বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

দিনের শেষে

                                                                            //১//
        পাড়াটা বোধহয় এরকমই শান্ত, নীরব। রাস্তার দুপাশে আলোগুলো ও যেন নিস্তেজ। এ` পাড়ায় কুকুরগুলো বেশ ভদ্র। অন্য পাড়ার লোক বা গাড়ি দেখলেও নিরুদ্বেগ।  বৃষ্টির বাড়ি খুঁজে পাওয়াটাই এখন সমস্যা।  সুভাষনগর ক্লাবের মাঠ পেরিয়ে তৃতীয় গলিতে চতুর্থ হলদে বাড়িটাই বৃষ্টিদের। ব্যাস! এইটুকুই যা সম্বল ছিল স্মৃতিতে। বাড়ির নম্বর , বৃষ্টির বাবা-মা এর নাম কিছুই জানা ছিল না আবীর এর। তবু সন্ধ্যেবেলা বৃষ্টির আবদার শুনে assignment টা নিয়ে ফেলে আবীর। বৃষ্টির আজ বিকেল থেকে খুব ইচ্ছে pizza খাওয়ার , কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না কারণ তার হাতে টাকা নেই, এদিকে ওর মা - বাবা ও বাড়িতে নেই। মনে মনে ছকটা কষে ফেলে আবির।  নিউ আলিপুর এর Domino's থেকে pizza কিনে বৃষ্টির বাড়ি পৌছে দিতে সময় লাগবে আধ ঘন্টা মত।  কাজেই চেম্বার সেরে বৃষ্টির এই সামান্য ইচ্ছেটুকু সে অনায়াসেই রাখতে পারে। ফোনে একবার address টা confirm করে নিলে ভালো হত।  কিন্তু তাতে surprise টা আর থাকত না। বৃষ্টির জন্যে নতুন কিছু করার thrill টাও ফিকে হয়ে যেত। তাইতো এভাবে ছুটে আসা pizza কিনে বৃষ্টির বাড়ি।

      এতক্ষনে একটা চেনা জিনিস চোখে পড়ল আবির এর। পাড়ার মাঝে একটা ছোট park, তার এক কোণে একটা ভাঙা দোলনা। রাতের phone call এ এই দোলনার গল্প সে শুনেছে।  এই park এ বৃষ্টি খেলতে আসতো ছোটবেলায়। এখন সে park টায় আর কেউ খেলে না। দোলনা টাও ভেঙে পরে আছে। এই park এর উল্টো দিকেই বৃষ্টিদের বাড়ি।  হলুদ এর কোন ছোয়া অবশ্য নেই সে বাড়ির কোন দেওয়ালে। যাই হোক , এবার একটা phone করা যেতেই পারে।
"Hello! তুমি বাড়িতেই আছো তো?"
"হ্যা, কেন গো?" phone এর ওপর থেকে বৃষ্টির ঘুমের আমেজ মেশানো গলার আওয়াজ ভেসে আসে। "New Alipur এর Domino's এ তোমার জন্যে pizzaর order দিয়েছিলাম। লোকটা বোধহয় তোমাদের বাড়ির সামনে এসে গেছে। Online payment করা আছে. একটু নিচে গিয়ে collect করে নাও।"
"তার মানে? সত্যি বলছ ?"
"নিচে গিয়েই দেখো? আমার number দিয়ে বুকিং করেছিলাম বলে আমায় phone করেছে ওরা। "
"Thank you Thank you!!!! তুমি খু উউউউউব  ভালো। "
"আচ্ছা আগে জিনিস টা নিয়ে এসো।  তারপর কথা হবে।"

       Phone টা কেটে main gate এর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আবির।  সিঁড়ির ঘরের আলোটা জ্বলে উঠলো। তারপর আবার সব চুপ। গোটা একটা পাড়া যেন গভীর ঘুমে আছন্ন। প্রায় ৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর সিঁড়ি দিয়ে চটি পরে কারুর নেমে আসার আওয়াজ পাওয়া গেলো। অপ্রত্যাশিত ভাবে যে তার ইচ্ছেপূরণ হয়ে যাবে আন্দাজ পায়নি বৃষ্টি। বাইরের লোকের সামনে বেরোনোর আগে তাই বোধয় ঘরের পোষাকের ওপর আব্রু আনতে দেরী হয়ে যায়। দরজার সামনে আলোআঁধারি  তে প্রায় মিশে ছিল আবির, তাই প্রথমে বুঝতে পারেনি বৃষ্টি। কিন্তু হঠাৎ সামনে চেনা মুখ দেখে উত্তেজনায় প্রায় তিন হাত ছিটকে পিছিয়ে যায় সে। এই ছবিটাই দেখতে চেয়েছিল আবির। ভয়, উত্তেজনা, আনন্দ সব একসাথে মিশে গেলে কেমন লাগে বৃষ্টিকে দেখতে।

      "এই নিন ম্যাডাম , আপনার Pizza আর coke. তাড়াতাড়ি খেয়ে নিও, ঠান্ডা হয়ে গেলে আর ভালো লাগবে না খেতে। " পার্সেল টা তুলে দেয় বৃষ্টির হাতে। বৃষ্টি এখনও আচ্ছন্ন হয়ে আছে আবির এর কান্ড দেখে। কিছুক্ষন নীরব ভাবে একে অপরের দিকে চেয়ে থাকে দু'জন।  আবির আবার কথা শুরু করে।  "আচ্ছা আজ তবে আসি।  তুমি খেয়ে নিও। Tata."
"এখনই যেতে হবে?" কিছুটা এগিয়ে আসে বৃষ্টি।
"রাত সাড়ে দশটা বাজে। বাড়ি ফিরতে অনেক দেরী হবে। দূর তো কম নয়। আরেকদিন এরম কোন হঠাৎ ইচ্ছে হলে জানিও, আবার চলে আসব। "
"ঠিক আছে। Tata. সাবধানে যেও।"

ফুলের বাগানে যেমন একটা মিষ্টি গন্ধ মোহগ্রস্ত করার মত আবহ তৈরী করে।  আজ বৃষ্টির গন্ধটাও যেন সেরকম।  আরো খানিকটা সেই গন্ধ নিজের ফুসফুসে মেখে নিতে ইচ্ছে হয় যেন।  তবু সে ইচ্ছে কে ইতি জানিয়ে রওনা দিতে যায় আবির। বৃষ্টি পিছু ডাকে এমন সময়।
"প্রথম বার আমাদের বাড়ি এলে, শুধু মুখে চলে যাবে? একটু জল অন্তত খেয়ে যাও।"
আবার দরজার কাছে ফিরে আসে আবির। বৃষ্টি পার্সেল হাতে নিয়ে ঘরের ভিতরে চলে যায়। ফিরে আসে এক গ্লাস ঠান্ডা জল নিয়ে। শরীরের অনুভূতিগুলো যেন নতুন করে শিহরিত হয়ে ওঠে।  রোমাঞ্চ টা নতুন সঙ্গা দেয় আবির আর বৃষ্টির প্রথম এইভাবে সাক্ষাৎ এর। গ্লাস ফেরত দেওয়ার সময় বৃষ্টির নরম আঙুলের সামান্য ছোয়াটাও যেন অনেকখানি পাওনা আজকের উদ্যোগের। ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে অবশেষে বিদায় নেয় আবির।

সাক্ষাৎ পর্বটা নিরুপদ্রব হলেও, ফেরার পথে সামান্য বিপদে পরে আবির। এখানকার শ্বদন্তধারী চতুষ্পদদের duty hours বোধহয় এই সময় থেকেই শুরু। প্রায় পাড়ার মোড় অব্দি তারা আবির এর সঙ্গ নেয়। আর নিজেদের দন্ত বিকাশ মাধ্যমে এ'পাড়ায় আসার পরোয়ানা দাবী করতে থাকে। গত এক ঘন্টার আনন্দগুলোর কাছে এই বিপদ অবশ্য বড় নগন্য। Main road এসে autoয় ওঠার পর একটা sms আসে বৃষ্টির নম্বর থেকে। 'Autoy ekdm samne bosbe na kintu. Khub bhalo laglo ei unusual surprise er jonne. Thanks again. Sabdhane jeo. Tc.' Autoতে সামনেই বসেছিল আবির। ঠান্ডা হওয়ার ঝাপটা লাগছিলো মুখে। মনটাও খুশিতে আহল্লাদি হয়ে গুনগুন করে ওঠে কিশোর এর গান এ।

                                                                        //২//
      আজ প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলল, বৃষ্টির সাথে কোন যোগাযোগ হয়নি আবির এর। নিজের কাজের চাপেও বটে, আবার কিছুটা সম্পর্কে চিড় ধরার কারণেও।  কিন্তু আজ ৬ মাসের পাকা পোক্ত সম্পর্কে এই phaseটা নতুন। মেয়েটা মাঝে মধ্যেই অসুখে ভোগে। চিন্তা হচ্ছিলো আবার সেরম নতুন কিছু বাধালো কিনা। দিনটা রবিবার, কাজের চাপ একটু কম। Clinic শেষ করে আবির চলে আসে বৃষ্টিদের বাড়িতে। পাড়াটা আজ একটু সচল। লোকজন এর দেখা মিলল। দোকান পাট ও খোলা। ফাঁকা রাস্তা আর রবিবারের ছুটি পেয়ে পাড়ার বাচ্ছাগুলো cricket খেলছে। সকালবেলা এই প্রথম এলো আবির ওদের বাড়ি। Gateএর বাইরে ফুল দিয়ে সাজানো দেখে মনটা কেমন যেন অস্বস্তি বোধ করে।  তবু, খোঁজ নেবে বলে বাড়ির ভেতরে যায় আবির।

