শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

No conclusion

      অসমাপ্ত 

                                                                          //১//
বাইরে অবিরাম বৃষ্টি। গত দু'ঘন্টায় এক মুহূর্তের জন্যেও বৃষ্টির বেগ কমেনি।  অবস্থা বেগতিক দেখে, গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরে শুভ। 'এই বৃষ্টি চট জলদি থামার নয়', চা দোকানীও সে কথা বলছিলো শুভকে। ধাবা থেকে বেরিয়ে সরু ঝামা ফেলা parking lane টা পেরিয়ে, highwayতে ওঠে গাড়ি। Verna fluidicএর চাকা, highway তে উঠে যেন নিজের মেজাজ ফিরে পায়। কোনা express way দিয়ে উলুবেড়িয়ার দিকে গাড়ি ছোটায় শুভ। মুষলধারে বৃষ্টিতে পথে অন্য গাড়িও সেরকম একটা নেই। speedometer এ একশ পেরোতে কার্পণ্য করে না সে।

আজ বিকেলে এক দুর্ঘটনায় গুরুতর ভাবে আহত হয়েছে বরুণ, শুভর এক ছাত্র। এই বিপদে ঠেলে দেওয়ার জন্যে অবশ্য সে নিজেই দায়ী। বরুণ কে সে বরাবর স্নেহের চোখে দেখে এসেছে। ওর সরল শান্ত মুখটা বারবার ভেসে উঠছে যেন চোখের সামনে। পথের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে গত ৬ ঘন্টায় ঘটে যাওয়া incident গুলোর কথা মনে করছিলো শুভ। এমন সময় একটা call আসে mobile এ।
"Hello!"
"শুভ দা, তুমি আসবেনা?"
"এইতো গাড়িতে আসছি। হাসপাতালেই আসছি আমি। কে পলাশ নাকি? hello! hello!"
Disconnect হয়েগিয়েছিল call টা। Accident site থেকে বরুণ কে যে উলুবেড়িয়ার একটা বেসরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে,সে খবর আগেই পেয়েছিলো শুভ। অনেক আগেই পৌঁছে যেত।  কিন্তু কলকাতা থেকে বেরোনোর পরেই এমন বৃষ্টি শুরু হল, দেরী হয়ে গেলো অনেকটা। প্রায় একরকম বাধ্য হয়েই সাঁত্রাগাছির কাছে একটা ধাবায় গাড়ি দাঁড় করিয়েছিলো। ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করার পরেও দুর্যোগের বিরতি নেই দেখে আবার রওনা দেয় সে।

বরুণের অবস্থা কি সত্যিই খুব খারাপ? বরুণের নম্বর থেকে পলাশ বোধহয় phone করেছিল। গলা শুনেই মনে হচ্ছিলো বেশ উদ্বিগ্ন। কিই যে চিকিৎসা পাবে সেখানে, আদৌ তা কার্যকরী কিনা, কে জানে। চিন্তার প্রভাবেই বোধয় accelerator এ পায়ের চাপ বাড়িয়ে দেয় শুভ। আবার একটা phone. Screen এ বরুণের নামটা ফুটে উঠল। এই speed এ এখন phone ধরা অসুবিধা। তবু mobile টা নিতে যেতেই call টা কেটে গেলো। এরম বারবার phone আসতে থাকার মানে বরুণ কি আর নেই? আবার একটা call. এবারেও তাই। Mobile টা নিতে যেতেই কেটে যাচ্ছে। দুশ্চিন্তাগুলো কে সরিয়ে রেখে রাস্তায় মন দেয় শুভ। Vernaর শরীরটা একটু যেন কেঁপে উঠল, নতুন ভাবে গতিবৃদ্ধির কারণে।

Windscreenএর ওপর wiperগুলোর সপাট সপাট আওয়াজ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে গাড়ির ভিতর থেকে। ক্রম ধারাবর্ষণ এর সাথে তাদের কর্মযুদ্ধ যেন দাড়িপাল্লায় সমান কৃতিত্বের দাবী রাখে। ঐতো cement factory র চুল্লিটা দেখা যাচ্ছে বামদিকে দূরে। উলুবেড়িয়া এসে গেছে প্রায়। একমাত্র toll plaza ছাড়া, গাড়ির গতি কমেনি এতটুকু। এতখানি রাস্তা, এই বৃষ্টি তে যেন হাওয়ায় ভেসে এলো শুভ। গোটা রাস্তায় traffic ও কম। কাজেই বিশেষ অসুবিধায় পড়তে হয় নি তাকে। আবার একটা phone আসে mobile এ। কিছুটা দুশ্চিন্তার ভারেই বোধয় call টা receive করতে যায় শুভ।
"Hello!"
"শুভ দা, তুমি আসবে না?" সেই এক কথা আবার। যন্ত্রচালিতের মত কেউ যেন এই একিই কথা বলে যাচ্ছে phone এর ওপার থেকে।
"এসে গেছি। আর একটু পথ। আমি আসছি, চিন্তা করিসনা তোরা।"
Callটা  disconnect করে, screen lock করে পথের দিকে তাকাতেই সামনে head light এর আলোয় কিছু একটা দেখতে পায় শুভ। Horn এর ওপর horn দিতে থাকে শুভ। স্পীডোমিটার এ গতি প্রায় একশ চল্লিশ। আবার একটা phone. Wiper এর গোঙানি, windscreen এর ওপর বৃষ্টির আওয়াজ। সব মিলিয়ে নিজের হাতের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ যেন একটু ভাঙে শুভর।  Headlight এর আলোয় মাঝ রাস্তায় দাঁড়ানো ছায়ামূর্তি দেখে নিজেই বিস্মিত হয়ে যায় সে। 
   
                                                                   //২//   
"6th sense, শব্দটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। William De Von সাহেব এর মতে, It is the less used section of our brain, that depicts and portraits the psychic events around us. তার journal গুলো আজ অব্দি যা যা published হয়েছে, সেখানে তিনি একটাই কথা বলে গেছেন। 'They are around us.' আমার ছাত্র জীবনে, আমি বহুবার এই 'তাদের' সাথে যোগাযোগ করবার চেষ্টা করেছি। In fact বিয়ের পরেও, আমার স্ত্রী এবং আমি, দুজনেই চেষ্টা করে গেছি এই বিষয়ে নতুন কিছু আবিষ্কার করার। কিন্তু গরীব দেশে সে সব করা difficult, অর্থং জস্য বলং তস্য।"

ড: শুভময় মল্লিক এর class room আজ অব্দি house full হয়নি, এমন ঘটনা বিরল। অমোঘ উৎসাহে তরুণ থেকে প্রবীণ প্রজন্মের মানুষ ভিড় করে আসে। Paranormal এবং psychic বিষয়গুলোর ওপরে তার প্রত্যেকটি seminar সকলের কাছে অনেক অজানা বিষয়ের তথ্য তুলে দেয়। তাই কেউই miss করে না প্রায়।  গত এক বছরে, সারা ভারতবর্ষে ১৬টি শহরে প্রায় পঞ্চাশটির বেশি সেমিনার দেওয়া হয়ে গেছে তার। এ'বছর বই মেলা তে তার বইও প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশক ভদ্রলোক বইয়ের কাটতি নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু প্রথম চারদিনেই প্রায় ১৫০ কপি বেড়িয়ে যাওয়ায়, ভদ্রলোক শুভময়ের পরবর্তী লেখা ছাপাবেন বলে আগাম বায়না করে রেখেছেন।

