মঙ্গলবার, ২৬ মে, ২০২০

COVID situation and Dentistry

আরও কয়েক মাসের বেকারত্ব??


প্রায় দু মাসের ওপর কাজ নেই। নিয়ম মেনে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের চেন ভাঙতে স্বেচ্ছায় কর্মহীন দশা। শুধু আমি নয়। হিসেব করে দেখলাম আমার মতই কর্মহীন আরো বহু। সারা বিশ্বে অনেক দাঁতের ডাক্তার শুধু মাত্র ভাইরাস সংক্রমন বন্ধ করার উদ্দেশ্যে এই বিরতি নিয়েছিল। কিন্তু ফলশ্রুতি হলো শূন্য। এখন সত্যি আফসোস হয় আগেই সব বন্ধ না করে কাজ করে গেলে এখন বিরতি নেওয়া যেত।সংক্রামিত পরিসংখ্যান এখন ১ লক্ষ ৩২ হাজার। উপসর্গ হীন রোগের বাহকদের কথা তো ছেড়েই দিলাম। সরকার থেকে এখন অনুমতি আসছে ডাক্তাররা চাইলে চেম্বার খুলতে পারেন। আরে মশাই এখন তো বিপদ চোখের সামনেই রয়েছে। কোন নিশ্চয়তা নেই কে যে সংক্রমনের বাহক।

তো কি হয়েছে? তুমি ডাক্তার। রোগ কে তুমি ভয় পাবে?

আরে ধুর মশাই ডাক্তার। এই ডাক্তারিতে একটা কথা আছে। "The goal of medicine is to see its own end and not to create more diseases."

রোগের বিরুদ্ধে সাহস দেখিয়ে চেম্বার খুলে চিকিৎসা করলাম। শেষে নিজেই একজন উপসর্গ হীন বাহক হয়ে আরো চার পাঁচ জন রুগীকে সংক্রমিত করে দিলাম। আজ না হোক কাল সে কথা ধরা পরবেই। তখন নিজের কাছে নিজেই ছোট হয়ে যাবো। এতটাও সরল সোজা রোগ নয় এই করোনা ভাইরাস। ভগবান না করুক কোনদিন, হয়ত আমার নির্বুদ্ধিতায় একজন বৃদ্ধ রুগী সংক্রমিত হয়ে গেলেন চেম্বার থেকে। একই সাথে তাঁকে ও তাঁর পরিবার কে আমি বিপদের দিকে ঠেলে দিলাম। এই বিবেক দংশনের থেকে আমার বেকারত্ব ভালো। দেশে করোনা সংক্রমনের হার এখন ঊর্ধ্বমুখী। কোন বাছ বিচার ছাড়া মানুষ জন একেবারে সাধারন দিনের মতন জীবন কাটাচ্ছে। এতগুলো লোকের চাকরি গেল। এত মানুষের দোকান বন্ধ, মাইনে পাচ্ছে না। দরকারি চিকিৎসার সামগ্রী নেই, খাবার নেই, ওষুধ নেই। এত গুলো লোকের এতটা আত্মত্যাগ পুরোটাই বিফল? একেবারেই বিফল?

এত ভয় পাচ্ছ কেন ভায়া। সরকার থেকে তো নিয়ম বাৎলে দিয়েছে?

নিয়ম?? পড়ে দেখেছেন সেই নিয়ম? ওরে বাবা মানতে গেলে তো আবার সেই নতুন করে চেম্বার শুরুর খরচ। আর নিয়মের কি কোনো স্থিরতা আছে? নিত্য দিন তো সে বদলে চলেছে। ইতিমধ্যে একগাদা টাকা খরচ করে যে সব সামগ্রী কিনলাম। পরের দিন আরেকটা নোটিশে দেখছি ওই দিয়ে কোনো লাভ নেই। তার উপরে আরো কিছু সংযোজন হয়েছে। নিয়মে বলছে চেম্বারের ভিতর দূষিত বাতাস পরিশোধনের যন্ত্র লাগবে। এক একটা যন্ত্রের দাম ৪০-৬০ হাজার টাকা। এই বাজারে এতগুলো টাকা খরচ করে আপনি ভাবছেন বেশ নিশ্চিন্তে এবার চেম্বার করবেন? আরে দাড়ান মশাই কোম্পানির কাগজে একবার চোখ বুলিয়ে দেখুন। সেখানে স্পষ্ট লিখেছে এই যন্ত্র বাতাস থেকে দূষিত কণা শোষণ করে নিলেও তাকে রহিত করতে পারেনা। আর এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই যে সেই যন্ত্র থেকে দূষিত কণা আবার বাতাসে ফিরে আসবে না। এ আমি পড়াশোনা করেই বলছি না জেনে নয়।

হে হে! তাহলে উপায়? উপায় আছে তো! ওই যন্ত্রের মধ্যে থেকে বেরোনো বাতাস যাতে সংক্রমন বয়ে না আনে তাই জন্যে এই যে; আরেকটি যন্ত্র! এর মাধ্যমে নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। চেম্বার তো নয় পুরো যন্তর মন্তর। দালাল যে, তার তো বিক্রী নিয়ে কথা। ডাক্তার বা রুগী বিপদে পরলো কি না পরলো থোড়াই কেয়াড়!

তো ডাক্তারবাবু কিনেই ফেলুন না? কাজ তো করতেই হবে।
নিশ্চই!! একদিন না একদিন তো ফিরতেই হবে। কিন্তু আমার এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে এত টাকা খরচের ভরপাই করবে কে? সেই তো আপনাকেই করতে হবে। হিসেব করে দেখলাম সব নিয়ম মেনে চললে, শুধু মাত্র রুগী দেখে ওষুধ দেওয়ার জন্যেই প্রায় ৩৭৪ টাকা খরচ। দেবেন তো এক ধাক্কায় ৪০০ টাকা ভিজিট? বলবেন না তো,  "পাড়ার মধ্যে ওইটুকু একটা চেম্বার তাতে ভিজিট ৪০০টাকা? "

এবার আসি তাহলে কাজের কথায়। আরে মশাই যা নিয়মের বহর তাতে একটা নড়বড়ে দাঁত তুলতেই কম বেশি ৬০০ টাকার জিনিস লাগবে। তাহলে ডাক্তারের পারিশ্রমিক? এত যন্ত্রপাতির দাম? ইলেকট্রিক বিল? ডাক্তারি বর্জ্য পদার্থ সঠিক ভাবে নিয়ে যাবে যে তাদের খরচ?? নতুন যে এত সব জিনিস এলো তাদের দাম?
হিসেব করতে করতে কোন সময় যে ১০০০ টাকায় পৌঁছে যাবেন বুঝতেই পারবেন না।

ডাক্তার টা একটা নির্লজ্জ। এই বাজারে সুযোগ বুঝে একটা নড়ে যাওয়া দাঁত তুলে হাজার টাকা নিয়ে নিল। 

হে হে! বদনাম হওয়ার এর থেকে ভালো কোন উপায় আছে? তার চাইতে আমি ভীতু ডাক্তার ভালো। দাম কমানোর জন্যে নিয়মের গাফিলতি করে নিজেকে ও আমার রুগীদের বিপদে ফেলতে চাইনা।

এতো ভেবে কোন লাভ আছে? যাদের আসার ঠিক আসবে। টাকা যারা ঠিক মতন দেওয়ার ঠিক টাকা দেবে। এত পরিবর্তন মুখ বুজে মেনে নিয়েছে যারা, এই পরিবর্তনটা নাহয় গালাগালি দিয়ে মেনে নেবে!

ঠিক কথা মশাই। রাতারাতি নোট বন্দীর খবর শুনে ব্যাঙ্কের বাইরে সব থেকে বেশি ভিড় ছিল বয়স্ক মানুষের। আসলে বসেই যখন আছি টেবিলের ওপাশে গিয়ে একবার ভেবে দেখলে ক্ষতি কি? তাই ভেবে দেখছিলাম।

এত কিছু লিখতাম না। কিন্তু আমার মতই যারা রোজ আফসোস করে অথচ মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেনা। তাদের জন্যেও এই লেখা। চটক, জৌলুস তো দশ শতাংশের হাতে। তাদের কাছে এত বাহুল্য চর্চিত জিনিস কেনা অসম্ভব কিছু না। কিন্তু দিনের শেষে ভাত ডাল আর বিরিয়ানির তফাৎটা সাধারণ মানুষ বোঝে। আমরা সেই পাড়ার ভিতর, ছোট চেম্বার, ভাত ডাল ডাক্তার। আমাদের না আছে website না আছে Google শীর্ষ খ্যাতি। আমাদের কাছে রুগী ফোন করে তার গাড়ি কোথায় park করবে জানতে চায় না। শুধু আমরা চেম্বারে আছি কিনা জানতে চায়। কম খরচের একটা নির্ভরযোগ্য জায়গা ছিলাম। এখন আমরাও নতি স্বীকার করছি এই বিরাট পরিবর্তনের। নতি স্বীকার করছি এই বিশ্বব্যাপী মারণ ভাইরাসের দৌরাত্বে। মাথা নোয়াচ্ছি ডাক্তার হয়েও এই রোগের সামনে।
এই সময় সাহসের সাথে চেম্বার করে বাহাদুরের খেতাব নেওয়ার থেকে নিজের অজ্ঞতা বা অসামর্থ্য ভাব কে মেনে নিয়ে অবসরে থাকা অনেক শ্রেয়। বিবেকের কাছে অন্তত পরিষ্কার থাকবো যে অজান্তে কোন রুগীর ক্ষতি আমি করিনি।

আমার facebook এর দৌরাত্ম্য খুব সীমিত। হয়ত এই দীর্ঘ লেখা কেউ পড়েও দেখবে না। কিন্তু সবার কাছে অনুরোধ একটু নিয়ম মেনে যদি এই রোগের সংক্রমন বন্ধ করা যায়। দয়া করে চেষ্টা করুন। কারেন্ট নেই বলে সবার অসুবিধা হচ্ছে এ কথা আমি অস্বীকার করছিনা। কিন্তু তাই বলে পাড়ার মোড়ে একত্রে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করে, লাইনের কাজ দেখার জন্যে ভিড় করে, আপনিও অজান্তে হয়ত রোগ বহন করে আনছেন বাড়িতে। সারা দেশে হঠাৎ এমন রোগাক্রান্ত সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে যদি কারো দোষ থেকে থাকে সেটা আমাদের। আমরাই নিয়ম ভেঙেছি। এখন আমরাই তার ফল ভোগ করছি। এখনো হয়ত সময় আছে ফিরে দাঁড়ানোর। চেষ্টা করে দেখুন যদি এই সংখ্যা নামিয়ে আনা যায়। নইলে যা বুঝছি, তাতে আরো দুমাসের বেকারত্ব অপেক্ষা করছে আমাদের সামনে।

(C) পাগলা দাশু

কোন মন্তব্য নেই: