

"তুমি কলকাতা চলে যাওয়ার আগে তো বরুনের সাথে দেখা হয়েছিল তোমার? কি বলেছিলো ও?" তানিয়া এক কোণে বসে কাঁদছিলো। হঠাৎ উঠে এসে প্রশ্নটা করে।

শুভময় খানিকটা ঘাবড়ে যায়। "আমায় তো সেরকম কিছু বলেনি? কুয়ো থেকে নাকি শব্দ আসছে একটা, সেটা দেখতে যাচ্ছিলো। আমি বললাম যা করবে সাবধানে। আমি না আসা অব্দি কোনো monitoring এ বেড়িও না।"

কথাগুলো যেন ঠিক বিশ্বাস হয়না তানিয়ার। এমন সময় ward এর ভিতর থেকে ডাক পরে। পলাশ ও শুভময় এগিয়ে যায়। বাকিরা দরজার সামনে এসে wait করতে থাকে।

"তুমি এখানেই থাকো শুভ দা। এরা একজনের বেশি allow করবে না।" পলাশ শুভ কে বাধা দিতে যায়।
"আরে তুমি চল না। এরা আমায় কিছু বলবে না।"

"বরুন সেনগুপ্ত আপনার কে হন?" attendant desk এ দাঁড়িয়ে প্রশ্নটা করেন একজন। ইনিই বোধয় head of the department.
"আমাদের বন্ধু।"
"তা এরম হল কি করে?" case file টা দেখতে দেখতে একবার আড়চোখে পলাশ কে দেখে নেন ডাক্তার।
"কুয়োর পাশে ছবি তুলছিল। হঠাৎ কিছুতে ধাক্কা খেয়ে বা হোঁচট খেয়ে কুয়োর ভিতর পরে যায়।"
"তুমি সেখানে ছিলে ?"
"আজ্ঞে না।"
"তাহলে জানলে কেমন করে?"
"কুয়োতে পরে যাওয়ার আগে অব্দি তোলা একটা video এই মাত্র দেখলাম ওর mobile  এ।"
"তা ওকে কুয়ো থেকে তুলতে এত দেরী হল কেন? এটা একটা পুলিশ case জানো তো?"
"আপনি কি পুলিশ?" পলাশ এর ধৈর্য হারায়।
"মানে?" একটু বেসামাল হয়ে যান ডাক্তার এরম প্রশ্নে।
"ওর কি হয়েছে? এখন কেমন আছে? আদৌ বাঁচবে কি?"
"তোমরা আজকাল কার ছেলে ছোকরা, তোমাদের সাথে কথা বলাও ঝক্কি। বরুনের দুটো lungs এই অনেক জল ঢুকেছে। এখন respiratory support দেওয়া হয়েছে। পরে যাওয়ার সময় মাথায় দুবার ধাক্কা লাগে। তার impact এ brain কতটা damage হয়েছে সেটা CT scan না দেখলে বলা যাবে না। এই মুহূর্তে যা condition, ৪৮ঘন্টার আগে কিছু commit করাটা possible না।"
"CT scan তো হয়েছে?"
"হ্যা হয়েছে, তবে এখনো plates গুলো আসেনি। আমি এখন আধ ঘন্টা OPD তে আছি। যদি এরা তার মধ্যে তৈরী করে আমায় দেখাতে পারে, then কিছু একটা idea আমরাও পাবো।"
"আপনি একটু বলেদিননা তাড়াতাড়ি করতে?"
"বরুনের বাড়ির লোকজন কেউ এসেছেন?"
"না, ওর মা-বাবা দুজনেই খুব অসুস্থ। এখনো জানানো হয়নি।"
"কাউকে তো লাগবে। এসব case এ guardian কারুর থেকে consent নিতে হয়। বড় কাউকে ডেকে নাও।"
"আমাদের sir আছেন। ওনাকে দিয়ে হবে না?"
"তারপর patient এর relatives এসে claim করলে কিছু? খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় তো patient কে আমরা পাইনি। চেষ্টা করো বাড়ির কাউকে নিয়ে আসতে। আর তোমাদের যে sir আছেন, ওনাকে আমার সাথে OPD তে দেখা করতে বল।"

এতক্ষনে খেয়াল হয় পলাশের। শুভ দা কে দেখা যাচ্ছে না কোথাও। এই তো ছিল। কোথায় উধাও হয়ে গেলো? বরুন কে যে ঘরে রাখা হয়েছে, তার সামনে এসে দাঁড়ায় পলাশ। দরজার কাচের অংশ দিয়ে শুভ দার দেখা মিলল। ডাক্তারের সাথে কথা বলতে সে যখন ব্যস্ত ছিল। ফাঁক বুঝে বরুনের ঘরে ঢুকে গেছে শুভ দা। পলাশ ও দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতে যাবে এমন সময় nurse এসে আটকে দেয়।
"আপনাকে ভিতরে যাওয়ার permission কে দিলো?"
"আরে আমাদের একজন ভিতরেই আছে। তাকে ডাকবো বলে ভিতরে যাচ্ছিলাম।"
Nurse টি নিজেও ভিতরে উঁকি মেরে দেখে।
"কোথায় কে?"
"আরে ওই তো। ......" পলাশ নিজেও কথা হারায়। curtain গুলোর আড়ালে চলে গেছে শুভ দা।
"আমাদের মাস্টার মশাই, শুভময় মল্লিক। ওই পর্দাগুলোর আড়ালে দাঁড়িয়ে আছেন। ওনাকে ডেকে দিন।"
"আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি বাইরে যান, যদি সত্যিই কেউ থেকে থাকে, তার ব্যবস্থা করছি।"

একরকম জোর করেই পলাশ কে বের করে নিয়ে যায় security. Ward এর বাইরে আসা মাত্রই বাকিরা ঘিরে ধরে। পলাশ এক এক করে ডাক্তারের সব কথা বলে। বাড়ির লোককে ডাকার বিষয়েও জানায়। আর শুভ দা যে সবার চোখ কে ফাঁকি দিয়ে দিব্য বরুনের কাছে পৌঁছে গেছে সে কথাও জানায়। তানিয়া এই খবর টা শুনে একটু যেন অস্বস্তিতে পরে যায়। আজ প্রায় ৩ বছরের সম্পর্ক তার বরুনের সাথে। এরকম ভাবে বরুন চলে যাবে, মেনে নেওয়াটা কষ্টের। তানিয়ার মনে আরো সন্দেহ জেগেছে শুভময় কে নিয়ে। বরুনের সাথে শুভদার  দেখা হওয়ার পর মিনিট দুই যেতে না যেতেই accident টা হয়। একটা লোক কুয়োতে পরে গেল মানে নিশ্চই শব্দ হয়েছে। Simple ignore করে গিয়েছিল কি শুভ দা, নাকি শুভ দা নিজেই ভৌতিক বিষয়গুলো কে actual প্রমাণ করার জন্যে ধাক্কা মেরেছিলো বরুন কে? শুভময়ের কিছু আচরণ যে আর পাঁচজন স্বাভাবিক মানুষের মত নয়, সেটা কিছুদিন যাবৎ খেয়াল করেছে তানিয়া। Supernaturals এর ওপর শুভময়ের যে obsession সেটা বাড়াবাড়ি বলা যেতেই পারে।

একটা phone আসায় চিন্তার সূত্র ছিন্ন হয় তানিয়ার। বরুনের sim card টা তানিয়ার mobile এ লাগানো হয়েছিল। কাঁপা কাঁপা গলায় phone টা receive করে তানিয়া।
"Hello!"
"আমি উলুবেড়িয়া থানার SI বলছি। শুভময় মল্লিক নামের কাউকে চেনেন?"
তানিয়া ফোনটা পলাশ এর দিকে এগিয়ে দেয়।
"Hello, কে বলছেন?"
"উলুবেড়িয়া থানা থেকে বলছি। শুভময় মল্লিক নামের কাউকে চেনেন?"
"আজ্ঞে হ্যা, আমার মাষ্টার মশাই। কেন?"
"আজ কিছুক্ষন আগে, highway তে একটা accident হয়। কালো রঙের Hyundai Verna. মৃত বেক্তির wallet থেকে victim এর নাম জানা যায়। আর তার mobile এর last dial এ এই নম্বরটা দেখে phone করছি। আপনারা কেউ একটু উলুবেড়িয়া highway তে 2nd culvert এর কাছে চলে আসুন।"
"কোথাও একটা ভুল হচ্ছে আপনাদের। Sir তো আমাদের সঙ্গেই আছেন। আমরা উলুবেড়িয়া সুরক্ষা hospital এ আছি।"
"তাহলে কি ওঁনার গাড়ি টা কেউ চুরি করেছিল? কিছু বলেছেন উনি?"
"না, বোধয় উনি নিজেও জানেন না। আমাদের এক বন্ধু খুব অসুস্থ। তাকে নিয়ে আমরা খুব ব্যস্ত। আপনি এখানে চলে আসুন। Sir এর সাথে direct কথা বলে যান।"

Call টা কাটার পর সবাই উৎসুক হয়ে পলাশের দিকে এগিয়ে আসে। পলাশ এই মাত্র শোনা ঘটনাটা জানায়। তানিয়া এক কোণে চেয়ার এ বসে কাঁদছিলো। কথাগুলো শুনেই তড়াক করে লাফিয়ে ওঠে, তারপর ছুটে বেরিয়ে যায় waiting lobby থেকে ward এর দিকে। কেউ কিছু বুঝে ওঠবার আগেই দরজা খুলে সোজা চলে যায় বরুনের ঘরের সামনে। দরজায় লাগানো কাঁচের মধ্যে দিয়ে সে দেখে বরুন আর শুভময় কে। বরুনের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে শুভময়। একবার যেন তাকালো তানিয়ার দিকে। তারপর সেই পরিচিত হাসিটা। আসতে আসতে হাওয়ায় মিলিয়ে যায় শুভময়ের দেহটা।


                                                                 //৬//
সেই ঘটনার পর প্রায় সাতমাস কেটে গেছে। সেদিন ICCU এর দরজা দিয়ে কি দেখেছিল তানিয়া, কেউ জানে না। দরজার সামনে কিছুক্ষন দাঁড়ানোর পরেই তানিয়া অজ্ঞান হয়ে যায়। তারপর সেই রাতেই তানিয়া আত্মহত্যা করে। কারণ কিছু জানা যায়নি। অন্যদিকে accident এ মৃত ব্যক্তি যে শুভময় ছিল সেটাও সত্যি। হাসপাতাল চত্বর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও শুভময় কে না দেখতে পেয়ে, পলাশ ও জ্যোতি যায় পুলিশ এর সাথে। লাশ দেখে জ্যোতি শুধু বলেছিল 'অসম্ভব'। পলাশ নিজে অনেক ভেবেও কোন কুলকিনারা পায়নি। ৪৮ ঘন্টা লাগেনি। পরদিন সকালেই বরুনের জ্ঞান ফেরে। প্রায় বারোদিন হাসপাতালে থাকার পরে ছুটি পায়। তানিয়ার মৃত্যুর শোক তাকে এখনো তারা করে বেড়ায় বলে মনে হয়।

এই ঘটনার পরে অবশ্য শুভময়ের দল ভেঙে যায়। একমাত্র বরুন আর পলাশ কাজটা চালিয়ে যেতে থাকে। তারা মাঝে মধ্যেই আসে শুভময়ের studio  তে। দরকারি বই বা gadgets নিতে। জ্যোতি একটা বিলিতি পত্রিকা অফিসে photographer এর চাকরি পেয়ে চলে যায়। নীলাব্জ এখনো মানসিক হাসপাতালে। পলাশ একটা school এ পড়ায়, আর মাঝে মধ্যে এইসব বিষয়ে কাজ করে, লেখালিখি করে। একমাত্র বরুন, এই কাজটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছে।

শুভময়ের ইতিহাস তারা পরে জেনেছে ভালোভাবে। কলকাতা St. Xavier's থেকে Physics নিয়ে পাশ করে London এ চলে যায় শুভময় ১৯৯৮ তে। সেখানকার King's College থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করে EMF নিয়ে research শুরু করে। তারপর এইসব বিষয়ে interest পেয়ে পড়াশুনা শুরু করে। College এ থাকতেই প্রিয়া সিংহ নামে একজনের সাথে প্রেম ছিল, বিলেত যাওয়ার পরে বিয়ে। বেশিদিন অবশ্য সংসার করা হয়নি তাদের কারণ প্রথম সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায় প্রিয়া। বাচ্চাটাকেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। সেই থেকেই Paranormal ও psychic বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু। প্রায় পাঁচ বছর বাইরে থাকার পরেও প্রিয়ার শোক ভুলতে না পেরে, ওখানকার সব ছেড়ে কলকাতা চলে আসে। পুরোনো college এ গিয়ে নিজের কাজের সম্মন্ধে কিছু বন্ধুর কাছে বলায় তারাই সব বন্দোবস্ত করে।  Lecture, seminar আরো অন্যান্য events এর। ক্রমে পরিচিতি বাড়ে ও প্রতিষ্ঠিত হয় সে। যেসব যন্ত্রপাতি সে ব্যবহার করত, বেশিরভাগ বিলেতে থাকাকালীন সংগ্রহ করেছিল সে। তারপর এক এক করে, নিজের বাড়ি, studio এসব করে। নিকট আত্মীয় বলতে তার এক মামা ছাড়া আর কেউ ছিল না। কিন্তু স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ছিল না বলে শুভময়ের সাথে খুব একটা যোগাযোগ রাখতেন না। এখন অবশ্য আর যোগাযোগ রাখার প্রশ্নই ওঠে না।