"তারমানে, তারা কি এ'ঘরেও আছেন?" উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে থেকে কেউ বলে ওঠে।
"আমি ভয় পাওয়াতে চাই না, তবে বলব নিশ্চই। আপনার ঠিক পাশেই হয়ত কেউ বসে আছেন। আপনাকে দেখছেন, আমাদের দেখছেন। আমাদের সব কথা শুনছেন। সে আপনার খুব প্রিয় কোন মানুষ হতে পারেন, যিনি এখন আর বেঁচে নেই। আবার অন্য কারুর আত্মাও হতে পারেন।"
"তারমানে, প্ল্যানচেট করে আত্মা নামিয়ে আনার বিষয়টা বুজরুকি নয়?" আরেকজন কোন দর্শক প্রশ্নটা করে।
"আপনার কাছে প্ল্যানচেট এর কি সঙ্গা আমি জানি না। তবে এটুকু বলব, গপ্পের বই বা cinema দেখে যদি নিজের ধারণা কে সাজিয়ে থেকে থাকেন, তবে বলব হ্যা, ওই মতে প্ল্যানচেট বুজরুকি। সত্যিকারের আত্মাকে নামানো, খুব একটা সোজা কাজ নয়।"
"আপনি আত্মাকে দেখেছেন?" সামনের সারির একজন মহিলা প্রশ্নটি করে।
"বললে বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, আমার যে বসার জন্য জায়গা দেওয়া হয়েছে, এই মুহূর্তে ঠিক ওই চেয়ারে একজন বসে আছেন, যার ইহ জগতের সাথে সমস্ত সূত্র ছিন্ন হয়ে গেছে।"
সবাই একটু বিব্রত হয়ে পরে এমন উক্তিতে। একটা চাপা গুঞ্জন ভেসে আসে দর্শক আসনের দিক থেকে। 
"আমি জানি আপনারা কি ভাবছেন। পঞ্চদশ শতাব্দী তে বসে আমি এই উক্তি করলে, আমায় রাজা, সামন্ত, এনারা ভাড়া করে নিয়ে গিয়ে নিজেদের রাজ দরবারে রাখতেন। কিন্তু এই যুগে দাঁড়িয়ে, কথাগুলো বিশ্বাস করানোটাই বড় challenge. শুধু আপনারা নয়, গোটা বিশ্বেই এক ছবি। ভূত জিনিসটাই এমন আজগুবি ভাবে বাজারে প্রচারিত হয়ে আছে, যে আমরা সত্যিকারের বিজ্ঞান টা ভুলে, অন্যদিকে ক্রমাগত ছুটে চলেছি।"
"ভূত আছে, আপনি বিশ্বাস করেন?" দর্শক আসনের শেষ প্রান্তে একটি কটাক্ষ যেন উঠে আসে।
"আমার বিশ্বাসএ আপনারা বিশ্বাস করবেনই বা কেন। তবে এটুকু বলতে পারি, খোদ Bible এও ভূতের উল্লেখ আছে।"
"Holy Bible এ ভূতের উল্লেখ?" পূর্ব বক্তাই আবার প্রশ্ন তোলেন।
"The Old Testament, Samuel এর অধ্যায়ে, রাজা Saul এর প্রসঙ্গে ভূতের উল্লেখ আছে। এমনকি স্বয়ং Jesus কে অব্দি New Testament এ Holy Ghost হিসেবে তুলনা করা হয়েছে, যখন উনি মৃত্যুর পর আবার ফিরে আসেন, নিজের ১২জন শিষ্যের সাথে দেখা করতে। শুধু তাই নয়, হোমারের ইলিয়াড-ওডিসি পড়ে দেখুন, ভূতের উল্লেখ পাবেন। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে এই অলৌকিক বিষয়গুলো মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে যায়। নিছক ব্যবসায় রূপান্তরিত হয় ভৌতিক ঘটনা। Europe এ witch related যে নোংরামি সে যুগে হয়েছিল, তা আজও মানবিকতার দিক দিয়ে লজ্জাজনক।"
"তারমানে এই ওঝা, ঝাড়ফুঁক, ভূতে পাওয়া, এই সবকিছু ব্যবসা?" দর্শকদের মধ্যে থেকে প্রশ্ন আসে।
মাথা নিচু করে একটু হেসে নেয় শুভ। "আমার স্ত্রী আমায় বলতেন, ভূতনাথ। হেহে! ভূতেদের বন্ধু। তাদের রক্ষার্থে যেন কোমড় বেঁধে নেমেছি। আপনার গায়ে যদি আমি এই একগ্লাস জল ছুড়ে মারি, আপনার কি অবস্থা হবে? খারাপ ভাবে নেবেন না।"
"ভিজে যাবো। আবার কি হবে।"
"না যদি সত্যিই করতাম, নিশ্চই মারধর খেয়ে যেতাম। যাক যে যাক। আমি যেটা বোঝাতে এই উল্লেখ করলাম। ভূত বা ভৌতিক বিষয়গুলো আমাদের অনুভূতি। একজন অন্ধ মানুষ যেমন স্পর্শ করে, গন্ধ শুকে, কোন কিছুর উপস্থিতি feel করে, আমাদেরও এই paranormal events গুলো কে feel করতে হয়। আমার ছুড়ে দেওয়া গ্লাসের জলে আপনি যে ভিজে গেলেন, এটা যেমন fact. আবার উল্টোটাও হতে পারে। যার দিকে ছুড়ে মারলাম, সে যদি সময় মত নিজেকে সরিয়ে নিতে পারে, তাহলেই ভিজে যাওয়ার বিপদ থেকে তার মুক্তি।"
"তার মানে?" একসাথে গোটা hall ঘর থেকে প্রশ্নটা উঠে আসে।
"মানে, পুরোটাই psychological. একজন মানুষ যদি ক্রমাগত কোন মৃত মানুষের কথা মনে করেন, তাহলে তার নিজের মস্তিস্কই তাকে সাহায্য করে সেই মানুষটার উপস্থিতি কে feel করতে। এই যে বিশ্বাসটা, এটাই হল গ্লাসের জলে ভিজে যাওয়া। আবার যে সময় মত নিজেকে সরিয়ে নিল, সে ভিজলো না। বোঝাতে পারলাম?"

"তার মানে, hallucination?" সামনের সারির একজন বয়স্ক মহিলা প্রশ্নটি করেন।
"সাহেবরা এখন অন্য কথা বলেছেন। Schizophrenia বলে একরকম মানসিক রোগ হয়। যেখানে একজন মানুষ কোন একজন বা একটি প্রাণীকে চোখের সামনে দেখতে পান যা কিনা সম্পূর্ণরূপে তারই মস্তিষ্কপ্রসূত। আগেকার দিনে, এরম কান্ড দেখলে ওঝা ডাকা হত।  আবার আরেক রকম মানসিক রোগের নাম হল DID, বা নিজের পরিচিতি হারিয়ে সম্পূর্ণ অন্য একজনের চরিত্র হিসেবে নিজেকে ভেবে নেওয়া। যাকে গ্রামে গঞ্জে ভূতে পাওয়া বলে।  অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রথমবার এই বিষয়গুলোর ওপর নতুন করে ভাবনা শুরু হল। একটা নতুন শাখা হল বিজ্ঞানের, যেখানে paranormal events গুলোর সাথে মানুষের অভিব্যক্তি ও psychological রোগের মধ্যে তুলনামূলক বিচার শুরু হল। পঞ্চদশ শতাব্দীতে হেনরিখ ক্রেমার, ম্যালিয়াস এনারা এইসব বিষয়গুলোর কিছু ভ্রান্ত ব্যাখ্যা দিয়ে, কিছু ব্যবসায়ী মানুষের পেট এর ভাত জোগাড় করে দিয়ে যান। তারা মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে দিব্য নিজেদের প্রাসাদ তৈরী করে ফেললেন। Edgar Cayce, Helena Blavatsky, Bill Thompson প্রথমবার এইসব বুজরুকদের কেল্লায় আঘাত হানেন। বিশ্বাসযোগ্য বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মানসিক ব্যাধি, ও অলৌকিক ঘটনার পার্থক্য করে দেখান।"
"মানে demonology, বা ওই psychic studies এর মতন?"
"এগুলোতো theory, আধুনিক যুগ কি আর শুধু কেতাবে বিশ্বাস করে বলুন? এনারা science এর একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করে যান।"

"কিন্তু আপনার কথা মত তাহলে ভূত কেবল অনুভূতি, আর কিছু নয়?"
"এই hall থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পর, যদি আপনার হঠাৎ মনে পরে, table এর ওপর নিজের mobile phone টা ফেলে গেছেন, কি করবেন? নিশ্চই ফেরত আসবেন? মৃত্যুর পরেও তাই হয়। কোন অসমাপ্ত কাজ থেকে গেলে, আত্মার মুক্তি ঘটে না। আমাদের খোদ কলকাতা তে এরম একটি ঘটনা আছে। Sir Rodger Monson সাহেব ছিলেন নৌসেনার কাপ্তান। বাণিজ্যিক জাহাজগুলিকে জলদস্যুদের হাত থেকে বাঁচিয়ে বন্দর অব্দি পৌঁছে দেওয়া ছিল তাঁর কাজ। Bay of Bengal এ একবার একসাথে প্রায় অনেকগুলো বাণিজ্যিক জাহাজ এসে পৌঁছায়। আন্দামানের কিছু জলদস্যুর ভয় সে সময় ওই পথে যাতায়াত করা যেত না। জরুরি তলব আসে Monson সাহেব এর। তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে যাওয়ায় উনি নিজের সাধের ছড়ি ও তামাক খাওয়ার পাইপটি নিয়ে যেতে ভুলে যান। সে যাত্রায় Monson সাহেব মারা যান। তার দেহ সমুদ্রেই হাড়িয়ে যায়। তখন তাঁর পছন্দের জিনিস পত্র, পোষাক ইত্যাদি সমাধিতে রেখে দেওয়া হয়। বেশ কিছুদিন পর থেকেই বাড়িতে উপদ্রব শুরু হয়। Monson সাহেব এর কাজের ঘর কেউ যেন এলোপাথাড়ি ভাবে অগোছালো করে দিয়ে যায়। শেষে Monson সাহেব এর মেয়ে Clara Monson আবিষ্কার করলেন, তাঁর বাবার প্রিয় ছড়ি ও পাইপটা সমাধি তে দেওয়া হয়নি। জিনিস দুটো সমাধিস্ত করে আসার পর সব উৎপাত বন্ধ হয়ে যায়। এই যদি ভারতীয় পরিবার হত? বাড়িতে পুরুত ডেকে জাঁক-যজ্ঞ লাগিয়ে দিত। কিন্তু science এর ভাষায় এটা একরকম Resonance Haunting. সাহেব নিজের অসমাপ্ত কাজটা করে যেতে চেয়েছিলেন, আর সেটাই জানাবার চেষ্টা করতেন।

"বাপরে !" একটা চাপা বিস্ময় এবং ভয় মেশানো আলোচনা দর্শক আসন থেকে ভেসে আসে।  

"আপনারা যেমন  demonology, elemental, psychic events এর কথা বললেন। আজ থেকে বহু বছর আগে, Egyptian রা  তাদের Book of Dead এ মৃত মানুষের ইচ্ছেপূরণ করে দেওয়ার কথা বলেগেছিলো। এমনকি বৌদ্ধ ধর্মেও তাদের Bardo Thodol বইতে এসব বিষয়ের যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।"

"আপনি এসব বিষয়ে কাজ করেছেন?"

"আমার জীবনের গত ৭ বছর, আমি এই কাজের জন্যেই দিয়ে এসেছি। এখনো আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি, সেই মুহূর্ত কে প্রত্যক্ষ করার, বা কোন মৃত মানুষের ইচ্ছেটা জেনে, সেটা পূরণ করার।"

"কিন্তু এদের সাথে যোগাযোগ সম্ভব কিভাবে ?"

"According to Ronald Penn, আমাদের চরম অসহায় অবস্থায়, বা অসুস্থতায়, বা একাকিত্বে, বিষণ্ণতায়, sixth sense trigger হয়। ভয় না পেয়ে বা surrender না করে, ধৈর্য ধরে যদি অপেক্ষা করা যায়, then success হাতের মুঠোয়।"

"আপনি দেখা পেয়েছেন?"

"আশা করি, আমার next যে seminar এ আপনাদের সাথে আবার দেখা হবে, এই সব প্রশ্নের কিছু হলেও উত্তর আমি প্রমাণ সহ সঙ্গে করে নিয়ে আসতে পারবো।"

Conference hall এর বাতি জ্বলে উঠতেই একটা গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। মৌমাছির চাকে ঢিল পড়লে যেমন শব্দ আসে, অনেকটা সেরকম। অনেকে শুভময় এর dais এর সামনে গিয়ে তাকে অভিবাদন জানায়। অনেকে বাকি থেকে যাওয়া তথ্যের সম্মন্ধে প্রশ্ন করে। সেই ভিড়ের মধ্যেই পাঁচজন কলেজ পড়ুয়া এগিয়ে আসে। পলাশ, জ্যোতি, তানিয়া, বরুণ আর নীলাব্জ। এরা সামনে এসে সরাসরি একটাই কথা বলে। Sir আপনি যা কাজ করেন, আমাদের ও শেখান। ব্যাস, যাত্রা শুরু হয় শুভময় এর নতুন কাজে। 

                                                                     //৩//
ICCUতে shift করার পরে বারুণে এর mobile, ভিজে যাওয়া জামাকাপড় ফেরত পায় পলাশরা। উলুবেড়িয়া বাজারপাড়া থেকে ডানদিকে যে রাস্তাটা বৃন্দাবনপুর এর দিকে গেছে। সেখানকার এক British আমলের পুরনো বাড়িতে Supernatural events এর সন্ধান পায় ওরা।  কলকাতা থেকে পুরো team আর set up নিয়ে চলে আসে সেই বাড়িতে। প্রায় ১৬কাঠা জমির ওপর বিশাল বাড়ি, অবশ্য পোড়ো বাড়ি বললেই ঠিক বলা হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের কিছুটা অংশ মেরামত করিয়ে সেখানে একঘর ভাড়াটে থাকেন। শক্তিপদ দত্ত এর পরিবার,তাদের ছোট মেয়ের ক্রমাগত অসুখে ভোগা এবং অদভুত আচরনে চিন্তিত হয়ে যোগাযোগ করেন শুভময়ের সাথে। দিনক্ষণ decide করে ওরা চলে আসে সেই বাড়িতে। বিভিন্ন ঘরে. বাগানে, ছাতে, নিজেদের কাজের যন্ত্রপাতি set করতে ব্যস্ত ছিল সবাই। এদের মধ্যে জ্যোতি আর বরুণ গিয়েছিল বাগানে camera র thermal detectors set করতে। কাজের মাঝে bathroom যাওয়ার জন্যে জ্যোতি বাড়ির ভিতর একবার যায়। কিন্তু ফিরে এসে দেখে যন্ত্রপাতি সব ভেঙে পরে আছে, বরুণ নেই। প্রথমে সে ভেবেছিলো বরুণ বোধয় ভয় পেয়ে ঘরের বাকিদের ডাকতে গেছে। কিন্তু সেখানে গিয়েও জানতে পারে যখন বরুণ আসেনি। খোঁজ শুরু হয়। ওদিকে আবার শুভময় বাড়ির দোতলার একটা ঘরে নিজের machine reading দেখে বিস্মিত হয়ে কলকাতা রওনা হয়েছিল। দুটো জরুরী জিনিস আনবার জন্যে। শুভময় কে phone করে জানা গেলো বরুণ তার সাথেও কলকাতা যায়নি, সবাই দুশ্চিন্তায় পরে যায়। মাস কয়েক আগে নীলাব্জ এই কাজের মধ্যে থাকাকালেই অসুস্থ হয়ে পরে। এখনো তার মানসিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। এখন আবার বরুণ।

প্রায় ঘন্টা তিনেক খোঁজার পরেও বরুণ কে পাওয়া যায়না। এমন সময় আবার দত্ত বাবুর ছোট মেয়েও উধাও। তাকেও নাকি আধ ঘন্টা হল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জ্যোতিই তখন আবিষ্কার করে মিনি কে। বাগানের একদিকে পরিত্যক্ত কুয়ো ছিল একটা। মিনি তার সামনেই দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথা বলছিলো। জায়গাটা এতই আবর্জনা পরিপূর্ণ সেদিকে কোনও দিনও কেউ যায়নি। কুয়োর কাছে গিয়ে মিনি কে পাওয়ার পর কুয়োর ভেতরে আধমরা অবস্থায় বরুণ কেও পাওয়া যায়। লোকজন জোগাড় করে কুয়ো থেকে ওর দেহটা তুলতে আরো খানিকটা সময় যায়। দত্তবাবু এখানকার স্থানীয় একজন ডাক্তারকেও নিয়ে এসেছিলেন। কুয়ো থেকে তোলার পর, তিনি জানান, বরুণের প্রাণ এখনো আছে। যত জলদি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে গেলে এখনো বাঁচানো যেতে পারে। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর emergency কিছু treatment করে, ICCU তে shift করা হয়।

"বরুণ এর বাড়িতে খবর দিয়েছিস কেউ?" পলাশ জিজ্ঞেস করে।
"এখনো কিছু জানানো হয়নি। বরুণের মা এর cardiac problem. এই খবর পেলে আরেক কেলেঙ্কারি হলে সর্বনাশ।" জ্যোতি বলে।
"Case টা যে কি হল বোঝা যাচ্ছে না। সবটা খুলে বলতো জ্যোতি।" তানিয়া জানতে চায়।

"শুভ দার সাথে আমি আর বরুণ উত্তর দিকের একটা ঘরে কাজ করছিলাম। ওই ঘরের জালনা দিয়ে বাগানের একটা অংশ দেখা যায়। শুভ দা বাগানের মধ্যে কিছু একটা দেখতে পায়। তারপর আমাকে আর বরুণ কে ওই জায়গাটায় machine গুলো লাগিয়ে আসতে বলে।"
"তারপর?"
"ভালোই কাজ হচ্ছিলো। বরুণ গাছের সাথে machine গুলো fit করছে, আর আমি camera নিয়ে কতগুলো জায়গা shoot করছি। কুয়ো টা আমরাও দেখেছিলাম। কিন্তু সাপের ভয়ে ওদিকে যাইনি। এরপর bathroom যাবো বলে আমার gear গুলো রেখে বাড়ির ভিতরে যাই। বরুণ কাজ করছিলো। বাড়ির ভিতর ঢুকে শুভ দার সাথে দেখা। একটা ভালো link পেয়েছে বলে জানায়। এবাড়িতে strong একটা negative energy stored হয়ে আছে। Laser grid, Thermo cam আর ectosheild টা আনবে বলে শুভ দা বেরোচ্ছিল। ওখানকার খবর জানিয়ে আমিও ভিতরে যাই, শুভ দাও বেরিয়ে যায়। ফিরে গিয়ে দেখি জিনিস পত্র ভাঙা। বরুণ নেই।"

"বরুণের mobile টা কাজ করছে?" পলাশ জানতে চায়।

হাসপাতাল থেকে ফেরত দেওয়া জিনিস গুলো থেকে mobile টা বের করে নেয় জ্যোতি। "জল ঢুকে গেছে এত। একি আর চলবে?" পলাশের দিকে বাড়িয়ে দেয় mobile টা। সত্যি শোচনীয় অবস্থা mobile এর। এক মাসও হয়নি নিজের টাকা জমিয়ে কিনেছিল বরুণ।  আজ সে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। Mobile টা খুলে সিম আর memory card টা বের করে নেই পলাশ। অন্য একটা মোবাইলে সেগুলো লাগিয়ে on করতে missed call alert গুলো ঢুকতে শুরু করে। Sms ও ঢোকে অনেকগুলো। memory card এর image folder এ ঢুকে পলাশ শেষ ছবিগুলো দেখতে শুরু করে। জ্যোতি আর বরুণ যেখানে কাজ করছিল সেখানকার অনেকগুলো ছবি তুলেছিল সে। উপস্থিত সবাই মোবাইলের screen এর দিকে মন দেয়। একটা video ও করেছিল বরুণ।  সেটা চালু করতে সেই মুহূর্তের ঘটনা কিছু জানা যায়।