"আরে!! এসো বাবা এসো। বাঁচালে বাবা আমায়। একটা কাজ একটু করে দেবে বাবা?" বৃষ্টির বাবা এগিয়ে আসেন আবির কে দেখে।
"হ্যা জ্যেঠু বলুন না!" চিন্তার পারদটা একটু প্রশমিত করে নেয় আবির।
"আর বলো না বাবা, অনুষ্ঠান বাড়ি, এদিকে কাজের লোকগুলো হয়েছে সেরম। একজনের ও টিকির দেখা নেই।  এদিকে মিষ্টিগুলো আনা  হয়নি।"
"কোথায় যেতে হবে বলুন না? নিয়ে আসছি "
"এই যে! Gupta Brother's এর রশিদ। ওদের সব জিনিস ready করে আছে, শুধু গিয়ে নিয়ে আসলেই হল। তুমি একটু যেতে পারবে?"
"কি যে বলেন জ্যেঠু, এটা  কাজ হল? দিন, নিয়ে আসছি।"
"তুমি তো গাড়ি চালাতে পারো, গাড়িটা নিয়ে যাবে? চাবি দিয়ে দিচ্ছি?"
"তার দরকার হবে না। আমি এমনিই নিয়ে আসছি।"
"একটু জলদি এস বাবা! ওদিকে পাত্রপক্ষ প্রায় চলে এসেছে।"
"করা চলে এসেছে?" একটু হোঁচট খায় আবির।
"কেন? তুমি জানো না? আজ তো বৃষ্টির registry হচ্ছে।"

         'ঝনাৎ' করে বাড়ির বাইরে থেকে কাচ ভাঙার শব্দ এলো। রাস্তায় বাচ্ছাগুলোর cricket ball, এসে আঘাত হেনেছে বৃষ্টিদের সিঁড়ির ঘরের জানলার কাঁচে।  দোতলা থেকে জেঠিমার গলার আওয়াজ শোনা গেলো।
"দিন দিন বাচ্ছাগুলো বাঁদর তৈরী হচ্ছে! অনুষ্ঠান বাড়িতে দিলো কাচ ভেঙে। যতত্সব অশুভ কারবার।"
  নিজের ছেলেবেলার স্মৃতি কুড়িয়ে, জানলার কাঁচ ভাঙার একটা ইতিহাস মনে করে নিজের মুখে হাসি আনে আবির।
"অরে কি যে বলেন জেঠিমা। কাঁচ ভাঙা খুবিই শুভ। খোঁজ নিয়ে দেখুন, যেসব অনুষ্ঠান বাড়ির শুরুতে কাঁচের গ্লাস বা অয়না ভেঙেছে। একেবারে Grand success."

   আবির এর উপস্থিতিটা খেয়াল হয় বৃষ্টির মা এর। "একি, তুমি এখন এখানে কি করছ?"
"আমি তো এমনিই..........." আমতা আমতা করে আবির নিজের আসার কারণ বলতে যায়।
"অরে আমিই তো ওকে মিষ্টি আনতে পাঠাচ্ছিলাম।" বৃষ্টির বাবা এগিয়ে আসেন।

বৃষ্টির মা এর নজর তখনও আবির এর দিকে।  "বৃষ্টি তোমাকে ডেকেছিল?"
"তোমার প্রশ্নগুলো থামাবে? এদিকে পাত্রপক্ষ আনোয়ার শাহ অব্দি এসে গেছে। কত কাজ বাকি।" বৃষ্টির বাবা আবির কে নিয়ে gate এর কাছে চলে আসেন।
"যাচ্ছই যখন একশো প্লাষ্টিক এর গ্লাস নিয়ে এসো। Cold drinks দেবার গ্লাস আনা হয়নি।" বৃষ্টির মা কথাগুলো বলে দোতলায় চলে যান।

"আপনি কিছু ভাববেন না জেঠিমা। সব গুছিয়ে নিয়ে আসছি।" আবির রাস্তায় নেমে আসে। এতক্ষন যেন কান দুটো কাজ করছিলো না। বাড়ি ভর্তি লোকজনের আওয়াজ এবার স্পষ্ট শুনতে পেল আবির।দোতলার জানলা দিয়ে মেয়েদের হাসি ঠাট্টার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। দিব্য সাজানো হয়েছে বাড়িটাকে। চেনাই যাচ্ছে না। পাচিলের ধারে পাড়ার সেই বাচ্চাগুলোর জটলা দেখতে পে আবির। কাঁচ ভেঙে ball  বাড়ির ভেতরে গেছে। এখন কে আনতে যাবে, সেই নিয়েই জটিলতা। সরল মনগুলোর স্থান ও কালের ওপর বিচারে নির্বুদ্ধিতা দেখে হাসি পায় আবিরের। wallet বের করে ২০টাকা একটা বাচ্চার হাতে দিয়ে বলে,
   "অনুষ্ঠান বাড়িতে ball ঢুকে গেছে, সে কি আর খুঁজে পাওয়া যায় বাবা? এই টাকা দিয়ে নতুন ball কিনে, ওদিকটায় গিয়ে খেলা কর। কেমন?
নতুন ball এর দাম পেয়ে বাচ্চারা খুশি মনে চলে যায়। ওদের হাসির রেশটুকু নিয়ে, মিষ্টির দোকানের দিকে রওনা দেয় আবির।