ষ্টুডিওটা বরুন handover নিয়েছে। ওপর মহলে একটু পয়সা খাওয়াতেই legal papers জোগাড় হয়ে যায়। তারপর এদিক ওদিক পয়সা ঢেলে বেশ গুছিয়ে নিয়েছে ব্যবসাটাকে। শুভময়ের মত এখন সে ও সেমিনার দিতে যায়। লোকজন আসে ভৌতিক সমস্যা নিয়ে। সে সমাধান বাতলে দেয়। সেরকম বুঝলে নিজেই যায়। ১৭ই এপ্রিল ছিল প্রিয়ার মৃত্যুদিন। শুভময় এর ষ্টুডিও তে যাওয়ার সময় তাই কিছু ফুল কিনে নেয় পলাশ। সদ্য Mumbai থেকে ফিরেছে বরুন সেমিনার দিয়ে। বরুনের সাথে দেখা করাটাও উদ্দেশ্য ছিল। ঘরে ঢোকার সময়েই একটা বিষয় লক্ষ্য করে পলাশ।  দরজার বাইরে থেকে স্পষ্ট শুনতে পে বরুন কারো সাথে যেন কথা বলছে। এরকম ভাবে আরেকজন একলা ঘরে কথা বলত। শুভময়ের কথা তা মাথায় আসতেই দরজায় টোকা দে পলাশ। ভিতরে সব চুপ। বরুন এসে দরজা খুলে দেয়। ভিতরে ধূপের গন্ধ। প্রিয়ার বড় ছবিটা ফুল দিয়ে সাজানো। সামনে ধুপ দেওয়া হয়েছে। পলাশ কিছু না বলে নিজের কিনে আনা  ফুলগুলো প্রিয়ার ছবির সামনে রাখে। বরুন এর মধ্যে কেমন যেন একটা উসখুসে ভাব লক্ষ্য করে পলাশ।

"চা খাবি তো?" বরুন নিজেই শুরু করে কথা।
"হ্যা! তা মন্দ কি?" পলাশ একটা chair টেনে নিয়ে বসে।
"তাহলে একটু wait কর, আমি এক্ষুনি আসছি।" বরুন একটা thermo flask নিয়ে বেরিয়ে যায়।

শুভময়ের working table টা বেশ গুছিয়ে রাখা আজ। বিলিতি journals আর কিছু type করা papers রাখাছিলো একপাশে। একটা খুব পরিচিত জিনিস চোখে পরে পলাশ এর। শুভময়ের wallet . বরুন নিশ্চই আলমারি থেকে বের করেছে। এই wallet এ একটা বিশেষ জিনিস রাখত শুভ দা। মনে পরে যায় পলাশের। ১৮১৮ সালের ভুল করে mint হওয়া একটা তামার coin. এটার বৈশিষ্ট ছিল, শুভ দা বলত, আত্মার উপস্থিতি এই coin জানান দিত। যদি সত্যি কোন আত্মা এসে থাকে কাছে, সেই শক্তির প্রভাবে, এই তামার coin টাকে  টেবিল বা যে কোন সমতল জায়গায় ঘুরিয়ে দিলে, ঘুরতেই থাকে। এই কথার সূত্র ধরেই সাতমাস আগের সেই রাত টা মনে পরে যায়। নিজের মনেই হাসে পলাশ।  তারপর coin টা নিয়ে টেবিল এ ঘুরিয়ে দেয়। দুপাকে ঘুরেই coin  টা পরে যায়। আবার তুলে নিয়ে পাক দেয়।  ঘরের ভেতরে তাপমাত্রাটা যেন কয়েক পারদ নেমে গেল। একটা দমকা হাওয়া জানলা দিয়ে এসে ঢুকে পরিবেশ তা যেন থমথমে করেদিল। হঠাৎ current টাও চলে যাওয়ায় একটা আবছা অন্ধকার পরিবেশ তৈরী হয়। পলাশ এর অবশ্য সেদিকে খেয়াল নেই। Coin টা নিয়ে বেশ মজা পেয়ে গেছে সে। চতুর্থ পাক দেওয়ার পরেই পরিবর্তন টা খেয়াল করে সে। পিঠের ওপর দিয়ে ঠান্ডা একটা ঘামের স্রোত বয়ে যায়। এপ্রিল মাসে এরকম ঠান্ডা লাগার কথা নয়। উঠে জানলার দিকে যেতে গিয়ে খেয়াল হয় মেঝেটা যেন ভিজে আছে। ঘরে ঢোকার সময় তো এরকম ছিলনা। কোন জলের বোতল পরে গেছে কিনা দেখার জন্যে এদিক ওদিকে তাকাতেই বইয়ের আলমারির দিকে চোখ আটকে যায়। কুয়ো থেকে বরুন কে ঠিক যে অবস্থায়, যে পোষাকে তোলা হয়েছিল, সেইভাবে সে দাঁড়িয়ে আছে। ভিজে শরীর থেকে জল পরে মেঝের এই অবস্থা। আধ বোজা গলায় শুধু এটুকু শোনা যায় পলাশ মুখ থেকে....... "বরুন তুই? তাহলে। ..........."

ঘরের নীরবতা আরো প্রকট হয়ে ওঠে যেন কেবল একজনের উপস্থিতি কে জানান দিতে। বার্নিশ করা president টেবিলের মসৃণ তলের ওপর ক্রমাগত ঘুরে যাওয়া তামার coin এর খস খস শব্দ।    





        






বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

দিনের শেষে

                                                                            //১//
        পাড়াটা বোধহয় এরকমই শান্ত, নীরব। রাস্তার দুপাশে আলোগুলো ও যেন নিস্তেজ। এ` পাড়ায় কুকুরগুলো বেশ ভদ্র। অন্য পাড়ার লোক বা গাড়ি দেখলেও নিরুদ্বেগ।  বৃষ্টির বাড়ি খুঁজে পাওয়াটাই এখন সমস্যা।  সুভাষনগর ক্লাবের মাঠ পেরিয়ে তৃতীয় গলিতে চতুর্থ হলদে বাড়িটাই বৃষ্টিদের। ব্যাস! এইটুকুই যা সম্বল ছিল স্মৃতিতে। বাড়ির নম্বর , বৃষ্টির বাবা-মা এর নাম কিছুই জানা ছিল না আবীর এর। তবু সন্ধ্যেবেলা বৃষ্টির আবদার শুনে assignment টা নিয়ে ফেলে আবীর। বৃষ্টির আজ বিকেল থেকে খুব ইচ্ছে pizza খাওয়ার , কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না কারণ তার হাতে টাকা নেই, এদিকে ওর মা - বাবা ও বাড়িতে নেই। মনে মনে ছকটা কষে ফেলে আবির।  নিউ আলিপুর এর Domino's থেকে pizza কিনে বৃষ্টির বাড়ি পৌছে দিতে সময় লাগবে আধ ঘন্টা মত।  কাজেই চেম্বার সেরে বৃষ্টির এই সামান্য ইচ্ছেটুকু সে অনায়াসেই রাখতে পারে। ফোনে একবার address টা confirm করে নিলে ভালো হত।  কিন্তু তাতে surprise টা আর থাকত না। বৃষ্টির জন্যে নতুন কিছু করার thrill টাও ফিকে হয়ে যেত। তাইতো এভাবে ছুটে আসা pizza কিনে বৃষ্টির বাড়ি।

      এতক্ষনে একটা চেনা জিনিস চোখে পড়ল আবির এর। পাড়ার মাঝে একটা ছোট park, তার এক কোণে একটা ভাঙা দোলনা। রাতের phone call এ এই দোলনার গল্প সে শুনেছে।  এই park এ বৃষ্টি খেলতে আসতো ছোটবেলায়। এখন সে park টায় আর কেউ খেলে না। দোলনা টাও ভেঙে পরে আছে। এই park এর উল্টো দিকেই বৃষ্টিদের বাড়ি।  হলুদ এর কোন ছোয়া অবশ্য নেই সে বাড়ির কোন দেওয়ালে। যাই হোক , এবার একটা phone করা যেতেই পারে।
"Hello! তুমি বাড়িতেই আছো তো?"
"হ্যা, কেন গো?" phone এর ওপর থেকে বৃষ্টির ঘুমের আমেজ মেশানো গলার আওয়াজ ভেসে আসে। "New Alipur এর Domino's এ তোমার জন্যে pizzaর order দিয়েছিলাম। লোকটা বোধহয় তোমাদের বাড়ির সামনে এসে গেছে। Online payment করা আছে. একটু নিচে গিয়ে collect করে নাও।"
"তার মানে? সত্যি বলছ ?"
"নিচে গিয়েই দেখো? আমার number দিয়ে বুকিং করেছিলাম বলে আমায় phone করেছে ওরা। "
"Thank you Thank you!!!! তুমি খু উউউউউব  ভালো। "
"আচ্ছা আগে জিনিস টা নিয়ে এসো।  তারপর কথা হবে।"

       Phone টা কেটে main gate এর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আবির।  সিঁড়ির ঘরের আলোটা জ্বলে উঠলো। তারপর আবার সব চুপ। গোটা একটা পাড়া যেন গভীর ঘুমে আছন্ন। প্রায় ৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর সিঁড়ি দিয়ে চটি পরে কারুর নেমে আসার আওয়াজ পাওয়া গেলো। অপ্রত্যাশিত ভাবে যে তার ইচ্ছেপূরণ হয়ে যাবে আন্দাজ পায়নি বৃষ্টি। বাইরের লোকের সামনে বেরোনোর আগে তাই বোধয় ঘরের পোষাকের ওপর আব্রু আনতে দেরী হয়ে যায়। দরজার সামনে আলোআঁধারি  তে প্রায় মিশে ছিল আবির, তাই প্রথমে বুঝতে পারেনি বৃষ্টি। কিন্তু হঠাৎ সামনে চেনা মুখ দেখে উত্তেজনায় প্রায় তিন হাত ছিটকে পিছিয়ে যায় সে। এই ছবিটাই দেখতে চেয়েছিল আবির। ভয়, উত্তেজনা, আনন্দ সব একসাথে মিশে গেলে কেমন লাগে বৃষ্টিকে দেখতে।

      "এই নিন ম্যাডাম , আপনার Pizza আর coke. তাড়াতাড়ি খেয়ে নিও, ঠান্ডা হয়ে গেলে আর ভালো লাগবে না খেতে। " পার্সেল টা তুলে দেয় বৃষ্টির হাতে। বৃষ্টি এখনও আচ্ছন্ন হয়ে আছে আবির এর কান্ড দেখে। কিছুক্ষন নীরব ভাবে একে অপরের দিকে চেয়ে থাকে দু'জন।  আবির আবার কথা শুরু করে।  "আচ্ছা আজ তবে আসি।  তুমি খেয়ে নিও। Tata."
"এখনই যেতে হবে?" কিছুটা এগিয়ে আসে বৃষ্টি।
"রাত সাড়ে দশটা বাজে। বাড়ি ফিরতে অনেক দেরী হবে। দূর তো কম নয়। আরেকদিন এরম কোন হঠাৎ ইচ্ছে হলে জানিও, আবার চলে আসব। "
"ঠিক আছে। Tata. সাবধানে যেও।"

ফুলের বাগানে যেমন একটা মিষ্টি গন্ধ মোহগ্রস্ত করার মত আবহ তৈরী করে।  আজ বৃষ্টির গন্ধটাও যেন সেরকম।  আরো খানিকটা সেই গন্ধ নিজের ফুসফুসে মেখে নিতে ইচ্ছে হয় যেন।  তবু সে ইচ্ছে কে ইতি জানিয়ে রওনা দিতে যায় আবির। বৃষ্টি পিছু ডাকে এমন সময়।
"প্রথম বার আমাদের বাড়ি এলে, শুধু মুখে চলে যাবে? একটু জল অন্তত খেয়ে যাও।"
আবার দরজার কাছে ফিরে আসে আবির। বৃষ্টি পার্সেল হাতে নিয়ে ঘরের ভিতরে চলে যায়। ফিরে আসে এক গ্লাস ঠান্ডা জল নিয়ে। শরীরের অনুভূতিগুলো যেন নতুন করে শিহরিত হয়ে ওঠে।  রোমাঞ্চ টা নতুন সঙ্গা দেয় আবির আর বৃষ্টির প্রথম এইভাবে সাক্ষাৎ এর। গ্লাস ফেরত দেওয়ার সময় বৃষ্টির নরম আঙুলের সামান্য ছোয়াটাও যেন অনেকখানি পাওনা আজকের উদ্যোগের। ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে অবশেষে বিদায় নেয় আবির।

সাক্ষাৎ পর্বটা নিরুপদ্রব হলেও, ফেরার পথে সামান্য বিপদে পরে আবির। এখানকার শ্বদন্তধারী চতুষ্পদদের duty hours বোধহয় এই সময় থেকেই শুরু। প্রায় পাড়ার মোড় অব্দি তারা আবির এর সঙ্গ নেয়। আর নিজেদের দন্ত বিকাশ মাধ্যমে এ'পাড়ায় আসার পরোয়ানা দাবী করতে থাকে। গত এক ঘন্টার আনন্দগুলোর কাছে এই বিপদ অবশ্য বড় নগন্য। Main road এসে autoয় ওঠার পর একটা sms আসে বৃষ্টির নম্বর থেকে। 'Autoy ekdm samne bosbe na kintu. Khub bhalo laglo ei unusual surprise er jonne. Thanks again. Sabdhane jeo. Tc.' Autoতে সামনেই বসেছিল আবির। ঠান্ডা হওয়ার ঝাপটা লাগছিলো মুখে। মনটাও খুশিতে আহল্লাদি হয়ে গুনগুন করে ওঠে কিশোর এর গান এ।

                                                                        //২//
      আজ প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলল, বৃষ্টির সাথে কোন যোগাযোগ হয়নি আবির এর। নিজের কাজের চাপেও বটে, আবার কিছুটা সম্পর্কে চিড় ধরার কারণেও।  কিন্তু আজ ৬ মাসের পাকা পোক্ত সম্পর্কে এই phaseটা নতুন। মেয়েটা মাঝে মধ্যেই অসুখে ভোগে। চিন্তা হচ্ছিলো আবার সেরম নতুন কিছু বাধালো কিনা। দিনটা রবিবার, কাজের চাপ একটু কম। Clinic শেষ করে আবির চলে আসে বৃষ্টিদের বাড়িতে। পাড়াটা আজ একটু সচল। লোকজন এর দেখা মিলল। দোকান পাট ও খোলা। ফাঁকা রাস্তা আর রবিবারের ছুটি পেয়ে পাড়ার বাচ্ছাগুলো cricket খেলছে। সকালবেলা এই প্রথম এলো আবির ওদের বাড়ি। Gateএর বাইরে ফুল দিয়ে সাজানো দেখে মনটা কেমন যেন অস্বস্তি বোধ করে।  তবু, খোঁজ নেবে বলে বাড়ির ভেতরে যায় আবির।

"আরে!! এসো বাবা এসো। বাঁচালে বাবা আমায়। একটা কাজ একটু করে দেবে বাবা?" বৃষ্টির বাবা এগিয়ে আসেন আবির কে দেখে।
"হ্যা জ্যেঠু বলুন না!" চিন্তার পারদটা একটু প্রশমিত করে নেয় আবির।
"আর বলো না বাবা, অনুষ্ঠান বাড়ি, এদিকে কাজের লোকগুলো হয়েছে সেরম। একজনের ও টিকির দেখা নেই।  এদিকে মিষ্টিগুলো আনা  হয়নি।"
"কোথায় যেতে হবে বলুন না? নিয়ে আসছি "
"এই যে! Gupta Brother's এর রশিদ। ওদের সব জিনিস ready করে আছে, শুধু গিয়ে নিয়ে আসলেই হল। তুমি একটু যেতে পারবে?"
"কি যে বলেন জ্যেঠু, এটা  কাজ হল? দিন, নিয়ে আসছি।"
"তুমি তো গাড়ি চালাতে পারো, গাড়িটা নিয়ে যাবে? চাবি দিয়ে দিচ্ছি?"
"তার দরকার হবে না। আমি এমনিই নিয়ে আসছি।"
"একটু জলদি এস বাবা! ওদিকে পাত্রপক্ষ প্রায় চলে এসেছে।"
"করা চলে এসেছে?" একটু হোঁচট খায় আবির।
"কেন? তুমি জানো না? আজ তো বৃষ্টির registry হচ্ছে।"

         'ঝনাৎ' করে বাড়ির বাইরে থেকে কাচ ভাঙার শব্দ এলো। রাস্তায় বাচ্ছাগুলোর cricket ball, এসে আঘাত হেনেছে বৃষ্টিদের সিঁড়ির ঘরের জানলার কাঁচে।  দোতলা থেকে জেঠিমার গলার আওয়াজ শোনা গেলো।
"দিন দিন বাচ্ছাগুলো বাঁদর তৈরী হচ্ছে! অনুষ্ঠান বাড়িতে দিলো কাচ ভেঙে। যতত্সব অশুভ কারবার।"
  নিজের ছেলেবেলার স্মৃতি কুড়িয়ে, জানলার কাঁচ ভাঙার একটা ইতিহাস মনে করে নিজের মুখে হাসি আনে আবির।
"অরে কি যে বলেন জেঠিমা। কাঁচ ভাঙা খুবিই শুভ। খোঁজ নিয়ে দেখুন, যেসব অনুষ্ঠান বাড়ির শুরুতে কাঁচের গ্লাস বা অয়না ভেঙেছে। একেবারে Grand success."

   আবির এর উপস্থিতিটা খেয়াল হয় বৃষ্টির মা এর। "একি, তুমি এখন এখানে কি করছ?"
"আমি তো এমনিই..........." আমতা আমতা করে আবির নিজের আসার কারণ বলতে যায়।
"অরে আমিই তো ওকে মিষ্টি আনতে পাঠাচ্ছিলাম।" বৃষ্টির বাবা এগিয়ে আসেন।

বৃষ্টির মা এর নজর তখনও আবির এর দিকে।  "বৃষ্টি তোমাকে ডেকেছিল?"
"তোমার প্রশ্নগুলো থামাবে? এদিকে পাত্রপক্ষ আনোয়ার শাহ অব্দি এসে গেছে। কত কাজ বাকি।" বৃষ্টির বাবা আবির কে নিয়ে gate এর কাছে চলে আসেন।
"যাচ্ছই যখন একশো প্লাষ্টিক এর গ্লাস নিয়ে এসো। Cold drinks দেবার গ্লাস আনা হয়নি।" বৃষ্টির মা কথাগুলো বলে দোতলায় চলে যান।

"আপনি কিছু ভাববেন না জেঠিমা। সব গুছিয়ে নিয়ে আসছি।" আবির রাস্তায় নেমে আসে। এতক্ষন যেন কান দুটো কাজ করছিলো না। বাড়ি ভর্তি লোকজনের আওয়াজ এবার স্পষ্ট শুনতে পেল আবির।দোতলার জানলা দিয়ে মেয়েদের হাসি ঠাট্টার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। দিব্য সাজানো হয়েছে বাড়িটাকে। চেনাই যাচ্ছে না। পাচিলের ধারে পাড়ার সেই বাচ্চাগুলোর জটলা দেখতে পে আবির। কাঁচ ভেঙে ball  বাড়ির ভেতরে গেছে। এখন কে আনতে যাবে, সেই নিয়েই জটিলতা। সরল মনগুলোর স্থান ও কালের ওপর বিচারে নির্বুদ্ধিতা দেখে হাসি পায় আবিরের। wallet বের করে ২০টাকা একটা বাচ্চার হাতে দিয়ে বলে,
   "অনুষ্ঠান বাড়িতে ball ঢুকে গেছে, সে কি আর খুঁজে পাওয়া যায় বাবা? এই টাকা দিয়ে নতুন ball কিনে, ওদিকটায় গিয়ে খেলা কর। কেমন?
নতুন ball এর দাম পেয়ে বাচ্চারা খুশি মনে চলে যায়। ওদের হাসির রেশটুকু নিয়ে, মিষ্টির দোকানের দিকে রওনা দেয় আবির।

                                                                         //৩//
       বৃষ্টি বরাবরই একটু খামখেয়ালি গোছের। Auto তে বসে পুরোনো কথাগুলো মনে পরে আবির এর। প্রথমবার সিনেমা দেখতে যাবার সময়ও এরম একটা কান্ড বাধায় বৃষ্টি। পছন্দমত multiplex এ টিকিট আগে থেকেই কেটে রেখেছিলো আবির। সময় মত পৌঁছেও যায় সেখানে।  কিন্তু বৃষ্টি আস্তে দেরী করে। আবার সঙ্গে করে সেদিন নিয়ে আসে নিজের পুরোনো প্রেমিক কে। প্রতীক এর সাথে বৃষ্টির সম্পর্কটা ভেঙেছিল কেন তা আবির কোনদিন জানতে চায়নি। অবশ্য প্রয়োজনবোধও করে নি। কিন্তু এমন দিনে সঙ্গে করে প্রতীক কে নিয়ে আসায় বিপাকে পরে আবির। সিনেমা শুরুর ঠিক আগে পাশাপাশি ৩টি seat পাওয়া টা মুশকিল। কিন্তু উপায় কিছু না থাকায়, শেষে বৃষ্টি আর প্রতীক পুরোনো টিকিটের seat এ বসে।  আবির সামনের দিকের একটা টিকিট পেয়ে সেখানেই সিনেমা দেখে। এতে অবশ্য ভালোই হয়েছিল। সিনেমাটা মন দিয়ে দেখার সুযোগ হয়েছিল আবির এর।

     এটাই বোধয় আবিরের একটা বড় দোষ। যেকোন পরিস্থিতিতে জল ঢেলে দিয়ে dilute করে নিতে পারত সে। ফলে situation এর আপেক্ষিক গুরুত্ব যতই হোক না কেন, আবিরের মুখে হাসির অভাব হত না। একদিন হঠাৎ প্রতীক এর বাড়ি যাবে বলে বায়না ধরে বৃষ্টি। প্রতীক এর নাকি খুব শরীর খারাপ, ওকে একবার দেখতে চেয়েছে। আবির আপত্তি করেনি। গাড়ি করে নিয়ে গেছিল প্রতিকদের বাড়ি। আবির কে বাইরেই অপেক্ষা করতে বলে বাড়ির ভেতরে যায় বৃষ্টি। কথাছিলো পনেরো কুড়ি মিনিটে দেখা সেরে দুজনে মিলে বেড়াতে যাবে। গাড়ি নিয়ে তো সচরাচর বেরোনো হয় না। কিন্তু পনেরো মিনিট প্রায় দু'ঘন্টায় এসে দাঁড়ায়। ধৈর্যের বাঁধ যখন প্রায় ভাঙার পথে, বৃষ্টি কে বাড়ি থেকে বেরোতে দেখা গেলো। গাড়িতে এসে উঠেই ক্ষমা চেয়ে নেয় বৃষ্টি।
 "আর বোলো না! কাকিমা কিছুতেই না খাইয়ে ছাড়লেন না। তাই এত দেরী হয়ে গেলো। Sorry ."
 "গাড়িতে tissue আছে, ঠোঁটের কোণগুলো মুছে নাও।"

Rear  view mirror এ নিজের মুখ দেখে, ছড়িয়ে যাওয়া lipstick  টা  ঠিক করে নেয় বৃষ্টি। "উফফ! এই coffee mug গুলো এত চওড়া হয় না, lipstick এর বারোটা বাজিয়ে দেয়। "

"তা আমার জন্যেও এক কাপ নিয়ে আসতে পারতে ?" গাড়িতে start  দিয়ে বলে আবির।
"ওলে বাবালে।  So ........ sweet ! আচ্ছা চলো, CCD  তে গিয়ে coffee খাবো দু'জনে।"
"আজ থাকে, তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে chamber আসবো আমি। কাজ আছে।"

বাকি রাস্তা আর কোন কথা হয়নি। আবির একমনে গাড়ি চালিয়ে বৃষ্টিকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসে। coffee mug এর জন্যে যে lipstick ওভাবে ছড়িয়ে যায় না, সেটা আবির আগেই বুঝেছিলো। আর সিগারেট খেতে গিয়ে পাশের একটা ক্লাবের মাঠে, সে নিজে দেখেছিলো প্রতীকের মা কে। সেখানে yoga র class হচ্ছিলো।আর প্রতীক এর মা পুরো সময়টাই ওখানে ছিল। মিথ্যেটা বড় কাঁচা হয়ে গিয়েছিলো বৃষ্টির। প্রতীক এর পারিবারিক ছবিগুলো relation এ আসার পর না দেখলেই বোধয় ভালো হত।  সে তো জানতে চায়নি প্রতিকদের। কিন্তু কিই বা করার থাকতে পারে। প্রতীকের ই বা দোষ কোথায়? বৃষ্টি কে ভুলে যাওয়ার মত ক্ষমতা, খুব কম মানুষেরই থাকতে পারে।  এখন সে নিজেও বা ভুলবে কেমন করে?

"দাদা এখানে নামবেন তো?"
Auto ওয়ালার ডাকে হুশ ফেরে আবির এর। ভাড়া মিটিয়ে order  slip  হাতে মিষ্টির দোকানে ঢোকে সে।                
                                                                       //৪//
   পাত্রপক্ষ তখনো এসে পৌঁছায়নি। আবির মিষ্টি নিয়ে এসে বৃষ্টির বাবা কে সব হিসেব করে বুঝিয়ে দেয়। কাজটা ভালোভাবে মিতে যাওয়াতে তিনি খুশি।
  "তুমি আজ আমার যা উপকার করলে বাবা। কি বলব আর।"
দোতলা থেকে বৃষ্টির মা এর ডাক শোনা যায়। "ওগো শুনছো! এখুনি একবার প্রতিমা tailor  এ যেতে হবে।" সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসেন বৃষ্টির মা।
"আবার tailor  কেন? কি হয়েছে ?"
"তিন্নির blouse টা tight হচ্ছে। এতবার করে বলেছিলাম trial  করে নিতে, তা সে মেয়ে কি আর শোনে আমার কথা?"
আবির কে দেখে যেন হাতে চাঁদ পেলেন জেঠিমা। "এই যে! তুমি এসে গেছ। একটা উপকার কর বাবা!"
আবির কি আর বলবে, মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
"পাড়ার একদম মোড়ে প্রতিমা tailors এ গিয়ে বলো, রত্না কাকিমার মেয়ের লেহেঙ্গার blouse টা tight হয়েছে। এই জায়গায় দুটো সেলাই এর একটা একটু যেন খুলে দেয়। "

      অপ্রস্তুত হয়ে পরে আবির। শেষে মেয়েদের দোকানে blouse নিয়ে যাবে সে? ইতস্তত করে বলে "কিন্তু জেঠিমা আমায় যে এবার বেরোতে হবে। ওর সাথে একবার দেখা করেই চলে যাবো বলে এসেছিলাম।"
"এটা একটু করে দিয়ে যাও  বাবা! অনেক সাধ করে এই লেহেঙ্গা টা  কিনেছিলো বৃষ্টি। মেয়েটার পুরো সাজটাই মাটি হয়ে যাবে। একটু যাও না বাবা?"

     Tailor  এর দোকানে blouse টা  দিয়ে বাইরে এসে সিগারেট ধরায় আবির। লজ্জাবোধ একটা হচ্ছিলো বটে, কিন্তু কাউকে না বলতে পারেনা চট করে সে কোনোদিনই। এইতো গত February মাসে, chocolate day র দিন। বৃষ্টি আবদার করে বসে একটা দামী chocolate box এর। পকেটে তখন মাত্র ৬০টাকা পরে। বৃষ্টি দুঃখ পাবে না দিলে, এই ভেবে সেটা নিয়েই কিনতে যায়। কোন দৈবিক উপায় কিনা আবির জানে না, কিন্তু দোকানদার যেন টের পেয়ে গেছিলো আবির এর পকেটের খবর। পরিচয় থাকার কারণেই সে যাত্রা আবির ক বাঁচিয়ে দেন তিনি। বৃষ্টির সব পছন্দই বিক্রী হয়েগেছে বলে নাকচ করে দিতে থাকেন। শেষে একটা ১৫০টাকার cadbury নিয়ে বৃষ্টি কে দিয়েছিলো আবির। তাও আবার বাকিতে।
 
    শিশুসুলভ আব্দারগুলো বৃষ্টির চিরকালই একরকম। আজকাল facebook এর দৌলত এ এইসব দিনক্ষণ এর আবিষ্কার। মনেই ছিল না আবিরের সেদিনের কথা। জানা থাকলে এই ভাবে পর্যদুস্ত হত  না। পরেরদিন অবশ্য সকাল সকাল একটা বড় ক্যাডবুরি কিনে বৃষ্টি কে দিয়ে এসেছিলো সে। বাকি দামটাও মিটিয়ে এসেছিলো।

"দাদা! সিগারেট টা  একটু দূরে গিয়ে খান। দোকানের customer দেড় অসুবিধা হবে।"

   ধমক খেয়ে বাস্তবে ফিরে আসে আবির। ক্ষমা চেয়ে নিয়ে দোকান থেকে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।

                                                                    //৫//

"তুমি আমার সামনে সিগারেট খাবে না তো! বড্ড বাজে গন্ধ।" বৃষ্টি একটু দূরে সরে বসে। রবীন্দ্র সরোবর lake  এর ধারে এসে বসেছিল দুজনে। প্রেম তখন গভীর। আবির এর মা-বাবা ও মেনে নিয়েছে বৃষ্টি কে। ওদিকে আবার বৃষ্টির বাবা ও পছন্দ করেন আবির কে। দু'বাড়িতেই যাতায়াত প্রায় লেগেই ছিল। এখন আবির ও কিছুটা settled. আগের মত পরিস্থিতি আর নেই এখন।কাজের চাপে দু'জনেরই বহুদিন দেখা হয়নি। আজ তাই এই সরোবর এর ধারে আসে। সিগারেট টা  সবে  ধরাতেই বৃষ্টির অভিযোগ এলো।

"তুমি বললে, আজ এখন থেকেই ছেড়ে দেবো সিগারেট খাওয়া।" আবির প্রথম টানের ধোঁয়ার ring বানিয়ে নিঃশ্বাস ফেলে।
"আহা, ঢং দেখে বাঁচিনা। কি পাও ওসব ছাইপাস গিলে?"
"কি পাই? একটা ম্যাজিক দেখবে?"
"কি?"
"আজ তোমার মনের যা কিছু অভাব, অভিযোগ সব আমার কানে কানে বল। তারপর দেখ কি করি!"
   
       বৃষ্টির অভিমানি চোখ দুটো ছিল আবির এর দুর্বলতার কারণ। বৃষ্টির চোখের জল সে মেনে নিতে পারত  না। বৃষ্টির গলার আওয়াজ শুনলেই বুঝে যেত কিছু না কিছু সমস্যা বৃষ্টির মনে পাক খাচ্ছে। বৃষ্টি ও ধরা পরে সব বলে ফেলত আবির এর কাছে। আবির ও সেটার একটা কমেডি করে ঠিক হাসিয়ে দিত বৃষ্টি কে। আজও বৃষ্টির যে mood off বুঝতে পেরেছিলো আবির। বৃষ্টি কানে কানে নিজের সমস্যার কথা বলতেই আবির উঠে দাঁড়ায়। তারপর অং বং চ্যং ইত্যাদি মন্ত্র বলে, একরাশ সিগারেট এর ধোঁয়া বুক ভরে টেনে নেয়। তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে, কারখানার চুল্লির মত কুন্ডলি করে করে ধোঁয়া ছেড়ে আবার বৃষ্টির পাশে এসে বসে।
"দেখলে, কেমন তোমার দুঃখগুলো মেঘ বানিয়ে উড়িয়ে দিলাম। চোঁ করে তোমার সব কান্না টেনে নিয়ে এই মেঘ রা অন্য কোথাও গিয়ে বৃষ্টি হয়ে পড়বে। আর তুমি খিলখিলিয়ে হেসে উঠবে।"

    এগুলোর কোন বাস্তবিক ভিত্তি ছিলনা ঠিকই, কিন্তু "ধুর পাগল!" বলে বৃষ্টি হেসে ঠিকিই ফেলত। আর ওই হাসিটাই ছিল আবির এর সব।
  Gift এর কথাটা মাথায় আসে আবির এর। কাছেই একটা দোকান থেকে দুটো cadbury কিনে blouse এর প্যাকেট এ ঢুকিয়ে বৃষ্টির বাড়ির দিকে রওনা দেয়। cadbury র প্রতি বৃষ্টির ছিল প্রবল আকর্ষণ। এই অনুষ্ঠান বাড়িতে কেউ কি আর cadbury  দেবে? তাই বৃষ্টির পছন্দের cadbury গুলোই কিনে নেয় আবির।


                                                                       //৬//
     বাড়ির বাইরে তখন অনেক গাড়ি। পাত্রপক্ষ এসে গেছে। বাড়ির ভিতরে তিলধারণের জায়গা নেই. সেই ভিড়ের মধ্যে থেকে বৃষ্টির মা কে খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হল আবির কে। আত্মীয়স্বজন, পাত্রপক্ষ, লোকলস্কর সে এক এলাহী বেপার। বেশি খুঁজতে হল না। আবির কে দেখে বৃষ্টির মা নিজেই এগিয়ে এলেন।
"আচ্ছা, তোমার কান্ডজ্ঞান বলে কিছু নেই? এত দেরী করলে?"
"আজ্ঞে দোকানে আগের খদ্দেরদের কাজ অবসর করে তবেই আপনার কাজটা  নিলো। তাই। ..."
"ঠিক আছে ঠিক আছে। যত  জ্বালাতন আমার।" ভিড়ের মধ্যে থেকে একটি বাচ্চা মেয়েকে দেখে ডাক দেন। "এই রুনাই, এদিকে আয়। এই প্যাকেট  টা দিদির কাছে দিয়ে আয় , আর সোনায় কে বল তাড়াতাড়ি করতে।" বাচ্চা মেয়েটি সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায়।

   বাইরের ঘরের দরজার কাছ ঘেসে দাঁড়ায় আবির। ঐদিকের ঘরে পাত্র বসেছে। ভিতরে  খুব ভিড়। ওই তো। এক ঝলক দেখা গেলো পাত্র কে। আদিত্য না? আদিত্য শীল। আদিত্যর সাথে প্রথম দিনের আলাপের কথা মনে পরে গেল আবির এর।

"আবির তোমার সাথে আলাপ করিয়ে দি, এ হল আদিত্য, আদিত্য শীল। শীল ম্যানসন এর যে showroom, ওটা আদিত্যর বাবার।"
"আরে বাপরে! বিশাল ব্যবসা তো?" আবির handshake  এর জন্যে হাত বাড়িয়ে দেয়।  আদিত্য বোধয় করমর্দনে ঠিক অভ্যস্ত নয়। তাই ব্যাপারটা একতরফা হয়।
"তোমার একটা help লাগবে আবির। আদিত্য bangalore থেকে MBA করে এসেছে। কিন্তু কলকাতায় কোন চাকরিই পাচ্ছে না।"
"নিজেদের এত্তবড় ব্যবসা থাকতে, চাকরি?"
"না না, ওসব ব্যবসা ওর দ্বারা হবে না।" বৃষ্টি বলে চলে। "তুমি একটা private firm এ part time accounts সামলানোর কাজ করো না? দেখো না ওই অফিসে যদি একটা কিছু করে দেওয়া যায়?"
"এ আর এমন কি? আর MBA যখন ওকে পেলে তো লুফে নেবে। ঠিক আছে, আমি ব্যবস্থা করে দেব।"
 সেই বহু কাঙ্খিত হাসিটা ঝিলিক দিয়ে ওঠে বৃষ্টির মুখে। আদিত্যর দিকে ফিরে বলে,
"দেখলে তো? আমি বলেছিলাম না, he is my মুশকিল-আসান। দেখলে তো?"
"না-না, বৃষ্টি বাড়িয়ে বলছে। এই card টা রেখেদিন। ওই অফিস address এ গিয়ে কাল বা পরশু দেখা করুন, আমি বড়বাবুকে খবর দিয়ে দেবোখন।"

    বৃষ্টির নতুন বন্ধুটি কে ভালোই লাগে আবিরের। ইতিমধ্যেই বৃষ্টির মনে সে নিজের স্থান সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। আবির সব জেনেও যে কেন অন্ধ, তা সে নিজেও অনুধাবন করতে পারেনি। বন্ধুদের অনেক আপত্তি সত্ত্বেও বৃষ্টির জন্যে খিদমত খেটেছে। এমনকি আদিত্য কেও চাকরিতে সাহায্য করেছে। কেন যে বৃষ্টির আব্দারগুলো সে মেনে নিত, তা সে নিজেও জানে না। না! একদিক থেকে ভালোই, শীল ম্যানসনের মালিক, MBA pass, অগাধ ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্য। বৃষ্টির বর হিসেবে সত্যি আদিত্য best choice.

                                                                    //৭//

"আরে ধুর বাবা, বলছি তো, third গলি, চতুর্থ বাড়ি। ...... হ্যা হ্যা প্যান্ডেল করা আছে, দেখলেই বুঝতে পারবেন।"
     বৃষ্টির বাবা বিচলিত হয়ে ঘর থেকে বেরোবার সময় ধাক্কা খান আবির এর সঙ্গে। ঘোর কেটে যায় আবির এর।
"কে রে ভাই এমন মাঝ পথে। " আবির কে দেখে একটু যেন চমকে যান। "একি, তুমি এখানে?"
"না এইতো জ্যেঠু, এবার বেরোচ্ছিলাম। আচ্ছা আসি।" আবির gate এর দিকে রওনা দেয়।
"আরে শোনো শোনো!!" পিছু ডাকেন বৃষ্টির বাবা। আবিরের দিকে এগিয়ে এসে বলেন, "marriage register আমাদের গোটা পাড়া নাকি ঘুরে ফেলেছেন, কিন্তু বাড়িটা locate করতে পারছেন না। তুমি আমার mobile টা নিয়ে যাও, আর ওনাকে একটু নিয়ে এস।"

   নিজের মুখে নিজেরই থুতু দিতে ইচ্ছে করছিলো আবির এর। কিন্তু কোন ওজর আপত্তি না করে, mobile হাতে রাস্তায় বেরোয় আবির। Register  কে locate করে, তাকে বাড়ি অব্দি নিয়ে আসে। তারপর বৃষ্টির বাবার সাথে দেখা করে, mobile টা ফেরত দেয়।

"তুমি যে আমাদের কি উপকার করলে বাবা, তার কোন তুলনা নেই। এই নাও, এই হাজার দু'এক টাকা নাও।"
"না না জ্যেঠু , এসবের কোন প্রয়োজন নেই আমার।"
"অরে রাখো young man. এতো ছোটাছুটি করলে, তার একটা পারিশ্রমিক নেই?"

    এরকম অপমানে আবির নিজেই যেন নিজের কাছে ছোট হয়ে যায়। হাতে টাকা টা  নিয়ে দেখতে দেখতে আবার বৃষ্টির বাবার দিকে বাড়িয়ে দেয়।

"তাহলে একটা request আছে জ্যেঠু। এই টাকাটা একটু যদি ভাঙতি করে দেন। tailor এর দোকানেও তো ৫০টাকা খুচরো নিয়ে নিলো, হাত সত্যিই খালি।"

   শাঁখ আর উলুধ্বনিতে গোটা বাড়ি সরগরম হয়ে উঠলো। বৃষ্টি সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে। তাকে নিয়ে আসছে, চার পাঁচজন সমবয়সী মেয়ে।

"ভালোই বিপদে ফেললে। আচ্ছা দাঁড়াও এখানে, আমি দেখি যদি খুচরো জোগাড় করতে পারি।" বৃষ্টির বাবা চলে গেলেন ঘরের ভিতর।

আবিরের মন তখন অন্যদিকে। লেহেঙ্গাটা সত্যি দারুন। বৃষ্টিকে মানিয়েছেও ব্যাপক। কপালে টিকলি, নাকে নথ , কানে কানপাশা, কোমরে কোমরবন্ধ, সোনার গয়নায় মোড়ানো রাজরানিই লাগছিলো বৃষ্টিকে। নিজের মনকে নিজেই সাহস দে আবির। এবার ইতি টেনে ফিরে যাওয়া উচিত। কিন্তু মনের টানেই কিনা জানে না আবির, আচমকাই বৃষ্টি সিঁড়ির দিকে তাকায়।  একেবারে আবিরের সাথে চোখে চোখ পরে যায়। আবার সেই হাসিটা। আবার সেই অবাক প্রাণখোলা বিস্ময় মিশ্রিত হাসি। এইবাড়িতে প্রথম যে হাসি আবির দেখেছিলো, সেই হাসি। হাত নেড়ে বৃষ্টি বিদায় জানায়। হাতের মুঠোয় আবিরের কিনে আনা cadbury র প্যাকেট।

নিজের মনেই হেসে ফেলে আবির। বৃষ্টির ছেলেমানুষিগুলো আজও একই রকম রয়েগেলো। আর কিছুক্ষন বাদে যার registry হবে, সে কিনা হাতের মুঠোয় নিয়ে এলো cadbury. দিনের শেষের সবচেয়ে বড় পাওনা সে পেয়ে গেছে। তার প্রয়োজন এখানেই শেষ। আর অপেক্ষা করেনা আবির। বৃষ্টিকে নিয়ে সবাই চোখের আড়াল হতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। বৃষ্টির প্রতি তার দুর্বলতার কারণ আজ স্পষ্ট। আবির এর সবচেয়ে প্রিয় প্রাপ্তি ছিল বৃষ্টির হাসি। আর সেই মালিকানা নিয়েই সে বিদায় নিলো আজ।

দু'হাজার টাটা খুচরো নিয়ে, বৃষ্টির বাবা আর তার খোঁজ করেছিল কিনা আবির জানে না। অনুষ্ঠানের মাঝে এক ঝলক তাকে দেখার পর বৃষ্টি আর তার খোঁজ করেছিল কিনা সে খবর ও আবির জানে না। শুধু জানে, সে কোনদিন ও বৃষ্টির দুঃখের কারণ হয়নি। তার উপস্থিতি তে বৃষ্টিকে কোনদিনও চোখের জল ফেলতে হয়নি। বৃষ্টির মালিকানা কি অতই সহজ? Auto য় সামনের seat এ বসে এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ ভিজেছিলো আবির জানে না। রাস্তায় একটা গর্তে দুম করে গাড়িটার একটা চাকা পরে যাওয়ায় ভালোই ঝাকুনি লাগে। বাঁদিকে রড টাতে মাথায় বাড়ী খেতে সম্বিত ফেরে আবির এর।  মাথার চোট টা অত না হলেও, auto চালক আবির এর চোখ দেখে প্রশ্ন তোলে।

"দাদার কি খুব লেগেছে না? একটু জল দেবেন মাথায়?"
"হ্যা, সামনে কোন দোকান দেখে একটু দাঁড়াবেন, ঠান্ডা জল কিনে মাথায় দেবো একটু। ভালোই জোর লেগেছে।"

সহযাত্রীদের রফা থেকে নানা মন্তব্য আসতে থাকে। "রাস্তাগুলোর হাল এমন...." মাথা ফাটেনি তো?" "আহা গো, ভালোই লেগেছে আপনার।" "লাগবেই তো, এরম একটা ধাক্কা। "

কথাগুলো অমূলক মনে হয় আবিরের। তবে একদিক থেকে ভালোই হল. চট করে চোখদুটো মুছে নিয়ে মনে মনে ভাবলো, ভাগ্গিস ধাক্কাটা লেগেছিলো।