video চলতে শুরু করে.......
"বাড়ির পশ্চিমদিকের বাগানে আমি আর জ্যোতি কাজ করছিলাম। শুভ দা এখানে কিছু একটা দেখতে পেয়ে আমাদের পাঠায়। জ্যোতি বাড়ির ভিতরে গেছে। Thermal sensor গুলো লাগানো শেষ, কিন্তু monitor এ কোনো pulse receive হচ্ছে না। Walky-talkie তে একটা static শোনা যাচ্ছে।"
Video র মধ্যে সেটা শোনায় বরুণ। এমন সময় ঝুপুস করে একটা আওয়াজ ভেসে আসে video থেকে। "কুয়োর দিক থেকে এলো শব্দ টা।  আবার বরুণের মুখ ভেসে ওঠে screen এ। ওদিকটায় আমরা যায়নি সাপের ভয়ে। কিন্তু এখন যেতেই হচ্ছে। ওই যে আবার। আবার সেই শব্দ। জলের মধ্যে ভারী কিছু ফেললে ঠিক যেমন আওয়াজ আসে। বাড়িটা ঠিক আমার পিছন দিকে। এদিকে প্রাচীরের ওপারে ধানক্ষেত টা।"
পুরোনো অংশ থেকে বেশ কিছুটা বিরতি কাটিয়ে আবার শুরু হল। বরুণের গলা শোনা গেল আবার।
"শুভময় দা এসেছিলো। কলকাতা যাচ্ছে কয়েকটা জিনিস নিয়ে আসতে।  এই বাড়িতে আমরা যা খুঁজছি, তার presence আছে।"
Screen  এ কুয়োর ছবি ভেসে ওঠে।
"এখন থেকেই শব্দটা আসছিলো। কিন্তু কুয়োর জল তো শান্ত। কোন কিছু পড়েছে বলে তো মনে হচ্ছে না! চারপাশেও সেরম কিছু পরে নেই। এদিকে কয়েকটা নারকেল গাছ আছে বটে, কিন্তু সেগুলো থেকে ডাব পড়লেও মাটিতে পড়বে, কুয়োতে নয়।"

আশেপাশের গাছগুলোর ছবি video তে দেখা যাচ্ছে, এমন সময় কিছু একটা হয়। কেউ যেন বরুণ কে এসে ধাক্কা মারে। কুয়ো তে পরে যাওয়ার free fall টুকু shoot হয়েই সব অন্ধকার। স্তম্ভিত হয়ে বসে আছে team মেম্বারদের সবাই। ঘটনার প্রেক্ষাপট টা তাদের সব হিসেবের বাইরে।

                                                                     //৪//
"আচ্ছা শুভ দা, এই যে ব্যাপারগুলো প্রত্যক্ষ করা। এগুলো কি সত্যিই সম্ভব হয়?" শুভময়ের studio তে তারা পাঁচ বন্ধু মিলে এসেছে। বিদেশ থেকে নিয়ে আসা যন্ত্রপাতি গুলো দেখতে দেখতে প্রশ্নটা করে পলাশ।
"অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়। ধরে নে একটা রাস্তা। সেখান দিয়ে প্রায়ই কতলোক যাতায়াত করে। এমন একজন ব্যক্তি, হঠাৎ সেই পথের এক বিশেষ জায়গায় বিশেষ দিনে, গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছিল। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে তার সেদিন অকাল মৃত্যু হয়। ইতিহাস সাক্ষী আছে, অনেক case study ও আছে। যে সেই স্থানে সেই বিশেষ লোকটির আত্মা আসে। এটাই হল resonance haunting. বেপারটা আপেক্ষিক। এর পিছনে আরো অনেক theory আছে। কিন্তু বিষয়বস্তু এটাই।"
"এই যে EMF meterগুলো এগুলো function করে কি করে?"
"Medium শব্দটা শুনেছিস তো? প্ল্যানচেট এ যারা বসে, তাদের মধ্যে একজন medium হয়। ১৮৫৪ এর পর থেকে এই মাধ্যম ব্যবহার এর চল বেড়ে যায়। ঘরে ঘরে তখন medium এর আবির্ভাব হতে শুরু করে। New Yorkএর Fox Sistersদের কথাই ধরে নে।"
"হ্যা শুনেছি। Neo-spiritualism."
"অন্যদিকে আবার Maxwell শুরু করলেন Electromagnetism নিয়ে গবেষণা। সেটা ওই ১৮৫০ এরই দিকে।"
"Maxwell মানে সেই James Clerk Maxwell? ওরে বাবা! উনিও এসবে ছিলেন?"
"সেরম সরাসরি যোগাযোগ এর কোন ইতিহাস ছিল কিনা আমার অবশ্য জানা নেই, তবে তাঁর আবিষ্কার ও theory গুলো Spiritualism এর গবেষণাগুলি কে, কিছুটা হলেও backup দেয়। আলোও যে একরকম electromagnetic wave, সেটা তাঁরই ব্যাখ্যা। উত্তরসূরী Hertz, Oscillating electrical circuit আবিষ্কার করে electromagnetic wave পরিমাপ করার উপায় বলে দিয়ে যান।"
"তারপর?" বাকি সদস্যরাও এগিয়ে আসে আলোচনায়। শুভময় বলে চলে।
"গীতায় কি বলেছিল মনে আছে? আত্মা অবিনশ্বর। আত্মার বিনাশ নাই। এই Maxwell এরই দুই নিকট বন্ধু বা অনুগামীও বলতে পারিস, Peter Tait এবং Balfour Stewart ইথার এর বিভিন্ন ব্যাখ্যার যোগসূত্র স্থাপন করে একটি বিখ্যাত বই উপহার দিয়ে যান তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কে। বইটার নাম The Unseen Universe."
"নামটা শোনা। কিন্তু এগুলো তো বিজ্ঞানের বই, এর সাথে আত্মার সম্পর্ক কোথায়?"
"এই Tait সাহেব বললেন, 'mind survive eternally, as the configurations of spirit in the ether.' ভেবে দেখ, আমাদের প্রাচীন পুঁথিগুলোতে যে রহস্যের ব্যাখ্যা বহুযুগ আগে থেকেই দেওয়া ছিল। সেটা আমরা কত পরে জানতে পারলাম।"
উপস্থিত পাঁচজনের মুখে কথা নেই। অবাক বিস্ময়ে তারা যেন বাকশক্তি হারিয়ে বসেছে। শুভময়ের ব্যাখ্যাগুলি তাদের মনের প্রতিটি কোণে যেন নতুন চিন্তার দিগন্ত কে উন্মোচিত করে দিচ্ছে বারবার।

"আমাদের মন, বিশেষ করে conscious mind, যে একরকম electromagnetic field তৈরি করে, এই কথা তো প্রমাণিত সত্য। তাহলে মৃত্যুর পরে, সেই মনের শক্তিটা কি হয়? শক্তির যদি বিনাশ নাই হয়, তাহলে? ব্যাখ্যা বলছে, এই শক্তিটাই মৃত্যুর পরে দেহ থেকে মুক্তি পায় এবং পরিবেশে বিরাজ করে। আর সেই শক্তিকেই পরিমাপের এককে ফেলে, তাদের উপস্থিতি কে প্রমাণ করতে এইসব যন্ত্রের আবিষ্কার।"

"আচ্ছা, একজনের আত্মা কি আরেকজন জীবিত মানুষের মধ্যে আসতে পারে?" তানিয়া আনমনেই প্রশ্নটা করে বসে।

"Teleportation of soul. হ্যা হতে পারে। তবে cinema তে যেমন দেখিয়েছে, সেরম নয়।" হাসতে হাসতে বলে শুভময়।
"মানে?"
"আত্মা একটা concept, মানুষের বানানো একটা ধার্মিক বিশ্বাস। Teleportation এর যে আসল ব্যাখ্যা তার জন্যে যে বিপুল পরিমানের শক্তি প্রয়োজন, সেরম শক্তির হদিশ এখনো অব্দি বিরল। তবে transformation of concept, এইটা সত্যি হতে পারে। কারণ তার নজির আমাদের আশেপাশে অনেক আছে।"
"একটু contradictory হয়েগেলো না ব্যাপারটা?" পলাশ বলে ফেলে।
"এটাই তো বিজ্ঞানের মজা। যদি সন্দেহই থেকে থাকে, কাগজ কলম নিয়ে নেমে পর। হাতেনাতে প্রমান জোগাড় কর। নিজের সন্দেহ নিজেই দূর কর। এই যেমন আমাকেই ধরে নে।"

"তুমি প্রিয়াদিকে দেখতে পাও বলেছিলে, সেটা কি সত্যি?"

শুভময় খানিক চুপ করে যায়। তারপর দেওয়ালে টাঙানো প্রিয়ার ছবির দিকে তাকিয়ে বলে, "এরা কি বলছে শুনেছ?"

এত গম্ভীর ভাবে কথাগুলো বলে শুভময় যে সবাই সেই দিকেই তাকায় যেন সত্যিই প্রিয়া ঐদিকে দাঁড়িয়ে আছে। এদের মুখের ভাব দেখে আর থাকতে না পেরে শেষে হেসেই ফেলে শুভময়। রসিকতা টা ধরতে পেরে তখন বাকিরাও হাসিতে যোগ দেয়।

প্রিয়ার ছবিতে টাঙানো মালাটা শুকিয়ে গেছিলো। এদের হাসির ফাঁকে সেটা টুক করে খসে পরে মাটিতে। ব্যাপারটা কারুর নজরে পড়েনা।

                                                                     //৫//
হন্তদন্ত হয়ে ICCUর সামনে পোঁছায় শুভময়। বাইরে বসার জায়গায় team member দের বাকিরা জড়ো হয়ে আছে।
"এই যে, তোমরা এখানে? ওদিকে খবর কি?" পলাশ এর সামনে এসে দাঁড়ায় শুভ। পলাশ এর চোখদুটো লাল হয়ে আছে। ক্লান্তির ভাব ও স্পষ্ট। "ডাক্তার রা বলছে বিপদ কাটেনি এখনো। কিছু বলতে পারছে না।"   
"একবার ভেতরে যাওয়া যাবে?" শুভময় জিজ্ঞেস করে।
"মনে হয় না যেতে দেবে। এখানকার head যিনি এখনো এসে পৌঁছান নি। কাজেই কি যে চিকিৎসা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না।"

"তুমি কলকাতা চলে যাওয়ার আগে তো বরুনের সাথে দেখা হয়েছিল তোমার? কি বলেছিলো ও?" তানিয়া এক কোণে বসে কাঁদছিলো। হঠাৎ উঠে এসে প্রশ্নটা করে।

শুভময় খানিকটা ঘাবড়ে যায়। "আমায় তো সেরকম কিছু বলেনি? কুয়ো থেকে নাকি শব্দ আসছে একটা, সেটা দেখতে যাচ্ছিলো। আমি বললাম যা করবে সাবধানে। আমি না আসা অব্দি কোনো monitoring এ বেড়িও না।"

কথাগুলো যেন ঠিক বিশ্বাস হয়না তানিয়ার। এমন সময় ward এর ভিতর থেকে ডাক পরে। পলাশ ও শুভময় এগিয়ে যায়। বাকিরা দরজার সামনে এসে wait করতে থাকে।

"তুমি এখানেই থাকো শুভ দা। এরা একজনের বেশি allow করবে না।" পলাশ শুভ কে বাধা দিতে যায়।
"আরে তুমি চল না। এরা আমায় কিছু বলবে না।"

"বরুন সেনগুপ্ত আপনার কে হন?" attendant desk এ দাঁড়িয়ে প্রশ্নটা করেন একজন। ইনিই বোধয় head of the department.
"আমাদের বন্ধু।"
"তা এরম হল কি করে?" case file টা দেখতে দেখতে একবার আড়চোখে পলাশ কে দেখে নেন ডাক্তার।
"কুয়োর পাশে ছবি তুলছিল। হঠাৎ কিছুতে ধাক্কা খেয়ে বা হোঁচট খেয়ে কুয়োর ভিতর পরে যায়।"
"তুমি সেখানে ছিলে ?"
"আজ্ঞে না।"
"তাহলে জানলে কেমন করে?"
"কুয়োতে পরে যাওয়ার আগে অব্দি তোলা একটা video এই মাত্র দেখলাম ওর mobile  এ।"
"তা ওকে কুয়ো থেকে তুলতে এত দেরী হল কেন? এটা একটা পুলিশ case জানো তো?"
"আপনি কি পুলিশ?" পলাশ এর ধৈর্য হারায়।
"মানে?" একটু বেসামাল হয়ে যান ডাক্তার এরম প্রশ্নে।
"ওর কি হয়েছে? এখন কেমন আছে? আদৌ বাঁচবে কি?"
"তোমরা আজকাল কার ছেলে ছোকরা, তোমাদের সাথে কথা বলাও ঝক্কি। বরুনের দুটো lungs এই অনেক জল ঢুকেছে। এখন respiratory support দেওয়া হয়েছে। পরে যাওয়ার সময় মাথায় দুবার ধাক্কা লাগে। তার impact এ brain কতটা damage হয়েছে সেটা CT scan না দেখলে বলা যাবে না। এই মুহূর্তে যা condition, ৪৮ঘন্টার আগে কিছু commit করাটা possible না।"
"CT scan তো হয়েছে?"
"হ্যা হয়েছে, তবে এখনো plates গুলো আসেনি। আমি এখন আধ ঘন্টা OPD তে আছি। যদি এরা তার মধ্যে তৈরী করে আমায় দেখাতে পারে, then কিছু একটা idea আমরাও পাবো।"
"আপনি একটু বলেদিননা তাড়াতাড়ি করতে?"
"বরুনের বাড়ির লোকজন কেউ এসেছেন?"
"না, ওর মা-বাবা দুজনেই খুব অসুস্থ। এখনো জানানো হয়নি।"
"কাউকে তো লাগবে। এসব case এ guardian কারুর থেকে consent নিতে হয়। বড় কাউকে ডেকে নাও।"
"আমাদের sir আছেন। ওনাকে দিয়ে হবে না?"
"তারপর patient এর relatives এসে claim করলে কিছু? খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় তো patient কে আমরা পাইনি। চেষ্টা করো বাড়ির কাউকে নিয়ে আসতে। আর তোমাদের যে sir আছেন, ওনাকে আমার সাথে OPD তে দেখা করতে বল।"