                                                                         //৩//
       বৃষ্টি বরাবরই একটু খামখেয়ালি গোছের। Auto তে বসে পুরোনো কথাগুলো মনে পরে আবির এর। প্রথমবার সিনেমা দেখতে যাবার সময়ও এরম একটা কান্ড বাধায় বৃষ্টি। পছন্দমত multiplex এ টিকিট আগে থেকেই কেটে রেখেছিলো আবির। সময় মত পৌঁছেও যায় সেখানে।  কিন্তু বৃষ্টি আস্তে দেরী করে। আবার সঙ্গে করে সেদিন নিয়ে আসে নিজের পুরোনো প্রেমিক কে। প্রতীক এর সাথে বৃষ্টির সম্পর্কটা ভেঙেছিল কেন তা আবির কোনদিন জানতে চায়নি। অবশ্য প্রয়োজনবোধও করে নি। কিন্তু এমন দিনে সঙ্গে করে প্রতীক কে নিয়ে আসায় বিপাকে পরে আবির। সিনেমা শুরুর ঠিক আগে পাশাপাশি ৩টি seat পাওয়া টা মুশকিল। কিন্তু উপায় কিছু না থাকায়, শেষে বৃষ্টি আর প্রতীক পুরোনো টিকিটের seat এ বসে।  আবির সামনের দিকের একটা টিকিট পেয়ে সেখানেই সিনেমা দেখে। এতে অবশ্য ভালোই হয়েছিল। সিনেমাটা মন দিয়ে দেখার সুযোগ হয়েছিল আবির এর।

     এটাই বোধয় আবিরের একটা বড় দোষ। যেকোন পরিস্থিতিতে জল ঢেলে দিয়ে dilute করে নিতে পারত সে। ফলে situation এর আপেক্ষিক গুরুত্ব যতই হোক না কেন, আবিরের মুখে হাসির অভাব হত না। একদিন হঠাৎ প্রতীক এর বাড়ি যাবে বলে বায়না ধরে বৃষ্টি। প্রতীক এর নাকি খুব শরীর খারাপ, ওকে একবার দেখতে চেয়েছে। আবির আপত্তি করেনি। গাড়ি করে নিয়ে গেছিল প্রতিকদের বাড়ি। আবির কে বাইরেই অপেক্ষা করতে বলে বাড়ির ভেতরে যায় বৃষ্টি। কথাছিলো পনেরো কুড়ি মিনিটে দেখা সেরে দুজনে মিলে বেড়াতে যাবে। গাড়ি নিয়ে তো সচরাচর বেরোনো হয় না। কিন্তু পনেরো মিনিট প্রায় দু'ঘন্টায় এসে দাঁড়ায়। ধৈর্যের বাঁধ যখন প্রায় ভাঙার পথে, বৃষ্টি কে বাড়ি থেকে বেরোতে দেখা গেলো। গাড়িতে এসে উঠেই ক্ষমা চেয়ে নেয় বৃষ্টি।
 "আর বোলো না! কাকিমা কিছুতেই না খাইয়ে ছাড়লেন না। তাই এত দেরী হয়ে গেলো। Sorry ."
 "গাড়িতে tissue আছে, ঠোঁটের কোণগুলো মুছে নাও।"

Rear  view mirror এ নিজের মুখ দেখে, ছড়িয়ে যাওয়া lipstick  টা  ঠিক করে নেয় বৃষ্টি। "উফফ! এই coffee mug গুলো এত চওড়া হয় না, lipstick এর বারোটা বাজিয়ে দেয়। "

"তা আমার জন্যেও এক কাপ নিয়ে আসতে পারতে ?" গাড়িতে start  দিয়ে বলে আবির।
"ওলে বাবালে।  So ........ sweet ! আচ্ছা চলো, CCD  তে গিয়ে coffee খাবো দু'জনে।"
"আজ থাকে, তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে chamber আসবো আমি। কাজ আছে।"

বাকি রাস্তা আর কোন কথা হয়নি। আবির একমনে গাড়ি চালিয়ে বৃষ্টিকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসে। coffee mug এর জন্যে যে lipstick ওভাবে ছড়িয়ে যায় না, সেটা আবির আগেই বুঝেছিলো। আর সিগারেট খেতে গিয়ে পাশের একটা ক্লাবের মাঠে, সে নিজে দেখেছিলো প্রতীকের মা কে। সেখানে yoga র class হচ্ছিলো।আর প্রতীক এর মা পুরো সময়টাই ওখানে ছিল। মিথ্যেটা বড় কাঁচা হয়ে গিয়েছিলো বৃষ্টির। প্রতীক এর পারিবারিক ছবিগুলো relation এ আসার পর না দেখলেই বোধয় ভালো হত।  সে তো জানতে চায়নি প্রতিকদের। কিন্তু কিই বা করার থাকতে পারে। প্রতীকের ই বা দোষ কোথায়? বৃষ্টি কে ভুলে যাওয়ার মত ক্ষমতা, খুব কম মানুষেরই থাকতে পারে।  এখন সে নিজেও বা ভুলবে কেমন করে?

"দাদা এখানে নামবেন তো?"
Auto ওয়ালার ডাকে হুশ ফেরে আবির এর। ভাড়া মিটিয়ে order  slip  হাতে মিষ্টির দোকানে ঢোকে সে।                
                                                                       //৪//
   পাত্রপক্ষ তখনো এসে পৌঁছায়নি। আবির মিষ্টি নিয়ে এসে বৃষ্টির বাবা কে সব হিসেব করে বুঝিয়ে দেয়। কাজটা ভালোভাবে মিতে যাওয়াতে তিনি খুশি।
  "তুমি আজ আমার যা উপকার করলে বাবা। কি বলব আর।"
দোতলা থেকে বৃষ্টির মা এর ডাক শোনা যায়। "ওগো শুনছো! এখুনি একবার প্রতিমা tailor  এ যেতে হবে।" সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসেন বৃষ্টির মা।
"আবার tailor  কেন? কি হয়েছে ?"
"তিন্নির blouse টা tight হচ্ছে। এতবার করে বলেছিলাম trial  করে নিতে, তা সে মেয়ে কি আর শোনে আমার কথা?"
আবির কে দেখে যেন হাতে চাঁদ পেলেন জেঠিমা। "এই যে! তুমি এসে গেছ। একটা উপকার কর বাবা!"
আবির কি আর বলবে, মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
"পাড়ার একদম মোড়ে প্রতিমা tailors এ গিয়ে বলো, রত্না কাকিমার মেয়ের লেহেঙ্গার blouse টা tight হয়েছে। এই জায়গায় দুটো সেলাই এর একটা একটু যেন খুলে দেয়। "

      অপ্রস্তুত হয়ে পরে আবির। শেষে মেয়েদের দোকানে blouse নিয়ে যাবে সে? ইতস্তত করে বলে "কিন্তু জেঠিমা আমায় যে এবার বেরোতে হবে। ওর সাথে একবার দেখা করেই চলে যাবো বলে এসেছিলাম।"
"এটা একটু করে দিয়ে যাও  বাবা! অনেক সাধ করে এই লেহেঙ্গা টা  কিনেছিলো বৃষ্টি। মেয়েটার পুরো সাজটাই মাটি হয়ে যাবে। একটু যাও না বাবা?"

     Tailor  এর দোকানে blouse টা  দিয়ে বাইরে এসে সিগারেট ধরায় আবির। লজ্জাবোধ একটা হচ্ছিলো বটে, কিন্তু কাউকে না বলতে পারেনা চট করে সে কোনোদিনই। এইতো গত February মাসে, chocolate day র দিন। বৃষ্টি আবদার করে বসে একটা দামী chocolate box এর। পকেটে তখন মাত্র ৬০টাকা পরে। বৃষ্টি দুঃখ পাবে না দিলে, এই ভেবে সেটা নিয়েই কিনতে যায়। কোন দৈবিক উপায় কিনা আবির জানে না, কিন্তু দোকানদার যেন টের পেয়ে গেছিলো আবির এর পকেটের খবর। পরিচয় থাকার কারণেই সে যাত্রা আবির ক বাঁচিয়ে দেন তিনি। বৃষ্টির সব পছন্দই বিক্রী হয়েগেছে বলে নাকচ করে দিতে থাকেন। শেষে একটা ১৫০টাকার cadbury নিয়ে বৃষ্টি কে দিয়েছিলো আবির। তাও আবার বাকিতে।
 
    শিশুসুলভ আব্দারগুলো বৃষ্টির চিরকালই একরকম। আজকাল facebook এর দৌলত এ এইসব দিনক্ষণ এর আবিষ্কার। মনেই ছিল না আবিরের সেদিনের কথা। জানা থাকলে এই ভাবে পর্যদুস্ত হত  না। পরেরদিন অবশ্য সকাল সকাল একটা বড় ক্যাডবুরি কিনে বৃষ্টি কে দিয়ে এসেছিলো সে। বাকি দামটাও মিটিয়ে এসেছিলো।

"দাদা! সিগারেট টা  একটু দূরে গিয়ে খান। দোকানের customer দেড় অসুবিধা হবে।"

   ধমক খেয়ে বাস্তবে ফিরে আসে আবির। ক্ষমা চেয়ে নিয়ে দোকান থেকে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।

                                                                    //৫//

"তুমি আমার সামনে সিগারেট খাবে না তো! বড্ড বাজে গন্ধ।" বৃষ্টি একটু দূরে সরে বসে। রবীন্দ্র সরোবর lake  এর ধারে এসে বসেছিল দুজনে। প্রেম তখন গভীর। আবির এর মা-বাবা ও মেনে নিয়েছে বৃষ্টি কে। ওদিকে আবার বৃষ্টির বাবা ও পছন্দ করেন আবির কে। দু'বাড়িতেই যাতায়াত প্রায় লেগেই ছিল। এখন আবির ও কিছুটা settled. আগের মত পরিস্থিতি আর নেই এখন।কাজের চাপে দু'জনেরই বহুদিন দেখা হয়নি। আজ তাই এই সরোবর এর ধারে আসে। সিগারেট টা  সবে  ধরাতেই বৃষ্টির অভিযোগ এলো।

"তুমি বললে, আজ এখন থেকেই ছেড়ে দেবো সিগারেট খাওয়া।" আবির প্রথম টানের ধোঁয়ার ring বানিয়ে নিঃশ্বাস ফেলে।
"আহা, ঢং দেখে বাঁচিনা। কি পাও ওসব ছাইপাস গিলে?"
"কি পাই? একটা ম্যাজিক দেখবে?"
"কি?"
"আজ তোমার মনের যা কিছু অভাব, অভিযোগ সব আমার কানে কানে বল। তারপর দেখ কি করি!"
   
       বৃষ্টির অভিমানি চোখ দুটো ছিল আবির এর দুর্বলতার কারণ। বৃষ্টির চোখের জল সে মেনে নিতে পারত  না। বৃষ্টির গলার আওয়াজ শুনলেই বুঝে যেত কিছু না কিছু সমস্যা বৃষ্টির মনে পাক খাচ্ছে। বৃষ্টি ও ধরা পরে সব বলে ফেলত আবির এর কাছে। আবির ও সেটার একটা কমেডি করে ঠিক হাসিয়ে দিত বৃষ্টি কে। আজও বৃষ্টির যে mood off বুঝতে পেরেছিলো আবির। বৃষ্টি কানে কানে নিজের সমস্যার কথা বলতেই আবির উঠে দাঁড়ায়। তারপর অং বং চ্যং ইত্যাদি মন্ত্র বলে, একরাশ সিগারেট এর ধোঁয়া বুক ভরে টেনে নেয়। তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে, কারখানার চুল্লির মত কুন্ডলি করে করে ধোঁয়া ছেড়ে আবার বৃষ্টির পাশে এসে বসে।
"দেখলে, কেমন তোমার দুঃখগুলো মেঘ বানিয়ে উড়িয়ে দিলাম। চোঁ করে তোমার সব কান্না টেনে নিয়ে এই মেঘ রা অন্য কোথাও গিয়ে বৃষ্টি হয়ে পড়বে। আর তুমি খিলখিলিয়ে হেসে উঠবে।"

    এগুলোর কোন বাস্তবিক ভিত্তি ছিলনা ঠিকই, কিন্তু "ধুর পাগল!" বলে বৃষ্টি হেসে ঠিকিই ফেলত। আর ওই হাসিটাই ছিল আবির এর সব।
  Gift এর কথাটা মাথায় আসে আবির এর। কাছেই একটা দোকান থেকে দুটো cadbury কিনে blouse এর প্যাকেট এ ঢুকিয়ে বৃষ্টির বাড়ির দিকে রওনা দেয়। cadbury র প্রতি বৃষ্টির ছিল প্রবল আকর্ষণ। এই অনুষ্ঠান বাড়িতে কেউ কি আর cadbury  দেবে? তাই বৃষ্টির পছন্দের cadbury গুলোই কিনে নেয় আবির।


                                                                       //৬//
     বাড়ির বাইরে তখন অনেক গাড়ি। পাত্রপক্ষ এসে গেছে। বাড়ির ভিতরে তিলধারণের জায়গা নেই. সেই ভিড়ের মধ্যে থেকে বৃষ্টির মা কে খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হল আবির কে। আত্মীয়স্বজন, পাত্রপক্ষ, লোকলস্কর সে এক এলাহী বেপার। বেশি খুঁজতে হল না। আবির কে দেখে বৃষ্টির মা নিজেই এগিয়ে এলেন।
"আচ্ছা, তোমার কান্ডজ্ঞান বলে কিছু নেই? এত দেরী করলে?"
"আজ্ঞে দোকানে আগের খদ্দেরদের কাজ অবসর করে তবেই আপনার কাজটা  নিলো। তাই। ..."
"ঠিক আছে ঠিক আছে। যত  জ্বালাতন আমার।" ভিড়ের মধ্যে থেকে একটি বাচ্চা মেয়েকে দেখে ডাক দেন। "এই রুনাই, এদিকে আয়। এই প্যাকেট  টা দিদির কাছে দিয়ে আয় , আর সোনায় কে বল তাড়াতাড়ি করতে।" বাচ্চা মেয়েটি সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায়।

   বাইরের ঘরের দরজার কাছ ঘেসে দাঁড়ায় আবির। ঐদিকের ঘরে পাত্র বসেছে। ভিতরে  খুব ভিড়। ওই তো। এক ঝলক দেখা গেলো পাত্র কে। আদিত্য না? আদিত্য শীল। আদিত্যর সাথে প্রথম দিনের আলাপের কথা মনে পরে গেল আবির এর।

"আবির তোমার সাথে আলাপ করিয়ে দি, এ হল আদিত্য, আদিত্য শীল। শীল ম্যানসন এর যে showroom, ওটা আদিত্যর বাবার।"
"আরে বাপরে! বিশাল ব্যবসা তো?" আবির handshake  এর জন্যে হাত বাড়িয়ে দেয়।  আদিত্য বোধয় করমর্দনে ঠিক অভ্যস্ত নয়। তাই ব্যাপারটা একতরফা হয়।
"তোমার একটা help লাগবে আবির। আদিত্য bangalore থেকে MBA করে এসেছে। কিন্তু কলকাতায় কোন চাকরিই পাচ্ছে না।"
"নিজেদের এত্তবড় ব্যবসা থাকতে, চাকরি?"
"না না, ওসব ব্যবসা ওর দ্বারা হবে না।" বৃষ্টি বলে চলে। "তুমি একটা private firm এ part time accounts সামলানোর কাজ করো না? দেখো না ওই অফিসে যদি একটা কিছু করে দেওয়া যায়?"
"এ আর এমন কি? আর MBA যখন ওকে পেলে তো লুফে নেবে। ঠিক আছে, আমি ব্যবস্থা করে দেব।"
 সেই বহু কাঙ্খিত হাসিটা ঝিলিক দিয়ে ওঠে বৃষ্টির মুখে। আদিত্যর দিকে ফিরে বলে,
"দেখলে তো? আমি বলেছিলাম না, he is my মুশকিল-আসান। দেখলে তো?"
"না-না, বৃষ্টি বাড়িয়ে বলছে। এই card টা রেখেদিন। ওই অফিস address এ গিয়ে কাল বা পরশু দেখা করুন, আমি বড়বাবুকে খবর দিয়ে দেবোখন।"

    বৃষ্টির নতুন বন্ধুটি কে ভালোই লাগে আবিরের। ইতিমধ্যেই বৃষ্টির মনে সে নিজের স্থান সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। আবির সব জেনেও যে কেন অন্ধ, তা সে নিজেও অনুধাবন করতে পারেনি। বন্ধুদের অনেক আপত্তি সত্ত্বেও বৃষ্টির জন্যে খিদমত খেটেছে। এমনকি আদিত্য কেও চাকরিতে সাহায্য করেছে। কেন যে বৃষ্টির আব্দারগুলো সে মেনে নিত, তা সে নিজেও জানে না। না! একদিক থেকে ভালোই, শীল ম্যানসনের মালিক, MBA pass, অগাধ ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্য। বৃষ্টির বর হিসেবে সত্যি আদিত্য best choice.

                                                                    //৭//

"আরে ধুর বাবা, বলছি তো, third গলি, চতুর্থ বাড়ি। ...... হ্যা হ্যা প্যান্ডেল করা আছে, দেখলেই বুঝতে পারবেন।"
     বৃষ্টির বাবা বিচলিত হয়ে ঘর থেকে বেরোবার সময় ধাক্কা খান আবির এর সঙ্গে। ঘোর কেটে যায় আবির এর।
"কে রে ভাই এমন মাঝ পথে। " আবির কে দেখে একটু যেন চমকে যান। "একি, তুমি এখানে?"
"না এইতো জ্যেঠু, এবার বেরোচ্ছিলাম। আচ্ছা আসি।" আবির gate এর দিকে রওনা দেয়।
"আরে শোনো শোনো!!" পিছু ডাকেন বৃষ্টির বাবা। আবিরের দিকে এগিয়ে এসে বলেন, "marriage register আমাদের গোটা পাড়া নাকি ঘুরে ফেলেছেন, কিন্তু বাড়িটা locate করতে পারছেন না। তুমি আমার mobile টা নিয়ে যাও, আর ওনাকে একটু নিয়ে এস।"

   নিজের মুখে নিজেরই থুতু দিতে ইচ্ছে করছিলো আবির এর। কিন্তু কোন ওজর আপত্তি না করে, mobile হাতে রাস্তায় বেরোয় আবির। Register  কে locate করে, তাকে বাড়ি অব্দি নিয়ে আসে। তারপর বৃষ্টির বাবার সাথে দেখা করে, mobile টা ফেরত দেয়।

"তুমি যে আমাদের কি উপকার করলে বাবা, তার কোন তুলনা নেই। এই নাও, এই হাজার দু'এক টাকা নাও।"
"না না জ্যেঠু , এসবের কোন প্রয়োজন নেই আমার।"
"অরে রাখো young man. এতো ছোটাছুটি করলে, তার একটা পারিশ্রমিক নেই?"

    এরকম অপমানে আবির নিজেই যেন নিজের কাছে ছোট হয়ে যায়। হাতে টাকা টা  নিয়ে দেখতে দেখতে আবার বৃষ্টির বাবার দিকে বাড়িয়ে দেয়।

"তাহলে একটা request আছে জ্যেঠু। এই টাকাটা একটু যদি ভাঙতি করে দেন। tailor এর দোকানেও তো ৫০টাকা খুচরো নিয়ে নিলো, হাত সত্যিই খালি।"

   শাঁখ আর উলুধ্বনিতে গোটা বাড়ি সরগরম হয়ে উঠলো। বৃষ্টি সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে। তাকে নিয়ে আসছে, চার পাঁচজন সমবয়সী মেয়ে।

"ভালোই বিপদে ফেললে। আচ্ছা দাঁড়াও এখানে, আমি দেখি যদি খুচরো জোগাড় করতে পারি।" বৃষ্টির বাবা চলে গেলেন ঘরের ভিতর।

আবিরের মন তখন অন্যদিকে। লেহেঙ্গাটা সত্যি দারুন। বৃষ্টিকে মানিয়েছেও ব্যাপক। কপালে টিকলি, নাকে নথ , কানে কানপাশা, কোমরে কোমরবন্ধ, সোনার গয়নায় মোড়ানো রাজরানিই লাগছিলো বৃষ্টিকে। নিজের মনকে নিজেই সাহস দে আবির। এবার ইতি টেনে ফিরে যাওয়া উচিত। কিন্তু মনের টানেই কিনা জানে না আবির, আচমকাই বৃষ্টি সিঁড়ির দিকে তাকায়।  একেবারে আবিরের সাথে চোখে চোখ পরে যায়। আবার সেই হাসিটা। আবার সেই অবাক প্রাণখোলা বিস্ময় মিশ্রিত হাসি। এইবাড়িতে প্রথম যে হাসি আবির দেখেছিলো, সেই হাসি। হাত নেড়ে বৃষ্টি বিদায় জানায়। হাতের মুঠোয় আবিরের কিনে আনা cadbury র প্যাকেট।

নিজের মনেই হেসে ফেলে আবির। বৃষ্টির ছেলেমানুষিগুলো আজও একই রকম রয়েগেলো। আর কিছুক্ষন বাদে যার registry হবে, সে কিনা হাতের মুঠোয় নিয়ে এলো cadbury. দিনের শেষের সবচেয়ে বড় পাওনা সে পেয়ে গেছে। তার প্রয়োজন এখানেই শেষ। আর অপেক্ষা করেনা আবির। বৃষ্টিকে নিয়ে সবাই চোখের আড়াল হতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। বৃষ্টির প্রতি তার দুর্বলতার কারণ আজ স্পষ্ট। আবির এর সবচেয়ে প্রিয় প্রাপ্তি ছিল বৃষ্টির হাসি। আর সেই মালিকানা নিয়েই সে বিদায় নিলো আজ।

দু'হাজার টাটা খুচরো নিয়ে, বৃষ্টির বাবা আর তার খোঁজ করেছিল কিনা আবির জানে না। অনুষ্ঠানের মাঝে এক ঝলক তাকে দেখার পর বৃষ্টি আর তার খোঁজ করেছিল কিনা সে খবর ও আবির জানে না। শুধু জানে, সে কোনদিন ও বৃষ্টির দুঃখের কারণ হয়নি। তার উপস্থিতি তে বৃষ্টিকে কোনদিনও চোখের জল ফেলতে হয়নি। বৃষ্টির মালিকানা কি অতই সহজ? Auto য় সামনের seat এ বসে এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ ভিজেছিলো আবির জানে না। রাস্তায় একটা গর্তে দুম করে গাড়িটার একটা চাকা পরে যাওয়ায় ভালোই ঝাকুনি লাগে। বাঁদিকে রড টাতে মাথায় বাড়ী খেতে সম্বিত ফেরে আবির এর।  মাথার চোট টা অত না হলেও, auto চালক আবির এর চোখ দেখে প্রশ্ন তোলে।

"দাদার কি খুব লেগেছে না? একটু জল দেবেন মাথায়?"
"হ্যা, সামনে কোন দোকান দেখে একটু দাঁড়াবেন, ঠান্ডা জল কিনে মাথায় দেবো একটু। ভালোই জোর লেগেছে।"

সহযাত্রীদের রফা থেকে নানা মন্তব্য আসতে থাকে। "রাস্তাগুলোর হাল এমন...." মাথা ফাটেনি তো?" "আহা গো, ভালোই লেগেছে আপনার।" "লাগবেই তো, এরম একটা ধাক্কা। "

কথাগুলো অমূলক মনে হয় আবিরের। তবে একদিক থেকে ভালোই হল. চট করে চোখদুটো মুছে নিয়ে মনে মনে ভাবলো, ভাগ্গিস ধাক্কাটা লেগেছিলো।