এতক্ষনে খেয়াল হয় পলাশের। শুভ দা কে দেখা যাচ্ছে না কোথাও। এই তো ছিল। কোথায় উধাও হয়ে গেলো? বরুন কে যে ঘরে রাখা হয়েছে, তার সামনে এসে দাঁড়ায় পলাশ। দরজার কাচের অংশ দিয়ে শুভ দার দেখা মিলল। ডাক্তারের সাথে কথা বলতে সে যখন ব্যস্ত ছিল। ফাঁক বুঝে বরুনের ঘরে ঢুকে গেছে শুভ দা। পলাশ ও দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতে যাবে এমন সময় nurse এসে আটকে দেয়।
"আপনাকে ভিতরে যাওয়ার permission কে দিলো?"
"আরে আমাদের একজন ভিতরেই আছে। তাকে ডাকবো বলে ভিতরে যাচ্ছিলাম।"
Nurse টি নিজেও ভিতরে উঁকি মেরে দেখে।
"কোথায় কে?"
"আরে ওই তো। ......" পলাশ নিজেও কথা হারায়। curtain গুলোর আড়ালে চলে গেছে শুভ দা।
"আমাদের মাস্টার মশাই, শুভময় মল্লিক। ওই পর্দাগুলোর আড়ালে দাঁড়িয়ে আছেন। ওনাকে ডেকে দিন।"
"আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি বাইরে যান, যদি সত্যিই কেউ থেকে থাকে, তার ব্যবস্থা করছি।"

একরকম জোর করেই পলাশ কে বের করে নিয়ে যায় security. Ward এর বাইরে আসা মাত্রই বাকিরা ঘিরে ধরে। পলাশ এক এক করে ডাক্তারের সব কথা বলে। বাড়ির লোককে ডাকার বিষয়েও জানায়। আর শুভ দা যে সবার চোখ কে ফাঁকি দিয়ে দিব্য বরুনের কাছে পৌঁছে গেছে সে কথাও জানায়। তানিয়া এই খবর টা শুনে একটু যেন অস্বস্তিতে পরে যায়। আজ প্রায় ৩ বছরের সম্পর্ক তার বরুনের সাথে। এরকম ভাবে বরুন চলে যাবে, মেনে নেওয়াটা কষ্টের। তানিয়ার মনে আরো সন্দেহ জেগেছে শুভময় কে নিয়ে। বরুনের সাথে শুভদার  দেখা হওয়ার পর মিনিট দুই যেতে না যেতেই accident টা হয়। একটা লোক কুয়োতে পরে গেল মানে নিশ্চই শব্দ হয়েছে। Simple ignore করে গিয়েছিল কি শুভ দা, নাকি শুভ দা নিজেই ভৌতিক বিষয়গুলো কে actual প্রমাণ করার জন্যে ধাক্কা মেরেছিলো বরুন কে? শুভময়ের কিছু আচরণ যে আর পাঁচজন স্বাভাবিক মানুষের মত নয়, সেটা কিছুদিন যাবৎ খেয়াল করেছে তানিয়া। Supernaturals এর ওপর শুভময়ের যে obsession সেটা বাড়াবাড়ি বলা যেতেই পারে।

একটা phone আসায় চিন্তার সূত্র ছিন্ন হয় তানিয়ার। বরুনের sim card টা তানিয়ার mobile এ লাগানো হয়েছিল। কাঁপা কাঁপা গলায় phone টা receive করে তানিয়া।
"Hello!"
"আমি উলুবেড়িয়া থানার SI বলছি। শুভময় মল্লিক নামের কাউকে চেনেন?"
তানিয়া ফোনটা পলাশ এর দিকে এগিয়ে দেয়।
"Hello, কে বলছেন?"
"উলুবেড়িয়া থানা থেকে বলছি। শুভময় মল্লিক নামের কাউকে চেনেন?"
"আজ্ঞে হ্যা, আমার মাষ্টার মশাই। কেন?"
"আজ কিছুক্ষন আগে, highway তে একটা accident হয়। কালো রঙের Hyundai Verna. মৃত বেক্তির wallet থেকে victim এর নাম জানা যায়। আর তার mobile এর last dial এ এই নম্বরটা দেখে phone করছি। আপনারা কেউ একটু উলুবেড়িয়া highway তে 2nd culvert এর কাছে চলে আসুন।"
"কোথাও একটা ভুল হচ্ছে আপনাদের। Sir তো আমাদের সঙ্গেই আছেন। আমরা উলুবেড়িয়া সুরক্ষা hospital এ আছি।"
"তাহলে কি ওঁনার গাড়ি টা কেউ চুরি করেছিল? কিছু বলেছেন উনি?"
"না, বোধয় উনি নিজেও জানেন না। আমাদের এক বন্ধু খুব অসুস্থ। তাকে নিয়ে আমরা খুব ব্যস্ত। আপনি এখানে চলে আসুন। Sir এর সাথে direct কথা বলে যান।"

Call টা কাটার পর সবাই উৎসুক হয়ে পলাশের দিকে এগিয়ে আসে। পলাশ এই মাত্র শোনা ঘটনাটা জানায়। তানিয়া এক কোণে চেয়ার এ বসে কাঁদছিলো। কথাগুলো শুনেই তড়াক করে লাফিয়ে ওঠে, তারপর ছুটে বেরিয়ে যায় waiting lobby থেকে ward এর দিকে। কেউ কিছু বুঝে ওঠবার আগেই দরজা খুলে সোজা চলে যায় বরুনের ঘরের সামনে। দরজায় লাগানো কাঁচের মধ্যে দিয়ে সে দেখে বরুন আর শুভময় কে। বরুনের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে শুভময়। একবার যেন তাকালো তানিয়ার দিকে। তারপর সেই পরিচিত হাসিটা। আসতে আসতে হাওয়ায় মিলিয়ে যায় শুভময়ের দেহটা।


                                                                 //৬//
সেই ঘটনার পর প্রায় সাতমাস কেটে গেছে। সেদিন ICCU এর দরজা দিয়ে কি দেখেছিল তানিয়া, কেউ জানে না। দরজার সামনে কিছুক্ষন দাঁড়ানোর পরেই তানিয়া অজ্ঞান হয়ে যায়। তারপর সেই রাতেই তানিয়া আত্মহত্যা করে। কারণ কিছু জানা যায়নি। অন্যদিকে accident এ মৃত ব্যক্তি যে শুভময় ছিল সেটাও সত্যি। হাসপাতাল চত্বর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও শুভময় কে না দেখতে পেয়ে, পলাশ ও জ্যোতি যায় পুলিশ এর সাথে। লাশ দেখে জ্যোতি শুধু বলেছিল 'অসম্ভব'। পলাশ নিজে অনেক ভেবেও কোন কুলকিনারা পায়নি। ৪৮ ঘন্টা লাগেনি। পরদিন সকালেই বরুনের জ্ঞান ফেরে। প্রায় বারোদিন হাসপাতালে থাকার পরে ছুটি পায়। তানিয়ার মৃত্যুর শোক তাকে এখনো তারা করে বেড়ায় বলে মনে হয়।

এই ঘটনার পরে অবশ্য শুভময়ের দল ভেঙে যায়। একমাত্র বরুন আর পলাশ কাজটা চালিয়ে যেতে থাকে। তারা মাঝে মধ্যেই আসে শুভময়ের studio  তে। দরকারি বই বা gadgets নিতে। জ্যোতি একটা বিলিতি পত্রিকা অফিসে photographer এর চাকরি পেয়ে চলে যায়। নীলাব্জ এখনো মানসিক হাসপাতালে। পলাশ একটা school এ পড়ায়, আর মাঝে মধ্যে এইসব বিষয়ে কাজ করে, লেখালিখি করে। একমাত্র বরুন, এই কাজটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছে।

শুভময়ের ইতিহাস তারা পরে জেনেছে ভালোভাবে। কলকাতা St. Xavier's থেকে Physics নিয়ে পাশ করে London এ চলে যায় শুভময় ১৯৯৮ তে। সেখানকার King's College থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করে EMF নিয়ে research শুরু করে। তারপর এইসব বিষয়ে interest পেয়ে পড়াশুনা শুরু করে। College এ থাকতেই প্রিয়া সিংহ নামে একজনের সাথে প্রেম ছিল, বিলেত যাওয়ার পরে বিয়ে। বেশিদিন অবশ্য সংসার করা হয়নি তাদের কারণ প্রথম সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায় প্রিয়া। বাচ্চাটাকেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। সেই থেকেই Paranormal ও psychic বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু। প্রায় পাঁচ বছর বাইরে থাকার পরেও প্রিয়ার শোক ভুলতে না পেরে, ওখানকার সব ছেড়ে কলকাতা চলে আসে। পুরোনো college এ গিয়ে নিজের কাজের সম্মন্ধে কিছু বন্ধুর কাছে বলায় তারাই সব বন্দোবস্ত করে।  Lecture, seminar আরো অন্যান্য events এর। ক্রমে পরিচিতি বাড়ে ও প্রতিষ্ঠিত হয় সে। যেসব যন্ত্রপাতি সে ব্যবহার করত, বেশিরভাগ বিলেতে থাকাকালীন সংগ্রহ করেছিল সে। তারপর এক এক করে, নিজের বাড়ি, studio এসব করে। নিকট আত্মীয় বলতে তার এক মামা ছাড়া আর কেউ ছিল না। কিন্তু স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ছিল না বলে শুভময়ের সাথে খুব একটা যোগাযোগ রাখতেন না। এখন অবশ্য আর যোগাযোগ রাখার প্রশ্নই ওঠে না।

ষ্টুডিওটা বরুন handover নিয়েছে। ওপর মহলে একটু পয়সা খাওয়াতেই legal papers জোগাড় হয়ে যায়। তারপর এদিক ওদিক পয়সা ঢেলে বেশ গুছিয়ে নিয়েছে ব্যবসাটাকে। শুভময়ের মত এখন সে ও সেমিনার দিতে যায়। লোকজন আসে ভৌতিক সমস্যা নিয়ে। সে সমাধান বাতলে দেয়। সেরকম বুঝলে নিজেই যায়। ১৭ই এপ্রিল ছিল প্রিয়ার মৃত্যুদিন। শুভময় এর ষ্টুডিও তে যাওয়ার সময় তাই কিছু ফুল কিনে নেয় পলাশ। সদ্য Mumbai থেকে ফিরেছে বরুন সেমিনার দিয়ে। বরুনের সাথে দেখা করাটাও উদ্দেশ্য ছিল। ঘরে ঢোকার সময়েই একটা বিষয় লক্ষ্য করে পলাশ।  দরজার বাইরে থেকে স্পষ্ট শুনতে পে বরুন কারো সাথে যেন কথা বলছে। এরকম ভাবে আরেকজন একলা ঘরে কথা বলত। শুভময়ের কথা তা মাথায় আসতেই দরজায় টোকা দে পলাশ। ভিতরে সব চুপ। বরুন এসে দরজা খুলে দেয়। ভিতরে ধূপের গন্ধ। প্রিয়ার বড় ছবিটা ফুল দিয়ে সাজানো। সামনে ধুপ দেওয়া হয়েছে। পলাশ কিছু না বলে নিজের কিনে আনা  ফুলগুলো প্রিয়ার ছবির সামনে রাখে। বরুন এর মধ্যে কেমন যেন একটা উসখুসে ভাব লক্ষ্য করে পলাশ।

"চা খাবি তো?" বরুন নিজেই শুরু করে কথা।
"হ্যা! তা মন্দ কি?" পলাশ একটা chair টেনে নিয়ে বসে।
"তাহলে একটু wait কর, আমি এক্ষুনি আসছি।" বরুন একটা thermo flask নিয়ে বেরিয়ে যায়।

শুভময়ের working table টা বেশ গুছিয়ে রাখা আজ। বিলিতি journals আর কিছু type করা papers রাখাছিলো একপাশে। একটা খুব পরিচিত জিনিস চোখে পরে পলাশ এর। শুভময়ের wallet . বরুন নিশ্চই আলমারি থেকে বের করেছে। এই wallet এ একটা বিশেষ জিনিস রাখত শুভ দা। মনে পরে যায় পলাশের। ১৮১৮ সালের ভুল করে mint হওয়া একটা তামার coin. এটার বৈশিষ্ট ছিল, শুভ দা বলত, আত্মার উপস্থিতি এই coin জানান দিত। যদি সত্যি কোন আত্মা এসে থাকে কাছে, সেই শক্তির প্রভাবে, এই তামার coin টাকে  টেবিল বা যে কোন সমতল জায়গায় ঘুরিয়ে দিলে, ঘুরতেই থাকে। এই কথার সূত্র ধরেই সাতমাস আগের সেই রাত টা মনে পরে যায়। নিজের মনেই হাসে পলাশ।  তারপর coin টা নিয়ে টেবিল এ ঘুরিয়ে দেয়। দুপাকে ঘুরেই coin  টা পরে যায়। আবার তুলে নিয়ে পাক দেয়।  ঘরের ভেতরে তাপমাত্রাটা যেন কয়েক পারদ নেমে গেল। একটা দমকা হাওয়া জানলা দিয়ে এসে ঢুকে পরিবেশ তা যেন থমথমে করেদিল। হঠাৎ current টাও চলে যাওয়ায় একটা আবছা অন্ধকার পরিবেশ তৈরী হয়। পলাশ এর অবশ্য সেদিকে খেয়াল নেই। Coin টা নিয়ে বেশ মজা পেয়ে গেছে সে। চতুর্থ পাক দেওয়ার পরেই পরিবর্তন টা খেয়াল করে সে। পিঠের ওপর দিয়ে ঠান্ডা একটা ঘামের স্রোত বয়ে যায়। এপ্রিল মাসে এরকম ঠান্ডা লাগার কথা নয়। উঠে জানলার দিকে যেতে গিয়ে খেয়াল হয় মেঝেটা যেন ভিজে আছে। ঘরে ঢোকার সময় তো এরকম ছিলনা। কোন জলের বোতল পরে গেছে কিনা দেখার জন্যে এদিক ওদিকে তাকাতেই বইয়ের আলমারির দিকে চোখ আটকে যায়। কুয়ো থেকে বরুন কে ঠিক যে অবস্থায়, যে পোষাকে তোলা হয়েছিল, সেইভাবে সে দাঁড়িয়ে আছে। ভিজে শরীর থেকে জল পরে মেঝের এই অবস্থা। আধ বোজা গলায় শুধু এটুকু শোনা যায় পলাশ মুখ থেকে....... "বরুন তুই? তাহলে। ..........."

ঘরের নীরবতা আরো প্রকট হয়ে ওঠে যেন কেবল একজনের উপস্থিতি কে জানান দিতে। বার্নিশ করা president টেবিলের মসৃণ তলের ওপর ক্রমাগত ঘুরে যাওয়া তামার coin এর খস খস শব্দ।    





        






কোন মন্তব্য নেই: